২০০১, সময়টা ভাজ্জিরও ছিল

২০০১ সাল। ভারত অস্ট্রেলিয়াকে যেদিন চেন্নাইয়ে হারায়, সেইদিন উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরিজি পরীক্ষা ছিল। আমি ব্লাইন্ড বয়ের রাইটার হয়ে এইচ এস দিচ্ছিলাম। ক্লাস ইলেভেন আমি তখন।

ব্লাইন্ড দের ৩ ঘণ্টার জায়গায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা টাইম দেয়, শুনে শুনে লিখতে হয় রাইটারকে তাই। সেদিন ব্যাপারটা দাঁড়ালো পরীক্ষা দেওয়া আর পাশাপাশি বাথরুম যেতে গিয়ে স্কোর জেনে আসা। যখন শুনলাম লক্ষ্মণ, সচিন দুজনেই ফিরে গেছেন, তখনও সম্ভবত আরো ঘন্টাখানেক বাকি পরীক্ষা শেষ হতে!

টেনশন আর রাখতে পারছি না। ছেলেটি বলছে, আমি লিখছি, আর মন পড়ে আছে ম্যাচে। হেরে গেলে সিরিজ গেলো! এত দুরন্ত কামব্যাক করে ইডেন জেতা অনেকটাই ফিকে হয়ে যেত সিরিজ হারলে।

ইডেন জিতে যে ভারত শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর রসদ পেয়েছিল, আত্মবিশ্বাস পেয়েছিল সেসব গল্প কথা হয়ে যেত, বরং অস্ট্রেলিয়া ওরকম অলৌকিক হারের পরেও ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ জিতেছে এমন একটা ইমেজ অস্ট্রেলিয়াকে অনেক আত্মবিশ্বাস যোগাত পরের কয়েক বছর।

যাই হোক, ফাইনালি পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়েই শুনলাম দিঘে আর হরভজন খেলছেন, কয়েক রান বাকি! কারুর একটা রেডিও তে কমেন্ট্রি শুনেছিলাম স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে। অবিশ্বাস্য উত্তেজনা। ব্লাইন্ড বয়রা টিভি দেখতে পারেনা বলে ওদের সাথে রেডিও, টেপ রেকর্ডার থাকতো।

পড়াশুনো ওরা ক্যাসেট শুনে শুনে করতো। কেননা সব বই ব্রেইল এ পাওয়া যেত না আর ব্রেইল পড়া, ক্যাসেট শোনার থেকে অনেক বেশি সময় সাপেক্ষ।

অবশেষে এলো সেই কাঙ্খিত মুহূর্ত, দীঘে কে ক্রিজে এসেই হরভজন বলে দেন – ‘হাড়বাড় নেহি কারনে কা, রান আউট নেহি হোনে কা!’ তারপরে ম্যাকগ্রা-কে থার্ডম্যানে ঠেলে ভারতকে জয়ের রান এনে দিলেন!

ভিভিএস লক্ষ্মণের ২৮১ রানের অলৌকিক ইনিংস এবং গোটা সিরিজে ৮৩ গড়ে ৫০৩ রান করার পরেও অন্য কেউ ম্যান অফ দা সিরিজ হতে পারবেন এটা আপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য হলেও সেই কাজ সম্ভব করে দেখিয়েছিলেন টার্বুনেটর হরভজন সিংহ! সিরিজে ৩২ উইকেট মাত্র ১৭ গড়ে দখল করে!

ক্যারিয়ারের বহু স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী থাকলেও এই সিরিজটি কোনোভাবেই ভোলা যাবেনা! সিরিজ টা যতটা লক্ষণের, ততটাই ভাজ্জিরও!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link