বাংলাদেশের জার্সিতে প্রথম ওয়ানডে শতক। নারী ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর। রেকর্ডের ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছেন ফারজানা হক। ভারতের মত শক্তিশালী দলের বিপক্ষেই রেকর্ড গড়া এক ইনিংসই খেললেন ফারজানা। সিরিজ জয়ের হাতছানিতে দলকে দিয়েছেন বেশ দারুণ এক সংগ্রহের ভিত।
সিরিজে ১-১ এ সমতা। টসে জিতে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে। আগের দিন মুখ থুবড়ে পড়ছিল বাংলাদেশ নারী দলের ব্যাটিং অর্ডার। এদিন যেন তাই ফারজানা ব্রত নিয়ে নেমেছিলেন এক প্রান্ত আগলে তিনি রাখবেনই। সে কাজটাই করে গেছেন পিংকি।
প্রথম উইকেট জুটিতে শামীমাকে সঙ্গী করে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দলের ইনিংস। খানিকটা রয়েসয়েই খেলেছেন ফারজানা। মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে এদিন উইকেট থেকে তেমন কোন সাহায্যই যেন পাচ্ছিলেন না ভারতীয় বোলাররা। তবুও দেখেশুনে নিজের ইনিংসটা গড়ে তোলেন ফারজানা। প্রথম উইকেট জুটি থেকে আসে ৯৩ রান।
ওপেনিং করতে নামা শামীমা ফিরে যান ব্যক্তিগত ৫২ রানে। তখনও অর্ধ-শতক থেকে দূরেই ছিলেন ফারজানা। তবে এদিনটা নিজের করে নিতে যেন বড্ড মড়িয়াই ছিলেন ফারজানা হক পিংকি। তিনি নিজের কাজটা করে গেছেন মনোযোগ দিয়ে। বেশ লম্বা সময় ধরেই ব্যাটিং করেন ফারজানা। ৯৭ বলে নিজের অর্ধ-শতক অবধি পৌঁছান তিনি।
এরপর অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির সাথেও জুটি গড়েন তিনি। জ্যোতি খানিকটা হাতখুলে খেলার চেষ্টা করেন। ভারতের বোলারদের আরও খানিকটা চাপে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখনও নিজের খোলস থেকে বেড়িয়ে আসা হয়নি ফারজানা। এক প্রান্ত আগলে রাখার সিদ্ধান্তে তিনি অটল। তিনি তাই করে গেছেন একেবারে শেষ অবধি।
জ্যোতি প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেও টলেনি ফারজানার মনোবল। রিতু মনিও বেশি সময় সঙ্গ দিতে পারেননি ফারজানাকে। তবুও অটল ফারজানা। হাঁটি হাঁটি পা পা করে তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন তিন অংকের সেই ম্যাজিক্যাল ফিগারের দিকে। অবশেষে এক্সট্রা কাভার অঞ্চল দিয়ে চার হাঁকান তিনি। ১৫৬ তম বলে পৌঁছে যান বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই ম্যাজিক ফিগারে।
বাংলাদেশের নারী দলের কোন খেলোয়াড়, আগে যা করতে পারেননি, ঠিক সে কাজটিই করে দেখান ফারজানা হক। ভারতের সাথে শক্তিমত্তার বিচারে বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশ। সেই ভারতের বোলারদের কাছে যেন ছিল ফারজানার কোন উত্তর। ফারজানা নিজের শতক ছুঁয়ে দেখার পর রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেন। হাত খুলে শট খেলার চেষ্টাও করেন বাংলাদেশের এই ওপেনার।
ইনিংসের শুরু থেকে একেবারে শেষ অবধি টিকে থেকেছেন তিনি। নিজের ব্যক্তিগত অর্জনের পাশাপাশি দলকেও এনে দেন স্বস্তিদায়ক এক সংগ্রহ। তার করা এই সেঞ্চুরিই সম্ভবত বাংলাদেশের মেয়েদের আরও বেশি উজ্জীবিত করবে প্রথমবারের মত ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে।
তেমনটি হয়ে গেলে ফারজানার এই শতক ইতিহাসের পাতায় বেশ অর্থবহ এক জায়গা করে নেবে। যদিও ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের ইতিহাসের নতুন পাতায় সবার উপরেই নিজের নামটি লিখিয়ে ফেলেন ফারজানা। ইনিংসের শেষ বলে রান আউটে কাটা পড়েন ফারজানা।
তার করা ১৬০ বলে ১০৫ রানের সুবাদে ২২৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁড়ে দিতে পেরেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এখন বাকি কাজটা করতে হবে মারুফাদের।