২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। ইংল্যান্ডের এক তরুণ পেসারের ওভারে ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়ে পুরো বিশ্বকে চমকে দেন যুবরাজ সিং।
বিশ্বকাপের মত মঞ্চে এত বড় অঘটনের শিকার হলে যে কেউ ভেঙে পড়ত মানসিকভাবে, শেষ হয়ে যেতে পারতো ক্রিকেট ক্যারিয়ার। তবে সেদিনের সেই তরুণ বোলার তো সাধারণ কেউ নন, তিনি স্টুয়ার্ট ব্রড।
তাই তো ছয় বলে ছয় ছক্কা হজম করা স্টুয়ার্ট ব্রড ছয়শ টেস্ট উইকেটের মালিক হয়েছেন মাত্র দ্বিতীয় পেসার হিসেবে। তাঁর এই ছয়টি ছয় থেকে ছয়শ উইকেট নিশ্চিতভাবেই ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে আইকনিক প্রত্যাবর্তনগুলোর একটি।
শুধু ক্রিকেটীয় দক্ষতা নয়, এই অর্জনের দিকে এগিয়ে যেতে ব্রডের প্রয়োজন ছিল ইস্পাত-দৃঢ় মানসিকতা। সেটা ছিল বলেই ২০০৭ সালে জার্সিতে মুখ লুকানো ব্রডের নামে পাশে এখন জ্বলজ্বল করছে ৮৪৫টি আন্তর্জাতিক উইকেট।
তবে, এই সংখ্যা আর খুব একটা বাড়বে না। নিজের বর্নাঢ্য এক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ফুল স্টপ বসিয়ে দিতে যাচ্ছেন স্টুয়ার্ট ব্রড। চলমান অ্যাশেজের পঞ্চম দিন শেষবারের মত মাঠে দেখা যাবে এই পেসারকে। টেস্ট ফরম্যাটের সবচেয়ে ঐতিহাসিক দ্বৈরথ দিয়েই নিজের ইতি টানবেন তিনি।
রঙিন পোশাকে স্টুয়ার্ট ব্রডকে এখন আর দেখা যায় না। সর্বশেষ ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি, এছাড়া ২০১৪ সালে ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন নেদারল্যান্ডসের সাথে।
১২১টি পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ খেলে ১৭৮ উইকেট, ইকোনমি মাত্র ৫.২৭। আর সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ৫৬ ম্যাচে ৬৫ উইকেট, ওভারপ্রতি খরচ ৭.৬৩ রান। পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, সাদা বলেও নিজের সময়ে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা পারফর্মার ছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড।
কিন্তু ,সাদা বলের চেয়ে সাদা পোশাকের দিকেই তাঁর ভালবাসা ছিল বেশি, তাই তো শুভ্রতার সাধনা করতে অন্য দুই ফরম্যাট থেকে নিজেকে ছুটি দিয়েছিলেন এই ডানহাতি। আর সেখানে তিনি অবিসংবাদিত সেরাদের একজন।
টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে উজাড় করে দেয়া স্টুয়ার্ট ব্রডকে কিংবদন্তির মর্যাদা দিতে ভুল হয়নি ক্রিকেট বিধাতার। সতীর্থ জিমি অ্যান্ডারসনের পরেই ছয়শ টেস্ট উইকেটের ক্লাবে প্রবেশ করেছেন তিনি; সবমিলিয়ে ক্যারিয়ারে ২৭.৬৭ গড়ে ৬০২ উইকেট শিকার করেছেন ব্রড।
ব্যাট হাতেও করেছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি রান। টেস্ট ক্রিকেটে নয় এবং দশ নম্বর পজিশনে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডও আছে স্টুয়ার্ট ব্রডের ঝুলিতে। হয়তো ব্যাটিং নিয়ে আরেকটু মনোযোগী হলে পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার বনে যেতে পারতেন তিনি।
সবাই যখন মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে জিমি অ্যান্ডারসনের অবসরের ঘোষণা শোনার, তখনই বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়ে বিদায় বলে দিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। বিদায় বার্তায় তিনি বলেছিলেন আরো কিছু সময় হয়তো খেলা যেত, কিন্তু এটাই সঠিক সময় সরে দাড়ানোর।
কোন বিতর্ক নয়, কোন আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ নেই; নিজের লিগ্যাসি আর ভক্তদের ভালবাসা ধরে রাখতে ঠিক সময়ে ছাড়তে হয় ক্রিকেটের বাইশ গজ, যা করে দেখিয়েছেন স্টুয়ার্ট ব্রড। ঠিক মুহুর্তে এসে বুটজোড়া তুলে রাখার আর্ট আবারো মনে করিয়ে দিলেন ইংলিশ তারকা।
ডেভিড ওয়ার্নারের জন্য এটাই শেষ অ্যাশেজ সিরিজ; তাঁকে ১৭ বার প্যাভিলিয়নে ফেরানো স্টুয়ার্ট ব্রডের জন্যও একই – কাকতালীয় এই মিল আরো সুন্দর করেছে ব্রডের গল্পের শেষটাকে। যেই গল্প পুরোটা অনুপ্রেরণা দিবে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে।