দেবদূত পাদ্দিকাল, ফেরার লড়াইয়ে মগ্ন

আইপিএলের অভিষেক মৌসুমেই জানান দিয়েছিলেন নিজের প্রতিভার। কিন্তু গত মৌসুমে রাজস্থান রয়্যালসে নাম লেখানোর পরেই যেন পারফরম্যান্সে ভাটা পড়ে দেবদূত পাদ্দিকালের। খানিকটা দেরিতে হলেও এবারের মৌসুমের শেষ ম্যাচে যেন পুরনো ছন্দে ফিরলেন এই তারকা।

কর্ণাটকের বয়সভিত্তিক দল থেকে উঠে আসা পাদ্দিকাল প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসেন কর্ণাটক প্রিমিয়ার লিগের মাধ্যমে। বয়সভিত্তিক দলের গন্ডি পেরোনোর আগেই এই ফ্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের রীতিমতো রানবন্যা বইয়ে দেন। ঘরোয়া ক্রিকেটেও আগমণটা রাজসিকভাবেই, রঞ্জি ট্রফি কিংবা সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফিতে অভিষেক মৌসুমেই বনে যান দলের পক্ষে সর্বোচ রানসংগ্রাহক। 

পাদ্দিকালের সবচেয়ে বড় গুণ তিনি উইকেটের মূল্য বোঝেন। মারাকাটারি টি টোয়েন্টির যুগে স্ট্রাইকরেট বজায় রাখার পাশাপাশি বড় ইনিংস খেলতে জানেন। খুব কম সময়েই বাজে শট খেলে আউট হতে দেখা গেছে তাঁকে। শট খেলতে জানেন উইকেটের চারপাশেই। তবে পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে সাবলীল হলেও স্পিনারদের বিপক্ষে খানিকটা দুর্বলতা আছে এই তারকার।

ঘরোয়া ক্রিকেটের ফর্ম দেখেই কিনা ২০২০ মৌসুমে তাঁকে দলে ভেড়ায় রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। সবাই ভেবেছিলেন বিরাট কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো তারকায় ঠাসা ব্যাঙ্গালুরুতে সুযোগ পাবেন না তরুণ পাদ্দিকাল। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে আইপিএলে অভিষেকে প্রথম চার ম্যাচে হাঁকান ফিফটি। এরপর আর ফিরে তাকানো নয়। 

ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে প্রথম মৌসুমেই ১৩ ম্যাচে ৩১ গড়ে করেন ৪৭৩ রান। রানসংখ্যায় তাঁকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি ব্যাঙ্গালুরুর কোনো ব্যাটারই। ফর্মটা ধরে রাখেন পরের মৌসুমেও, এক ফিফটি এবং এক সেঞ্চুরিতে করেন ৪১১ রান। আইপিএলের পারফরম্যান্সের সুবাদেই কিনা জাতীয় দলে ডাক পেতেও সময় লাগেনি। কিন্তু দলে থিতু হবার আগেই মাত্র দুই টি টোয়েন্টিতে মাঠে নেমেই বাদ পড়েন জাতীয় দল থেকে। 

২০২২ আইপিএল নিলামে সাড়ে ছয় কোটি রুপির বড় অংকের বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় রাজস্থান রয়্যালস। জার্সি বদলালেও তাঁর পারফরম্যান্সে ভাটা পড়েনি, ব্যাট হাতে দারুণ পারফর্ম করে দলকে নিয়ে যান ফাইনালে। যদিও সেবারে রানার্স আপ  হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় রাজস্থানকে। 

সবাই ভেবেছিলেন এবারের মৌসুমে দারুণ পারফর্ম করে জাতীয় দলে ফেরার দাবি জোরালো করবেন এই তরুণ ওপেনার। কিন্তু যশস্বী জয়সওয়ালের দুরন্ত ফর্মের কারণে ওপেনিংয়ে জায়গা হারান পাদ্দিকাল। মিডল অর্ডারে মোটেও নিজের সামর্থ্যের প্রতিফলন দেখাতে পারছিলেন না। মাঝের ওভারগুলোতে রান পেতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে এই তারকাকে। 

তবে মৌসুমের শেষ ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে বুঝিয়ে দিলেন তাঁর আসল জায়গা টপ অর্ডারেই। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে জশ বাটলার ফিরলে ক্রিজে আসেন পাদ্দিকাল। এরপর কেবলই মুগ্ধতা, উইকেটের চারপাশে দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজের সামর্থ্য। 

স্যাম কুরান কিংবা কাগিদো রাবাদার মতো বোলারদের বড্ড অসহায় লেগেছে পাদ্দিকালের দুরন্ত ব্যাটিংয়ের সামনে। শেষপর্যন্ত পাঁচ চার এবং তিন ছক্কায় ৩০ বলে ৫১ রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন এই তারকা।

ভারত জাতীয় দলের টপ অর্ডারে এখন তারার মেলা। পাদ্দিকালের জন্য তাই দলে সুযোগ পাওয়াটা কঠিন। তবে পরিশ্রম আর ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে জাতীয় দলের দরজা খুলে যেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link