তিনি স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব একটা পরিচিত না হলেও ঘরোয়া অঙ্গনে ঠিকই প্রতিপক্ষের সমীহ আদায় করে নিয়েছেন তিনি। লিস্ট এ ক্যারিয়ারে ৩৮.৩০ গড়ে ৩৮৬৯ রান সেটার পক্ষেই প্রমাণ দেয় – বলছি সাইফ হাসানের কথা, চলতি ইমার্জিং এশিয়া কাপে যার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এ দল।
ব্যাটসম্যান হিসেবে খেললেও ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে সাইফ হাসান বোলিং দিয়েই বাজিমাত করেছেন। হাই ভোল্টেজ সেমিফাইনালে নিজের দশ ওভারের কোটা পূরণ করেছেন তিনি; তুলে নিয়েছেন ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া নিকিন জোসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট আর রান দিয়েছেন মাত্র ২৯। ওভারপ্রতি ৩ এরও কম রান খরচ করা এই স্পেলেই মূলত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে টিম বাংলাদেশ।
তানজিম হাসান সাকিবের করা প্রথম ওভারেই ফিরে গিয়েছিলেন ইন ফর্ম ব্যাটসম্যান সাই সুদর্শন। আরেক ওপেনার অভিষেক শর্মাও পুরোপুরি স্বস্তিতে ছিলেন না। ফলে এসময় কিছুটা রয়ে সয়ে খেলতে থাকে ভারতীয় ব্যাটাররা, আর সেটারই পুরো ফায়দা তুলেছেন ক্যাপ্টেন সাইফ হাসান। নিয়মিত বোলার না হওয়া সত্ত্বেও এগারো তম ওভারেই বল তুলে নেন হাতে, এরপর যা করেছেন সেটা মনে রাখার মতই।
বোলিংয়ের পাশাপাশি নেতৃত্বের মুন্সিয়ানাও দেখিয়েছেন সাইফ হাসান, অপর প্রান্ত থেকে রাকিবুল হাসানকে নিয়ে এসেছিলেন আক্রমণে। দুই পাশ থেকে দুই স্পিনার একসাথে চেপে ধরেছিলেন টিম ইন্ডিয়ার শক্তিশালী টপ অর্ডারকে; ১৩তম ওভার থেকে শুরু করে ২৯তম ওভার পর্যন্ত একটানা এই দুজন জুটি বেঁধে বোলিং করেছিলেন, এসময় কেবল ৫৯ রান এসেছে, আর ডট বলের চাপে বড় শট খেলতে গিয়ে বিদায় নিয়েছেন তিনজন ব্যাটসম্যান।
মূলত ব্যাটসম্যান হলেও সাইফ হাসান বোলিং টাও পারেন। তাঁর বোলিং মাঝে মাঝে ঘরোয়া লিগে দেখা গেলেও বোলার সাইফকে নতুন করে চেনা গেল ভারত এ দলের বিপক্ষে। নিয়ন্ত্রিত লাইন লেন্থ, ফ্লাইট, গতির ভ্যারিয়েশনে তিনি ছিলেন দারুণ। টপ অর্ডার ব্যাটাররাও যে নিয়মিত বোলারদের মত হাত ঘোরাতে পারেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভুলতে বসা সেই সংস্কৃতিও মনে করিয়ে দিলেন এই ডানহাতি।
জাতীয় দলের হয়ে সাইফ হাসান এখন পর্যন্ত খেলেছেন ছয়টি টেস্ট আর দুইটি টি-টোয়েন্টি। টি-টোয়েন্টিতে মাত্র এক বল করলেও টেস্টে সব মিলিয়ে করেছেন ছয় ওভার, একটা উইকেটও পেয়েছেন এরই মধ্যে। ব্যাট হাতে রান পেলে হয়তো সুযোগ পেতেন আরো বেশি ম্যাচে, বাড়তে পারতো উইকেট সংখ্যাও; কেননা বল হাতে সাইফ হাসান বেশ কার্যকরী বটে, অন্তত রোহিত শর্মার উত্তরসূরিদের বিপক্ষে তাঁর পারফরম্যান্স সে কথাই বলে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করা সাইফ হাসান, লাল-সবুজ জার্সিতে কেন যেন সুবিধে করতে পারেননি। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আরো পরিণত হয়েই দলে ফিরবেন তিনি, সেক্ষেত্রে ব্যাটারের পাশাপাশি দুর্দান্ত একজন পার্ট টাইম বোলার পাবে টিম বাংলাদেশ।