২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটা মনে আছে? উত্তরটা না হওয়ার সম্ভাবনা কমই, হলেও অবশ্য সমস্যা নেই। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ এ দলের ম্যাচ দেখলে ঠিকই স্মৃতির পাতায় উঁকি দিবে তিন বছর আগের সেই চিত্রনাট্য। আগুন ঝরানো বোলিং, ব্যাটিংয়ের শুরুটা আগ্রাসী, এরপরই অসহায় আত্মসমর্পণ লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।
এত এত মিল থাকলেও অমিল আছে ম্যাচের ফলাফলে; সেবার শেষ হাসি বাংলাদেশ দল হাসলেও এবার ঠিকই জয় তুলে নিয়েছে ভারতীয় দল। ইমার্জিং এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ এ দলকে ৫১ রানের পরাজয় উপহার দিয়েছে সাই সুদর্শনের দল। আবারো ভারতের কাছে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে সতেরো কোটি বাংলাদেশীর।
শ্রীলঙ্কার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক সাইফ হাসান। অধিনায়কের এমন সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করার কাজটা দারুণভাবে করেছেন বোলাররা। ইনিংসের ৮ম ওভারেই ভারতের ইনিংসে প্রথম আঘাত হানেন তানজিম হাসান সাকিব। সাই সুদর্শনকে উইকেটের পিছনে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান এ পেসার।
প্রথম উইকেট পতনের অবশ্য খোলসে ঢুকে যান অভিষেক শর্মা আর নিকিন জোসে। মাঝে যদিও স্ট্যাম্পিং নিয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়ার।
তবে নিকিন জোসে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৯ রানে তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বেঁচে গেলেও ২৯ বলে ১৭ রান করে সাইফের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। নিকিন জোসের ঐ আউটের পরই মূলত ভারতের উপর চেপে বসে টাইগাররা।
মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে ফিরে যান অভিষেক শর্মার উইকেট। ব্যক্তিগত ৩৪ রানে আউট হন এই ওপেনার। অভিষেক শর্মার পর বলার মতো কিছু করতে পারেননি মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে আসা নিশান্ত সিধু আর রিয়ান পরাগও। দলীয় ১০০ রান পূরণেই আগেই অর্ধেক লাইনআপ ফিরে যায় সাঁজঘরে।
ফলে ভারত ২০০ এর গণ্ডি পেরোতে পারবে কিনা, তা নিয়েই তৈরি হয়েছিল শঙ্কা। কিন্তু ইনিংসের শেষদিকে খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশের বোলাররা। ভারতের ইনিংসকে লড়াই করার মতো সংগ্রহে নেওয়ার পথে একাই লড়ে যান ইয়াশ ধুল, তাঁকে সঙ্গ দেন টেলএন্ডাররা। শেষপর্যন্ত অধিনায়কের ৬৬ রানে ভর করে ২১১ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
জবাবে মারকুটে শুরু করেন দুই ওপেনার নাইম শেখ এবং তানজিদ হাসান তামিম। কিন্তু দুইজনের ৭০ রানের জুটি ভেঙে যেতেই কি যেন হয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটারদের; সবাই যেন প্রতিযোগিতায় লেগে পড়ে দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফেরার। একে একে নাইম শেখ, তানজিদ তামিম, জাকির হাসানরা আউট হন একেবারে নিরীহ বলেই।
মিডল অর্ডারেও প্রতিরোধ গড়তে পারেননি সাইফ, সৌম্যরা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানো নায়ক আকবর আলী এদিন পারেননি নায়ক হতে; ইনফর্ম শেখ মেহেদি হাসানও ব্যর্থ হয়েছেন। বলা যায় ভারতীয়দের জুজুতেই আটকে গিয়েছে বাংলাদেশ এ দল। শেষপর্যন্ত ১৬০ রানেই থেমে যায় টিম টাইগার্সের ইনিংস; তখনও জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫২ রান, যদিও ১৫ ওভারের বেশি তখনও বাকি ছিল।
দায়িত্বজ্ঞানহীন এক ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখিয়েছেন জয়, সাইফরা। তাই তো বাগে পেয়েও হারানো যায়নি টিম ইন্ডিয়াকে। ভারতের হয়ে নিশাত সিন্ধু নিয়েছেন পাঁচ উইকেট, আর মানাভ সুতার শিকার করেছেন আরো তিনখানা উইকেট।
যাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ, তাঁরাই হতাশ করেছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে। জাতীয় দল কিংবা যুব পর্যায়ে সর্বত্রই ভারত নামক এক বাঁধায় আটকে যাচ্ছে বড় কিছু করার স্বপ্ন, দ্রুত সেই সমস্যা সমাধান না হলে বাংলাদেশকে বিশাল কিছু প্রত্যাশা করাই হয়তো ভুল হবে।