টেস্ট শুরুর আগে শঙ্কা ছিল তাসকিন আহমেদকে নিয়ে। ইনজুরি থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যেই ছিলেন তিনি। তাকে একমাত্র টেস্ট খেলার ঝুঁকি টিম ম্যানেজমেন্ট করবে কি-না, সে প্রশ্ন ছিল শুরু থেকেই। তবে ম্যাচের আগের দিন কোচ চাণ্ডিকা হাতুরুসিংহে জানিয়েছিলেন দলের প্রয়োজনে খেলানো হতে পারে তাসকিনকে।
শঙ্কার মেঘ ঠেলে ১৪ জুনের সকালটায় একাদশে হাজির তাসকিন আহমেদ। শুরুতেই তার গতির ঝড়টা দেখা হয়নি। টসে হেরে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে। অপেক্ষা ফুরোয় পরদিন। টেস্টের দ্বিতীয় দিনের সকালে মিরপুরের আকাশ ছেয়ে ছিল ঘন কালো মেঘে। সেই মেঘের রাজ্যে সবুজ উইকেটে ফায়দাটা তাসকিন তুলবেন। সেই প্রত্যাশাই ছিল সকলের।
তবে ইনজুরি কাটিয়ে, লম্বা সময় পর মাঠে ফেরা তাসকিন যেন নিজের ঠিকঠাক ছন্দটা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। লাইন আর লেন্থে ঠিক রেখে বল করে যাচ্ছিলেন ঠিক। তবে ভয়ংকর কিছু করা হয়ে ওঠেনি তার। স্বরুপের তাসকিনের অভাবটা চোখ এড়ায়নি। তখন আবার প্রশ্ন জাগে, আদোতে তাসকিনকে দরকার ছিল কি?
তবে সব প্রশ্ন আর সংশয়ের অবসান ঘটান তাসকিন নিজের হাতে। দ্বিতীয় ইনিংসে আফগানদের সামনে ছিল দূর মহাকাশ সমান কোন এক লক্ষ্যমাত্রা। চাপটা নিশ্চয়ই আন্দাজ করার মত। সেই চাপকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন তাসকিন।
তার বলেই আঘাত পেয়েছেন আফগানিস্তানের দুই ক্রিকেটার। মাঠ ছেড়েছেন দু’জনেই। আর ফেরা হয়নি তাদের বাইশ গজে। মাথায় আঘাত পাওয়া অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহীদিকে যেতে হয়েছে নানান রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে। আর জহির খান তো আঘাত পাওয়া হাত নিয়ে আর খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি। হয়েছেন রিটায়ার্ড আউট।
তবে এই দুই ঘটনার মাঝে অবশ্য তাসকিন স্ট্যাম্পেও আঘাত করেছেন। তার করা বল ছুঁয়ে দেখেছে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের হাতে থাকা ব্যাট। করিম জানাতের উইকেট উপড়ে ফেলার আগে, দু’ফা বল প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ব্যাটের আলতো ছোয়ায় লিটনের দস্তানা বন্দি হয়েছে। তাতে প্যাভিলনের পথে হেটেছেন আবদুল মালিক ও রহমত শাহ।
তাতেও যেন তাসকিনের সন্তুষ্টি মেলেনি। তিনি প্রবল বেগেই ছুটে চলছিলেন নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফারের দিকে। সে যাত্রায় ইয়ামিন আহমেদজাইকে আটকে ফেলেন কাভার অঞ্চলে থাকা মুশফিকুর রহিমের হাতে। সেটাই ছিল আফগানদের নবম উইকেট। শেষের উইকেটটাও ছিল তাসকিনের প্রাপ্য।
অভাবা তাসকিন, এদফাও ফাইফার থেকে বঞ্চিত। তাতে তার ভাগ্যের দোষ যতটা না, তার থেকে বেশি দোষ তার নিজের। ভাগ্যের নির্মমতায়, নো বলে আউট হয়েছিলেন জহির খান। কোমড়ের উপরে ছিল সে বল। তাইতো তাসকিনের নামের পাশে যুক্ত হয়নি উইকেট।
আক্ষেপটাই যেন আরও বাড়ল তাসকিনের। খুব কাছে গিয়েও পাঁচ উইকেট না পাওয়ার আফসোসটা নিদারুণ বেদনার। তবে সেই বেদনার ক্ষতে প্রলেপ লেপে দিয়েছে ঐতিহাসিক জয়। তাসকিনের শিকার করা চার উইকেট ৫৪৬ রানের বড় জয়কে প্রভাবিত করেছে দ্রুত।
প্রথম ইনিংসের খানিকটা অন্যমনষ্ক থাকা তাসকিন, নিজেকে সামলে নিয়েছেন দ্বিতীয় ইনিংসে। আরও আগ্রাসী ভঙ্গিমায় তিনি হাজির হয়েছেন বল হাতে। তাসকিনের নামের পাশে এমন আগ্রাসনই তো সবচেয়ে বেশি মানায়। ইনজুরিগুলো না আবার বাঁধা হয় দাঁড়ায়।