তামিমকে ঘিরে শঙ্কা, একাদশে নাঈম?

ব্যাটের সাথে ব্যাটের খানিকটা টোকা। দু’জনের দু’গাল ভর্তি হাসি। হাসি মাখা মুখ ছিল এদিন সহকারী কোচ নিক পোথাসেরও। সম্ভবত ঈদের ছুটিই হাসির কারণ।

সে যাক গে, ঈদের ছুটি শেষ হলেই তো আবার মাঠের লড়াই। সেই প্রস্তুতির রসদ তো জুগিয়ে নিতেই হয়। মোহাম্মদ নাঈম যেন ঠিক সেটাই করছেন। অন্যদিকে সৌম্য সরকারের লড়াইটা যে কিঞ্চিৎ ভিন্ন। নাঈম যখন নিজের অবিসম্ভাবী সুযোগ কাজে লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ঠিক তখন সৌম্যের প্রস্তুতি একটি মাত্র সুযোগের। নাঈম নিজেকে প্রমাণ করেই তবে এসেছেন আবারও জাতীয় দলে। সম্ভাবনা প্রবল আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার মাঠে নামার। পেছনে অবশ্য আরেকটা কারণ রয়েছে।

বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান ঈদের আগে শেষ অনুশীলনে রীতিমত ঘুরে বেড়িয়েছেন। দিনের শুরুতে গা গরম, স্ট্রেচিং করলেও ব্যাটিং অনুশীলন করেননি। যেন অভিজ্ঞ সেনানীর অনুশীলনের নেই প্রয়োজন। তবে পেছনের ঘটনা যে ইনজুরি সেটা আর বুঝতে বাকি থাকে না।

ঈদের আগে তিন দিনের অনুশীলনের প্রথম দু’দিন অবশ্য পুরোদস্তুর অনুশীলন চালিয়ে গেছেন ড্যাশিং এই ওপেনার। তবে দ্বিতীয় দিন নেট অনুশীলনে সতীর্থের খেলা শট থেকে বাঁচতেই আচমকা বসে যেতে হয়েছিল তামিমকে। ব্যাস! তাতেই যেন কোমড়ের ইনজুরি ফিরেছে পুরনো রুপে।

এই কোমড়ের ইনজুরির কারণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি খেলতে পারেননি তামিম। ক্রমশ সেরে ওঠার পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে ভাগ্য এবার তার পক্ষে নেই। তবে অধিনায়ক হিসেবে বাড়তি চিন্তা তো কাজ করেই তার মাঝে।

সেই চিন্তা থেকেই শেষদিনের অনুশীলনে বেশ লম্বা সময় ধরে আলাপ করেছেন কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে ও অধিনায়ক। যেন আলোচনা বিষয়, ‘যদি তামিম খেলতে না পারে, তাহলে কি হবে’।

ঈদের ছুটিতে তামিম নিশ্চয়ই বিশ্রাম করতে চাইবেন। নিজের উপর থাকা সব চাপ খানিকক্ষণের জন্যে আড়াল করবেন। এরপর আগামী ২ জুলাই চট্টগ্রামে হয়ত অনুশীলনের ফিরবেন তিনি। তবুও যদি অস্বস্তি বোধ করেন তামিম, তবে নিশ্চিতভাবেই আগফানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও থাকবেন অনুপস্থিত।

তেমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের একাদশে দেখা যেতে পারে নাঈমকে। দলে থাকা স্বীকৃত ওপেনার তো তিনিই। জোরেসোরে অনুশীলন চালিয়েও যাচ্ছেন। এমনকি তার অনুশীলনের তদারকিতে হাতুরুসিংহে যেমন ব্যস্ত তেমনি সহকারী কোচ নিক পোথাসও সমান মনোযোগী।

নিজে সাইড থ্রোয়ার ব্যবহার করে প্রস্তুত করে নিচ্ছেন নাঈমকে। দূর্বলতার জায়গাগুলোকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ যেমন করে দিচ্ছেন, তেমনি শক্তির জায়গাগুলোকে পোক্ত করতেও সহয়তা করছেন শিষ্যকে।

গেল ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে নাঈম ছিলেন দুরন্ত ফর্মে। আবাহনীর হয়ে রান ফোয়ারা ছুটিয়েছেন। হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রায় ৭২ গড়ে ৯৩২ রান করা ব্যাটারের উপর ভরসা করতেই পারে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট।

নাঈমের মূল সমস্যার জায়গা ছিল তার স্ট্রাইকরেট। গেল ডিপিএলে সেখানটায়ও বেশ উন্নতি করেছেন নাঈম। প্রায় ৯২ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন তিনি। সুতরাং একাদশে সুযোগ পাওয়ার দৌড়ে তিনিই থাকবেন এগিয়ে, যদি তামিম ইনজুরির কারণে ছিটকে যান।

আর তেমনটা হলে, দলে দেখা দেবে ঘাটতির। সেক্ষেত্রে হয়ত সৌম্য সরকার পেতে পারেন প্রাধান্য। যদিও নিকট অতীতে মুগ্ধ করবার মত কোন পারফরম্যান্স তিনি উপহার দিতে পারেননি। তবুও হেডকোচের আস্থাভাজন সৌম্য। সহকারী কোচও খানিকটা ভরসা করতে পারছেন। তাইতো পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন তিনি সৌম্যের। দিয়েছেন পরামর্শ।

বাংলাদেশ দলে এখন মূল সমস্যার জায়গা দুইটি। প্রথমটা তামিমের ইনজুরি শঙ্কা। আর দ্বিতীয় টা সাত নম্বর পজিশন। তাই হয়ত আফগানদের বিপক্ষে দল ঘোষণার পর, অনুশীলন করা খেলোয়াড়দের নিয়ে প্রায় আধ ঘন্টা আলাপ করেন নির্বাচক প্যানেলে থাকা মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, হাবিবুল বাশার সুমন ও আবদুর রাজ্জাক, প্রধান কোচ হাতুরুসিংহের সাথে। এরপর হাসিমুখেই একাডেমি ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় সবাইকে।

অন্তত তাদের হাসি ইঙ্গিত দেয়, দল নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট সবাই। এখন দেখবার পালা শেষ অবধি আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের একাদশে এবং দলে ওপেনার হিসেবে কে জায়গা পান তামিমের অবর্তমানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link