অনন্য সাকিব অদম্য যেখানে

ঠিক যেদিন থেকে তিনি পা রাখলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, সেদিন থেকেই যেন সবকিছু তার হতে থাকল। তিনি যেন ব্রত নিয়েই হাজির হয়েছিলেন, ‘দুনিয়া যাক গোল্লায়, আমি থাকব সবার উপরে’। ১৭ বছরের পদযাত্রায় এখনও তিনি অনন্য হয়েই আছেন।

সাকিব আল হাসান, চরিত্রটাই এমন। এই চরিত্রকে আড়াল করা যায় না। নিজের ক্রিকেটীয় নৈপুণ্যে দিয়ে তিনি সদা উজ্জ্বল। প্রখর রোদের দিনের মতই উজ্জ্বল। নিজের ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় জুড়েই অলরাউন্ডারদের তালিকায় ছিলেন সবার উপরে, এক নম্বরে। এখনও আছেন বৈকি।

সেই সাকিব আল হাসান ওয়ানডে সুপার লিগেও রয়েছে একটা নিরিখে পাহাড় চূড়ায়। আবারও সেই অলরাউন্ডার নৈপুণ্যে। ব্যাটে-বলে এখনও তিনিই বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড়। ওয়ানডে সুপার লিগ বাংলাদেশ শেষ করেছে তৃতীয় অবস্থানে থেকে। এই অর্জনে নিঃসন্দেহে দলগত প্রশংসাই প্রাপ্য টাইগারদের।

তবুও সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাকিবের জুড়ি মেলা ভার। ওয়ানডে সুপার লিগে বাংলাদেশ খেলেছে ২৪টি ম্যাচ। এর মধ্যে সাকিব খেলেছেন ২০টি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা শেষ সুপার লিগের ম্যাচটিতে ছিলেন না সাকিব। ইনজুরির কারণে সাইড বেঞ্চে বসে কাটিয়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।

তবে বাকি থাকা ২০ ম্যাচ তিনি প্রায় ৬০০ এর বেশি রান করেছেন। আর হাত ঘুরিয়ে উইকেট নিয়েছেন ত্রিশটির বেশি। সুপার লিগে ব্যাট হাতে ৬০০ রানের বেশি করেছেন ২৪ জন ব্যাটার। অন্যদিকে, ৩০ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন মোট ১১ জন বোলার।

তবে একই সাথে ৬০০ এর বেশি রান ও ৩০ এর বেশি উইকেট শিকার করতে পেরেছেন কেবল একজন। তিনি সাকিব আল হাসান। বিশ্বের বাঘা-বাঘা সব ক্রিকেটারদের আরও একবার পেছনে ফেলেছেন সাকিল আল হাসান। সেটা তিনি করে আসছেন পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই।

সাকিব এই সময়ে রান করেছেন ৬১৯। ৩৬.৪১ গড়ে তিনি পাঁচটি ফিফটির দেখা পেয়েছেন সুপার লিগে। বাংলাদেশের ব্যাটিং ইউনিটের সবচেয়ে বড় আস্থার নাম হয়ে ছিলেন সাকিব আল হাসান। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যাটার সাকিবের সক্ষমতা আরও একবার দেখেছিল গোটা বিশ্ব। সেই ধারা অব্যাহত ছিল পরবর্তী সময়েও।

অন্যদিকে, দলের যখন উইকেট প্রয়োজন হয়েছে, বেশিরভাগ সময়ই হাত বাড়িয়েছেন সাকিব আল হাসান। তুলে নিয়েছেন বল। শিকার করেছেন ৩১টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ৩৪.৩৫ স্ট্রাকরেটে তিনি উইকেট শিকার করেছেন। রান বিলিয়েছেন বেশ হিসেব করে। ইকোনমি রেট মাত্র ৪.১৮।

ওয়ানডে সুপার লিগে উইকেট শিকারের তালিকায় সবার উপরে অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জাম্পার। তিনি ১৮ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৪১টি। তাছাড়া সাকিবের উত্তরসূরি হওয়ার সব রসদ জড়ো করতে থাকা মেহেদী মিরাজও উইকেট শিকারে আছেন বেশ উপরের দিকেই। মিরাজের পকেটেও রয়েছে ৩০টি উইকেট। এছাড়াও মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদরাও রয়েছে বেশ উপরের।

এছাড়া রান সংগ্রহের তালিকায় শীর্ষে আছেন পাকিস্তানের বাবর আজম। ৭৬.৫২ গড়ে ১৪৫৪ রান করেছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক। স্বাভাবিকভাবেই রান সংগ্রহের দিকে টপ অর্ডারদের আধিপত্য থাকে। বাংলাদেশের হয়ে রান সংগ্রাহকদের তালিকায় সেরা ১৫-তে রয়েছেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস।

মোদ্দাকথা, একটা দল হিসেবেই ওয়ানডে সুপার লিগে খেলেছে বাংলাদেশ। তবে দলের নিউক্লিয়াস হিসেবে বরাবরের মত দলকে ভারসাম্য জুগিয়েছেন সাকিব আল হাসান। দলের আবহাওয়া দারুণভাবে প্রভাবিত করে সাকিবের অন্তর্ভূক্তি, সেটা নতুন করে বলবার কিছু নেই।

সাকিবের এই অলরাউন্ডার সত্ত্বা আরও বেশ ধারাবাহিক হোক। তেমনটাই তো প্রত্যাশা সকলের। কেবল তবেই তো সম্ভব স্বপ্নজয় করা। সাকিব নিশ্চয়ই সেই স্বপ্নরথের অন্যতম কাণ্ডারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link