অধিনায়ক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় বিসিবির ‘ফাঁকি’

যাক, অবশেষে মিলেছে সমাধান। সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের নতুন অধিনায়ক। তবে সমাধান কি আদোতে হল? এমন একটা প্রশ্ন কিন্তু চাইলেই করা যায়। একথা সত্য, অন্তত বিশ্বকাপ অবধি বাংলাদেশ জাতীয় দল নির্ভার। বিশেষ করে সাদা বলের দলটা।

তবে লাল বল নিয়ে তৈরি হতে পারে নতুন সংকট। সাকিব আল হাসান এই বয়সে এসে তিন ফরম্যাটেই সমানতালে জাতীয় দলে খেলবেন। তেমনটা ভাবা ভুল। তাছাড়া ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সাকিবের চাহিদা তাকে তিন ফরম্যাটে খেলতে বাধাই বরং দেবে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ লাল বলে নতুন কোন অধিনায়কের পেছনে ছুটবে। সেটার অবশ্য সহজ সমাধান রয়েছে একেবারে হাতে নাগালে।

লিটন দাস সাকিবের ডেপুটি হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ইতোমধ্যেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তো তার নেতৃত্বেই রেকর্ড গড়া জয় পায় বাংলাদেশ। তা হয়ত ঠিক আছে। কিন্তু অধিনায়ক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বরাবরই নড়বড়ে। সহজ বিকল্পকেই বেছে নেয় বিসিবি। সেটা স্বাভাবিক।

তবে একটা দেশের ক্রিকেট বোর্ডের অন্তত নেতৃত্বের একটা পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। অবশ্য বিসিবি একেবারেই পরিকল্পনাহীনভাবে হাটেনি সবসময়। মাঝে মধ্যে সুমতিও হয়েছে বাংলাদেশের। পরিকল্পনার ছক এঁকে অধিনায়ক হিসেবে গড়ে তুলেই তবে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় দলের দায়িত্ব।

নিকট অতীতের উদাহরণ মুমিনুল হক সৌরভ। তাকে টেস্ট দলের দায়িত্ব দেওয়ার আগে বেশ কয়েকটি প্রোগ্রামের অধিনায়ক করা হয়েছিল। এমনকি বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন মুমিনুল। সোজা ভাষায় একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তবে মুমিনুল পেয়েছিলেন অধিনায়কের দায়িত্ব।

তেমন প্রক্রিয়া যে একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে বিসিবি, তা কিন্তু নয়। এই তো কিছুদিন আগে অবধি নাজমুল হোসেন শান্তকে তেমন একটা সেটআপের মধ্যে দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছিল। ২০২০ সালে মহামারী পরবর্তী সময়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে বাংলাদেশ একটি টুর্নামেন্ট খেলে। তামিম ও রিয়াদদের নেতৃত্বে একটি করে দল ছিল। আর তৃতীয় দলের নেতা ছিলেন শান্ত।

সেই সময় তামিম ও রিয়াদ দু’জনই ছিলেন অধিনায়কের দায়িত্বে। শান্তকে ভবিষ্যত অধিনায়ক ভেবেই তো তেমনটা করার কথা। সেদিক থেকে লিটন দাস ছিলেন না কোন প্রক্রিয়ার মধ্যে। বহু আগে হাই পারফরমেন্স দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তবে তার অধিনায়কত্বে ছিল না ধারাবাহিকতা।

আবার মেহেদী হাসান মিরাজের কথাই ধরা যাক। অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরপর দ্রুতই চলে এসেছেন জাতীয় দলে। মাঝের সময়টুকুতে তার নেতৃত্ব গুণ ঝালাই দেওয়ার মত পর্যাপ্ত সময় পাননি তিনি।

অথচ এবার যখন অধিনায়ক নিয়ে সংকট দেখা দিলো। তখন কোথাও একটিবারের জন্যে শোনা যায়নি নাজমুল হোসেন শান্তর নাম। বরং বারংবার লিটনের নাম এসেছে। হুট করেই মেহেদী মিরাজের নামটা শোনা গেল। দীর্ঘ মেয়াদে অধিনায়কের ঝঞ্ঝাট এড়াতে মিরাজ বেশ ভাল বিকল্প বটে।

কিন্তু আসল প্রশ্নটা হচ্ছে প্রক্রিয়া নিয়ে। সাকিব পরবর্তী সময়ে আবারও সংকটের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তখনকার জন্যে কোন পরিকল্পনা আদৌ বিসিবির রয়েছে কিনা সেটা একটা ভাবনার বিষয়। সবারই একদিন তার নিজ জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা সেসবের বাইরে নয়। অন্তত এবারের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়।

বাংলাদেশ আগামী দিনের অধিনায়ক খোঁজার জন্যে একটা পরিকল্পনা আর প্রক্রিয়া অনুসরণ চাইলেই করতে পারে। করা উচিতও। অধিনায়কের ভাবনায় থাকা মিরাজ, লিটনদের নেতৃত্ব পরীক্ষা করানো যেতে পারে। তাছাড়া আরও দূরের চিন্তায়, তরুণদেরকেও পরিচর্যা করা যেতে পারে।

হুট করেই এমন নেতৃত্ব সংকট বারেবারে আঘাত হানলে বাংলাদেশ ক্রিকেট অন্তত পেছন দিকেই হাটা শুরু করবে। তেমনটা নিশ্চয়ই চায় না বিসিবি। একটা দলের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা তো থাকা চাই। সাকিবরা ছিলেন বলেই হুট করে আসা সংকটের সমাধান সহজেই মিলছে। তারা না থাকলে বিষয়গুলো হতে পারে আরও জটিল। এদফা জটিলতার কমতি তো ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link