আফগানিস্তান কি আসলেই ‘বি’ দল নিয়ে খেলেছিল?

মিরপুরে অজিবধ হয়েছে। হয়েছে ইংলিশ বধও। তবে এবারের আফগান বধের মুহূর্ত কি তবে আগের সব স্মৃতিকে ছাপিয়ে গেল ? হয়তো নয়। কারণটা, টেস্ট ক্রিকেট রাজ্যে অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ড রীতিমত একেকটা দৈত্যরূপী শক্তিধর দল। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বশেষ স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তান ঠিক তেমনটা নয়।

তবে আফগানদের বিপক্ষে লাল বলের ক্রিকেটে প্রথম দেখায় কিন্তু বাংলাদেশই হেরেছিল। এখন সেই হারের মধুর প্রতিশোধের মঞ্চ হিসেবে মিরপুরের এই টেস্টকে আলাদা করে রাখাই যায়। তবে আফগানদের বিপক্ষে এ জয় অনন্যতা পেয়েছে অন্য সব কারণে। তাদের বিপক্ষে শুধু জয়ের কারণে এ টেস্ট ‘বিশেষ’ নয়।

৫৪৬ রানের জয়! টেস্টের ইতিহাসে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জয়। পাঁচ দিনের টেস্ট ক্রিকেট বিবেচনায় যা আবার সর্বোচ্চ! তৃপ্ততার সবটুকু বোধহয় এখানেও নেই। তৃপ্ততাটা হচ্ছে, ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং দিয়ে এ টেস্টে বাংলাদেশ রীতিমত একক আধিপত্য বিস্তার করেছে।

মিরপুরের উইকেটে যে পেসাররা এতদিন ব্রাত্যতার জালে আটকে থাকতো, তারাই এবার ২০ উইকেটের মধ্যে ১৪ টা উইকেট নিয়েছে। ব্যাটাররাই বা কম কিসে! ৩ টা সেঞ্চুরি এসেছে, ৩  টা ফিফটি এসেছে। আর কয়েকটা চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস তো আছেই। সব মিলিয়ে মিরপুরের এ টেস্ট বাংলাদেশের জন্য তৃপ্ততার এক স্মৃতি হয়ে থাকবে এই সব সুখকর পরিসংখ্যানের কারণেই।

তারপরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ট্রল, টিপ্পনির বিচরণ তো আছেই। বাংলাদেশ নাকি আফগানিস্তান বি দলকে হারিয়েছে! খুব সম্ভবত, লাল বলের ক্রিকেটে এমন রাজকীয় প্রতাপের অনভ্যস্তাতেই এমন সব যুক্তিহীন কথার অবাধ বিচরণ। কিন্তু একটু যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ দাঁড় করালেই, সব কিছু স্বচ্ছ হয়ে যায়। আফগানিস্তান কি সত্যিই কোনো  বি দল পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ ? চলুন একটু ব্যাখ্যা করা যাক।

টেস্ট ক্রিকেটে আফগানিস্তানকে নবীন সদস্য বললেও চলে। যদিও লাল বলের ক্রিকেটে তাঁরা ঠিকই এরই মধ্যে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭ টেস্টের ৩ টিতে জয়সহ দুটিতে তাঁরা সিরিজ জিতেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এবারের আফগানিস্তান দলটাই কি তাদের আসল টেস্ট দল? কিংবা ঐ ৩ টি জয়ের নেপথ্যে যারা ছিল, তাঁরা কি কেউ বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের একাদশে ছিল?

একটু ব্যাখ্যা করা যাক। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ যে আফগান দলটার সাথে টেস্ট হেরেছিল, সেই দলের ৬ জনই এবারের টেস্টে একাদশে ছিলেন। বাকি ৫ জনের অনুপস্থিতির জন্যই কি তবে এবার আফগানদের ভরাডুবি?

না। এমন প্রশ্ন তোলারও সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশের বিপক্ষে ঐ টেস্ট দিয়েই অবসর নিয়েছিলেন মোহাম্মদ নবী। আর বছর দুয়েক আগে, এ ফরম্যাটকে বিদায় জানিয়ে দেন আসগর আফগানও। বাকি রইল ৩ জন। এর মধ্যে রশিদ খান আগেই ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন।

আর কাইস আহমেদ বাংলাদেশের বিপক্ষে ঐ টেস্টের পর আর সুযোগই পাননি। একইভাবে ইহসানাউল্লাহ জানাত শেষ ৪ বছর ধরে রয়েছেন দলের বাইরে।

এমন যুক্তির বিপরীতে অনেকেই আবার একটা কাঁচা প্রশ্ন করে উঠতে পারেন। আফগানদের এই দলে মুজিব উর রহমান, ফজল হক ফারুকী, রহমানুল্লাহ গুরবাজরা কোথায়? মূল ব্যাপারটা হচ্ছে, এরা কেউই এই মূহূর্তে লাল বলের জন্য আফগান টিম ম্যানেজমেন্টের বিবেচনায় নেই। ফরম্যাট ভেদে একটা দলের যে ভিন্ন স্কোয়াড হতে পারে, এটি নিয়ে বোধহয় বিস্তর আলোচনা করারও দরকার নেই।

তবে হ্যাঁ। আরেকটি প্রশ্ন, এই ব্যাখ্যাকে আরেকটু দীর্ঘায়িত করতে পারে। রশিদ খান থাকলেও কি একই হাল হতো আফগানদের? প্রথমত, মিরপুরের এই পিচ মোটেই স্পিন সহায়ক ছিল না। তাই উইকেটের সহায়তা না নিয়ে রশিদ খান একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেবেন, এমন কথা দৃঢ় কণ্ঠে বলাটাও এক ধরনের পাগলামি। যেখানে স্বয়ং আফগান কোচ জোনাথন ট্রট বলেছেন, রশিদ খান থাকলেও এ ম্যাচের চিত্র খুব বেশি বদলাত না।

টেস্ট ক্রিকেট চতুর্থ দিনে এসে ৫৪৬ রানের জয়। বলা যেতে পারে, এ টেস্টে আফগানদের ন্যূনতম সুযোগটাও দেয়নি বাংলাদেশ। এমন আগ্রাসী জয়কে আর যাই হোক কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যায় না। বরং এমন রেকর্ড গড়া জয় নিয়ে আরো গল্প হতে পারে, জয়ের নেপথ্য নায়কদের নিয়ে কাব্য হতে পারে। দিনশেষে তাই প্রতিপক্ষের অনভিজ্ঞতা নিয়ে যারা গল্পের ফাঁদ পাতছেন, তাদের সেই সব বিশ্লেষণকে কুযুক্তি বলাটাই শ্রেয়।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link