মিরাজ, সাত নাকি আট?

আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ব্যাটিং অর্ডারটা একপ্রকার সাজিয়েই ফেলেছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে মধুর এক সমস্যাতেই আছেন অধিনায়ক এবং কোচ। সাত নাকি আট কোন পজিশনে নামবেন এই অলরাউন্ডার? মিরাজের জন্য পারফেক্ট পজিশন খুঁজে পাওয়াই এখন টিম ম্যানেজমেন্টের মূল দুশ্চিন্তা। 

জাতীয় দলে আবির্ভাবের পূর্বে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে অলরাউন্ডার হিসেবেই মাঠে নামতেন মিরাজ। ছোটদের বিশ্বকাপেও মিডল অর্ডারে ব্যাট করেই জিতেছিলেন টুর্নামেন্ট সেরার খেতাব। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের পর থেকেই বনে যান পুরোদস্তুর বোলার। আট নম্বর পজিশনেই খেলেছেন ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা জুড়ে। 

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যেন ব্যাট হাতে পুর্নজন্ম ঘটে এই অলরাউন্ডারের। ভারতের বিপক্ষে রীতিমতো অবিশ্বাস্য ফর্মে ছিলেন, আট নম্বরে নেমে খেলেন ম্যাচ জেতানো দুই ইনিংস। অন্যদিকে সাত নম্বর পজিশনে আফিফ হোসেন, ইয়াসির রাব্বি, নুরুল হাসান সোহানরা সুযোগ পেলেও নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই মিরাজকে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দিয়ে পাঠানো হয় সাত নম্বরে। 

মিরাজকে সাতে পাঠানোর পেছনে আরেকটা কারণ ছিল এই তারকা উপরে উঠলে আরেকজন অতিরিক্ত বোলার খেলানোর বিলাসিতা দেখাতে পারবে দলটি। ওয়ানডেতে আক্রমণাত্নক ক্রিকেট খেলতে বড় দলগুলো প্রায়ই ছয় বোলার নিয়েই মাঠে নামে। বাংলাদেশও চেয়েছিল সেই পথেই হাঁটতে। কিন্তু আদতে কি মিরাজকে সাতে পাঠানো সঠিক সিদ্ধান্ত? মিরাজ কি নতুন পজিশনে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছেন? 

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মিরাজ মাঝারি মানের পারফর্ম করলেও সমস্যা হয়েছে অন্য জায়গায়। বিশ্বের বাকি দলগুলোর টেল এন্ডাররা মোটামুটি মানের ব্যাট চালাতে পারেন। অন্তত দলের বিপদে একপ্রান্ত আগলে রাখার সামর্থ্য আছে।

যেমন ইংল্যান্ডের নাম্বার এইট স্যাম কারানের ওয়ানডে গড় ৩১, পাকিস্তানের ইমাদ ওয়াসিম তো রান তুলেছেন রীতিমতো ব্যাটারদের সাথে পাল্লা দিয়ে। রশিদ খান, ওয়েইন পার্নেল, মার্কো ইয়ানসেন কিংবা শার্দুল ঠাকুররাও নিজেদের দিনে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বদলে দিতে পারেন ম্যাচের দৃশ্যপট। 

কিন্তু বাংলাদেশের সে বিলাসিতা দেখাবার সুযোগ কই! আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশের টেল এন্ডারদের কংকাল। প্রতিটি ম্যাচেই আইরিশ বোলারদের সামনে রীতিমতো অসহায় লেগেছে বাংলাদেশি টেল এন্ডারদের। তাইজুল ইসলাম, এবাদত হোসেন কিংবা শরীফুল ইসলামদের কেউই ভরসা জোগাতে পারেননি। নিদেনপক্ষে ক্রিজে দুয়েক ওভার কাটিয়ে দেবার সামর্থ্য দেখাতে পারেননি তাঁরা। 

ফলে পারফরম্যান্সের সুবাদে মিরাজ সাত নম্বর পজিশনে সুযোগ ডিজার্ভ করলেও দলের প্রয়োজনে তাঁকে আট নম্বরে খেলানোই সুবিধাজনক। তাছাড়া সাতের চাইতে আটেই তাঁর ম্যাচ জেতানো ইনিংসের সংখ্যা বেশি। ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরি এবং দুইটি হাফসেঞ্চুরির দেখা তিনি পেয়েছেন এই পজিশনে ব্যাট করে। বিশ্বকাপের আগে দুরন্ত ফর্মে থাকা একজন ক্রিকেটারের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে নাড়াচাড়া করলে হিতে বিপরীত হবার আশংকাও অমূলক নয়। 

বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল অবশ্য জানিয়েছেন আসন্ন এশিয়া কাপেও সাত নম্বরেই ব্যাট করবেন মিরাজ। এখন দেখার বিষয় মিরাজকে সাতে পাঠিয়ে টেল এন্ডারদের ব্যাটিং সমস্যার সমাধান কিভাবে করে টিম ম্যানেজমেন্ট। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link