এই তো সেদিন চারিদিকে হাপিত্যেস। উইকেটের দেখা মেলে না। দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা বাংলাদেশের পেস আক্রমণ তখনও খুঁজে পাচ্ছে না কোন উত্তর। আফগানিস্তান কেবল গড়ে চলেছে রানের পাহাড়া। দুই উদ্বোধনী ব্যাটার রহমানুল্লাহ গুরবাজ আর ইব্রাহিম জাদরান রীতিমত অপ্রতিরোধ্য।
রানের লাগাম টানতে হলে এই জুটিতে ভাঙন চাই। কিন্তু করবে কে সে কাজটা? সবাই তো ব্যর্থতার মিছিলে এক এক করে সামিল হচ্ছে। ঠিক এমন সময়ে হাজির সাকিব আল হাসান। বোলার সাকিবও যে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। ১৪৫ রান করে অসাধারণ খেলতে থাকা গুরবাজকে তিনি ফিরিয়েছিলেন সেদিন।
সাদা বলের ক্রিকেটে তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ব্যাটে-বলে সমানতালেই পারফরম করে যেতে পারেন। তবে তিনি এবার জায়গা করে নিয়েছেন সেরা দশ ওয়ানডে বোলারের তালিকায়। আইসিসির সর্বশেষ প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে ৩ ধাপ এগিয়ে সাকিবের অবস্থান এখন দশম স্থানে।
৬১৮ পয়েন্ট রয়েছে তার নামের পাশে। মূলত আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে বল হাতে, কার্য্যকর কিছু উইকেট শিকারই তার র্যাংকিংয়ের উন্নতিকে প্রভাবিত করেছে। পুরো সিরিজে বাংলাদেশের পেস বোলারদের একটা আধিপত্য ছিল। সেসবের মাঝে স্পিনার হিসেবে সাকিবই ছিলেন একমাত্র সফল। যদি উইকেট শিকার বিচার করা হয়।
মোট চারটি উইকেট পেয়েছেন তিনি, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। এর মধ্যে প্রথম ওয়ানডেতে বৃষ্টি বাঁধায় পূর্ণ দশ ওভার বলই করা হয়নি সাকিবের। তাছাড়া খেলার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি বল হাতে ভেলকি দেখিয়েছেন। যেমনটা তিনি করে আসছেন বিগত ১৭টি বছর ধরেই। সাকিবকে ম্যাচের বাইরে রাখা বা তাকে দমন করে রাখাই যেন দুষ্কর।
ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে না পারলেও তিনি ঠিকই বল হতে খুঁজে নেন নিজের পথ। সদ্য শেষ হওয়া সিরিজে ব্যাট হাতে বড় রান তিনি করতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেছেন তৃতীয় ওয়ানডেতে। সেই ম্যাচেও বিরল এক রেকর্ড গড়েছেন সাকিব আল হাসান। তবে সেটা বল হাতে।
সাকিব নিজের বোলিং কোটার পুরো দশ ওভারই হাত ঘুরিয়েছেন। তাতে রান খরচ করেছেন মাত্র ১৩টি। ওয়ানডে ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় যা অকল্পনীয়। অবশ্য সাকিব এমন কৃপণতা এর আগেও দেখিয়েছিলেন দু’বার। এই নিয়ে তৃতীয়বার তিনি ১৫ রানের কম দিয়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেটে। দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি শন পোলক কেবল রয়েছেন সাকিবের পাশে।
এমন কার্য্যকর বোলিং অবদানের কারণেই সাকিবের উন্নতি হয়েছে বোলিং র্যাংকিংয়ে। তাছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসের বা-হাতি স্পিনারদের মধ্যে সাকিব এখন যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ৩০৫ উইকেট নিয়ে তিনি অবস্থান করেছেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সাথে। তাদের উপরে কেবল সনাৎ জয়সুরিয়া অবস্থান করেছেন। তালিকায় থাকা বাকি দুইজন ক্রিকেট থেকে বহুদূরে অবস্থান করছেন।
সাকিবের সামনে তাই সুযোগও থাকছে, সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বনে যাওয়ার। এই সুযোগটি নিশ্চয়ই সাকিব কাজে লাগাতে চাইবেন। আর তেমনটা হলে, বোলার সাকিবের র্যাংকিংয়ে আরও উন্নতি, কেবলই সময়ের বিষয়।