সদ্য শেষ হলো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ১৬ তম আসর। যেখানে গুজরাট টাইটান্সকে হারিয়ে আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা ঘরে তুলেছে চেন্নাই সুপার কিংস।
প্রায় দুই মাসের ক্রিকেটীয় এ মহাযজ্ঞে পারফর্ম করেছেন অনেকেই। পুরো আসরে তরুণ ক্রিকেটার যেমন তারুণ্য দীপ্তি ছড়িয়েছে, তেমনি ফিনিক্স পাখির মতো আবির্ভাব ঘটেছে অনেক পুরনো ক্রিকেটারেরও। সম্প্রতি ক্রিকেট ভিত্তিক গণমাধ্যম ইএসপিএনক্রিকইনফো এই মৌসুমের সেরা একাদশ নির্বাচন করেছে। যেখানে মূলত তাদের নিজস্ব তৈরি ‘সুপার স্ট্যাটস’-এর মাধ্যমে এ একাদশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইএসপিএনক্রিকইনফোর এই একাদশে সর্বোচ্চ ৪ জন রয়েছেন গুজরাট টাইটান্সের। আর মুম্বাই ইন্ডিয়ানস থেকে রয়েছেন ৩ জন। বাকি ৪ জন ৪ টি ভিন্ন দল থেকে একাদশে সুযোগ পেয়েছেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই একাদশ।
- ফাফ ডু প্লেসিস (ইম্প্যাক্ট স্কোর ৫৯.৩৮)
ইএসপিএনক্রিকইনফোর দৃষ্টিতে, এবারের আইপিএলে ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ হচ্ছেন ফাফ ডু প্লেসি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর এ ব্যাটার ১৪ ম্যাচে ৮ ফিফটিতে এবারের আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৩০ রান করেছেন। পুরো আসরে একবারই মাত্র ২০ রানের নিচে আউট হয়েছে এ ব্যাটার।
এ ছাড়া, বিরাট কোহলির সাথে জুটি বেঁধে করেছেন ৯৩৯ রান। যা আইপিএলের ইতিহাসে যে কোনো উইকেটে জুটির দিক দিয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। যদিও পুরো আসরে ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিক থাকলেও প্রোটিয়া এ ব্যাটার শেষ পর্যন্ত নিজ দলের প্লে-অফ নিশ্চিত করতে পারেননি।
- শুভমান গিল (ইম্প্যাক্ট স্কোর ৫৬.৮৫)
৩ সেঞ্চুরি আর ৪ ফিফটিতে এবারের আইপিএলে রীতিমত প্রতিপক্ষের বোলারদের কাছে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন শুভমান গিল।
পুরো আসরে সর্বোচ্চ ৮৯০ রান করে আইপিএলের এ আসরের সেরা খেলোয়াড় তিনিই নির্বাচিত হন। তাই ফাফ ডু প্লেসিসের সাথে ওপেনিংয়ে নিশ্চিতভাবেই আসর সেরা দলের একাদশে থাকছেন গিল।
- ক্যামেরুন গ্রিন (ইম্প্যাক্ট স্কোর ৪২.৯৬)
১০ ম্যাচে ৫৯.৫৭ গড়ে ৪১৯ রান। সাথে বল হাতে ৬ উইকেট। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসকে প্লে-অফে পৌঁছে দিতে দারুন অবদান রেখেছেন অজি অলরাউন্ডার ক্যামেরুন গ্রিন।
বিশেষত, তিন নম্বরে নেমে শেষ দিকে বেশ কয়েকটা বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছেন তিনি। এরমধ্যে মুম্বাইয়ের শেষ চার নিশ্চিত করার যাত্রায় ডু অর ডাই ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৪৭ বলে ১০০ রানের ম্যাচ উইনিং ইনিংস।
- সুরিয়াকুমার যাদব (ইম্প্যাক্ট স্কোর ৪২.৪৯)
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাজে ফর্মের ধারাবাহিকতায় এবারের আইপিএলের শুরুটা খুব একটা ভাল হয়নি সুরিয়ার। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে সুরিয়াকুমার যাদবও স্বরূপে ফিরতে শুরু করেন। শেষ ১১ ম্যাচে প্রায় ৬০ গড়ে ব্যাটিং করেছেন।
এর মধ্যে আবার ৬ টিতেই অর্ধশতক হাঁকান এ ব্যাটার। এর পাশাপাশি, এ মৌসুমে শতকের দেখাও পান সুরিয়াকুমার যাদব। ১৬ ম্যাচে ১৮১ স্ট্রাইক রেটে ৬০৫ রান করা এ ব্যাটারকে তাই বেছে নিতে বেগ পোহাতে হয়নি ক্রিকইনফোকে।
- তিলক ভার্মা (ইম্প্যাক্ট স্কোর ৩৮.৮৩)
এবারের আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মিডল অর্ডারে রীতিমত নিউক্লিয়াস হয়ে উঠেছিলেন তিলক ভার্মা। আসরের শুরুটা করেছিলেন ৪৬ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলে।
এরপর শেষটাও করেন ১৪ বলে ৪৩ রানের ব্যাটিং তাণ্ডব দেখিয়ে। পুরো মৌসুমে ১১ ইনিংস ১৬৪.১১ স্ট্রাইকরেটে ৩৪৩ রান আসে তিলক ভার্মার ব্যাট থেকে।
- হেনরিখ ক্লাসেন (ইম্প্যাক্ট স্কোর ৪৮.০১)
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের জন্য এবারের আসরটা এক প্রকার ভুলে যাওয়ার মতোই ছিল। তবে এ দলের প্রোটিয়া ব্যাটার হেনরিখ ক্লাসেন গোটা আসর জুড়েই ছিলেন দারুণ ছন্দে।
১১ ম্যাচে ১৭৭ স্ট্রাইক রেটে ৪৪৮ রান করা এ ব্যাটার পেয়েছেন একটি শতকের দেখাও। যদিও দলগত ব্যর্থতায় ঢাকা পড়ে গেছে তাঁর এই দুরন্ত পারফরম্যান্স।
- রিঙ্কু সিং (ইম্প্যাক্ট স্কোর ৩০.৫৮)
এবারের আসরে কলকাতার জয় মানেই যেন ছিল রিঙ্কু সিংয়ের ছোঁয়া। ইয়াশ দয়ালের শেষ পাঁচ বলে টানা পাঁচ ছক্কা হাঁকিয়ে কলকাতাকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেওয়া রিঙ্কু পুরো আসরেই ছিলেন দারুণ ধারাবাহিক। মিডল অর্ডারে ব্যাট করেও ১৪ ম্যাচের ৭ ইনিংসেই তিনি চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন।
স্ট্রাইক রেটও ছিল দুর্দান্ত, ১৪৯.৫২! পুরো আসরে ৪৭৪ রান করা এ ব্যাটারকে তাই সেরা একাদশে সন্দেহাতীত ভাবেই রেখেছে ক্রিকইনফো।
- রবীন্দ্র জাদেজা (ইম্প্যাক্ট স্কোর ৪৪.৯২)
ফাইনাল ম্যাচ জয়ের নায়ক তিনি। শেষ দুই বলে ১০ রান তুলে নিয়ে চেন্নাইকে শিরোপা জেতানো জাদেজা গোটা আসরেই এভাবে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন।
এবারের আসরে ১৬ ম্যাচে ১৯০ রান করার পাশাপাশি বল হাতে ২০ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার।
- রশিদ খান (ইম্প্যাক্ট স্কোর ৪৫.৪১)
ফাইনালে ছিলেন নিজের ছায়ার মতো হয়ে। ৩ ওভারে হজম করেছিলেন ৪৪ রান। তবে শুধু ফাইনালটা বাদে, পুরো আসরটাই যে মাতিয়ে রেখেছিলেন আফগান এ অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে ১৩০ রানের পাশাপাশি বল হাতে ২৭ উইকেট নেন তিনি।
গুজরাটে রশিদ খানের মূল ভূমিকা বোলার হিসেবে হলেও শেষ দিকে ব্যাটে বেশ কয়েকটি ম্যাচে ব্যাটিং তাণ্ডব দেখিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ৩২ বলে ৭৯ রানেরও একটি ইনিংস আছে তাঁর।
- মোহাম্মদ শামি (ইম্প্যাক্ট স্কোর ৪৯.৭৩)
আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার। যদিও ফাইনালে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। তবে গুজরাটকে নতুন বলে সিংহভাগ ম্যাচেই ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন তিনি।
গোটা আইপিএলেই পাওয়ার প্লেতে তিনি ছিলেন প্রতিপক্ষের ত্রাস। একই বড় ব্যাটারদের ছিলেন যম। ২৮ উইকেটের মধ্যে যার ১৬ টা শিকারই টপ থ্রি ব্যাটাররা।
- মোহিত শর্মা (ইম্প্যাক্ট স্কোর ২৮.৪৩)
গত দুই আসরে ছিলেন ব্রাত্য। তবে এবারের আসর দিয়ে নতুন এক মোহিত শর্মাকে চিনেছে আইপিএলে। মোহাম্মদ শামির পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭ টা উইকেট নিয়েছেন তিনি।
যদিও জাদেজার সামনে ফাইনালে শেষ দুই বলে ১০ রান হজম করে শেষটা তিক্ততায় শেষ হয়েছে। তবে পুরো আসরেই বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে নজর কেড়েছেন এ বোলার। এই আইপিএল দিয়েই তিনি ক্রিকেট ক্যারিয়ারে নতুন একটা জীবন পেয়েছেন।
- দ্বাদশ ব্যক্তি: মোহাম্মদ সিরাজ (ইম্প্যাক্ট স্কোর ৪৯.৭৩)
ইএসপিএনক্রিকইনফোর সেরা একাদশের ‘দ্বাদশ’ ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে থাকছেন মোহাম্মদ সিরাজ। যদিও তাঁর দল ব্যাঙ্গালুরুর বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল শেষ চারের আগেই।
তবে ১৪ ম্যাচে ১৯ উইকেট নেওয়া মোহাম্মদ সিরাজ ঠিকই নিজের বোলিং সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছেন গোটা আসরেই। বিশেষত, রান প্রসবা এই আইপিএলে বেশ মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন তিনি। পাওয়া প্লে-তে সিংহভাগ ম্যাচেই প্রতিপক্ষে টপঅর্ডারদের কাছে ভীতির কারণ হয়ে ছিলেন।
ইএসপিএনক্রিকইনফো এই একাদশ ছাড়াও সম্মানসূচক স্বীকৃতি দিয়েছে বেশ ক’জন পারফর্মারকে। এর মধ্যে রয়েছেন পুরো আসরে দারুণ ব্যাটিং করা যশস্বী জয়সওয়াল। এ ছাড়া ডেভন কনওয়ে, মাথিশা পাথিরানা, পিয়ূষ চাওলা, অক্ষর প্যাটেলদের নাম রয়েছে স্ট্যান্ডবাই তালিকায়।