নতুন দিনের গান শুনিয়ে পুরনো স্মৃতির ভীতি

শুরুর দশ ওভার নাকি ব্যাট করা কঠিন চট্টগ্রামের উইকেটে। সেই অযুহাতেই লিটন দাস টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করবার সিদ্ধান্ত নিলেন। অবশ্য পিচ রিপোর্টে আতহার আলী খান বলেই দিয়েছিলেন উইকেট হতে চলেছে ব্যাটিং সহায়ক। সেক্ষেত্রে আগে বোলিং করা দলটাকে দ্রুতই উইকেট তুলে নিতে হতো।

সেই কাজটাই করতে পারলেন না বাংলাদেশের ব্যাটাররা। বরং আফগানিস্তান দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান মঞ্চায়ন করলেন আগ্রাসী ব্যাটিং। শুরুর যেই দশ ওভারের ভয় ছিল লিটনদের, সেই দশ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে ৬৭ রান তুলে ফেলে আফগানিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটার।

ব্যাস, এরপর থেকে রীতিমত বাংলাদেশের বোলারদের বিরক্ত করেছেন। ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিয়েছেন গুরবাজ ও জাদরান। দুই জনে মিলে নিজেদের পাশাপাশি দলের রানও এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। একটা পর্যায়ে তো তারা দুইজনে গড়ে ফেলেন রেকর্ড পার্টনারশীপ।

আফগানিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে, যেকোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন গুরবাজ ও জাদরান। ২৫৬ রানের এই জুটি আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রতিপক্ষ দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সবার উপরে অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকার, তারা করেছিল ২৮২।

হন্যে হয়ে বাংলাদেশের প্রতিটা বোলার উইকেটের সন্ধান করে গেলেও দেখা মেলেনি। অবশেষে, ৩৭ তম ওভারে প্রথম উইকেটের পতন ঘটে আফগানদের। সাকিব আল হাসানের বলে লেগ বিফোর আউট হয়ে ফেরেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তবে ততক্ষণে বাংলাদেশের ঠুনকো মনোবল, আরও খানিকটা দূর্বল হয়ে পড়ে।

গেল দু’দিন বাংলাদেশ দলকে সামলাতে হয়েছে ভীষণ মানসিক পীড়া। বর্তমান অধিনায়ক লিটন দাস, অবশ্য নিজেদের অস্থিতিশীল মানসিকতার ছাপ বুঝতে দেননি গণমাধ্যমে। সেই প্রভাব সত্যিকার অর্থেই পড়েছিল বাংলাদেশের বোলারদের উপর। তাইতো বেশ অগোছালো বোলিং করেছে তারা পুরো ইনিংস জুড়েই।

অতিরিক্ত রানের রীতিমত বন্যা বইয়ে দিয়েছেন, এবাদত, মুস্তাফিজরা। যদিও বেশ পরিষ্কার বোলিংয়ের সুনাম রয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের। তবে সেসবের অনুপস্থিতির দেখা মিলেছে জহুর আহমেদে, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। মোট অতিরিক্ত ৩৩ রান দিয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা।

সংবাদ সম্মেলন, লিটন দাস অবশ্য বলেছিলেন যে নতুন দিন, নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে তারা প্রস্তুত। তবে নতুন দিনেও আগের দিনের স্মৃতি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেননি লিটন। সেই মাশুলও দিতে হয়েছে গোটা দলকে। অথচ টসে জিতে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়ত নিতে পারত বাংলাদেশ। সেদিক থেকে ব্যাটাররা একটু ভাল অবস্থানে নিয়ে যেতে পারলে, পুরো দল হতে পারত উজ্জীবিত।

আর পরিষ্কার আকাশে, ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের সর্বোচ্চ সুযোগটুকুই লুফে নিয়েছেন আফগানিস্তান। গুরবাজ ও ইব্রাহিমের সেঞ্চুরিতে স্কোরবোর্ডে আফগানদের সংগ্রহ ৩৩১ রান। ওপেনিং জুটি ভাঙার পর, ম্যাচের লাগাম টেনে নিতে শুরু করে বাংলাদেশ। পরবর্তী  ৭৫ রানের মধ্যে আফগানদের ৯ উইকেট তুলে নেয় মিরাজ, সাকিবরা।

২০১৫ নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২২ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার তাদের জয়ের জন্যে ভাঙতে হবে নিজেদেরই রেকর্ড। শেষের পনেরো ওভারে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। তাতেই লক্ষ্যমাত্রা চলে যায়নি ধরাছোঁয়ার বাইরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link