আস্থা হয়েই টিকে থাকার মিশন তামিমের

সেই আস্থা থেকেই তৃতীয় দফা ব্যাটিং করেছেন তামিম। লেগ স্পিনারদের বেশ সাবলীলভাবেই সামলেছেন।

শর্টার গুড লেন্থের বল। কব্জির মোচড়ে তা স্কোয়ার লেগের সীমানা পার। ছক্কা! আত্মবিশ্বাসী শুরুই বলতে হয়। এই শটই যেন তানজিদ তামিমের পক্ষে গুণগান।

তামিমের পরিবর্তে তামিম। এতক্ষণে সবাই হয়ত জেনে গিয়েছেন। তানজিদ হাসান তামিম প্রথমবারের মত জাতীয় দলের ডেরায়। তরুণ তুর্কি এশিয়া কাপের মত বড় আসরের ঠিক আগ মুহূর্তে দলে তিনি। চাপের মুহূর্ত নিশ্চয়ই।

এশিয়া কাপের দল ঘোষণা হওয়ার পর বাংলাদেশ আজ করেছে ম্যাচ প্র‍্যাকটিস। উদ্বোধনে নাঈম শেখের সাথে হাজির তামিম। শুরুতে একটু নড়বড়ে ছিলেন বাঁ-হাতি এই ব্যাটার। কিন্তু সময় যত গড়ালো, নিজের ভেতরে থাকা প্রতিভার প্রতিফলন ঘটাতে শুরু করেন তিনি।

দারুণ সেই ছক্কার মারের পর খেলেন ক্ল্যাসিক্যাল কাভার ড্রাইভ। বিদ্যুৎ গতিতে সে বল সীমানার অপর প্রান্তে। তামিমের এই শটগুলো অবশ্য নতুন নয়। সেই ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেই ঝলক দেখিয়েছেন। ধারা অব্যাহত ছিল ঘরোয়া ক্রিকেটেও।

সর্বশেষ ইমার্জিং এশিয়া কাপেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। চার ম্যাচের তিনটিতেই তিনি ফিফটি করেছেন। ছিলেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। শ্রীলঙ্কার মাটিতেই তিনি তিন হাফ সেঞ্চুরির পসরা সাজিয়েছিলেন। আর ঠিক সে কারণেই দলে জায়গাটা পেলেন তামিম।

এবারের এশিয়া কাপের যৌথ আয়োজক দেশ শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটাও হবে শ্রীলঙ্কাতে। সে ম্যাচে তিনি সুযোগ পাবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। তবে সম্ভাবনার একটা দ্বার অন্তত তিনি উন্মুক্ত করলেন।

লিস্ট এ ক্যারিয়ারে ৪৬টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তানজিদ হাসান তামিমের। প্রায় ৮২ স্ট্রাইকরেট ১২৭১ রান আছে তার নামের পাশে। ৩টি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তানজিদ তামিম। গড়টা যদিও ৩০ এর কম। তবে মোমেন্টাম ধরে রাখার গুণাবলি তার রয়েছে।

কিন্তু এদিন অবশ্য তা পারেননি। শুরুটা দারুণ করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বেশ ইতস্তত ছিলেন বাইশ গজে। তাসকিন ক্রমাগত তার প্যাডে আঘাত করেছেন বল দিয়ে। শেষ অবধি সেই তাসকিনের বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে আউট হয়ে যান তামিম।

অনুশীলন ম্যাচের আয়োজনই মূলত ম্যাচ পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়দের দূর্বলতাগুলো বের করা। হেডকোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে বাইরে থেকে তীক্ষ্ণ নজরে রেখেছিলেন সবকিছু। তামিম আউট হওয়া মাত্রই তাকে নিয়ে বিশদ এক আলোচনা জুড়ে দেন হাতুরু। বেজায় নাখোশ যেন তিনি। সেটা স্বাভাবিকও বটে।

তরুণ একজনের উপর আস্থা রেখে তাকে দলে নেওয়া। তিনি ব্যর্থ হলেই দায়ভার নীতিনির্ধারকদের ঘাড়ে গিয়ে পড়বে। তাইতো তরুণ তামিমকে বেশ লম্বা সময় ধরে টোটকা দিলেন। ভুলগুলো ধরিয়ে দিলেন। সমাধান বলে দিলেন। নাজমুল হোসেন শান্ত তাসকিনের বলে বোল্ড হলে আবারও ব্যাটিংয়ে নামেন তামিম। সতীর্থরা বেশ উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করলেন তাকে।

দ্বিতীয় দফা ব্যাটিংয়ে নেমেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। এতেই অবশ্য তাকে বাজে পছন্দের ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া যায় না। সবে তো শুরু। মনের ভেতর তো তার উত্তাল সমুদ্র বয়ে চলার কথা। ধমনিতে রক্তের প্রবাহ তো রীতিমত বর্ষা দিনের সহস্রধারা ঝর্ণা। স্থির হতে সময় লাগবে।

নির্বাচক থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু পূর্ণ আস্থাই রাখছেন তামিমের উপর। এশিয়া কাপের দল ঘোষণার সময় বেশ জোরালোভাবেই সে কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক।

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেন, ‘তানজিদ তামিমকে নিয়ে আমরা নির্বাচকরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। কারণ ওকে এইচপিতে অনেক নার্সিং করা হয়েছে। শেষ ইমার্জিং কাপেও কিন্তু যথেষ্ট পারফর্ম করেছে। আমরা আশাবাদী ইনশাআল্লাহ দেশের জন্য ভালো কিছু দিতে অপেক্ষা করছে।’

সেই আস্থা থেকেই তৃতীয় দফা ব্যাটিং করেছেন তামিম। লেগ স্পিনারদের বেশ সাবলীলভাবেই সামলেছেন। দারুণ কিছু চারের মার দেখা গেছে তার কাছ থেকে। সুতরাং একটু সময় নিলেও আস্থার প্রতিদান দিতে পারবেন তামিম। সেটাই যেন বোঝাবার চেষ্টা করেছেন তরুণ এই ক্রিকেটার।

অতএব এই নড়বড়ে শুরুটাই তামিমের পুরো চিত্র নয়। বরং তিনি যথাযথ পরিচর্যার ফসল হয়ে উঠবেন নিশ্চয়ই। যেমনটা হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার কেবল প্রয়োজন একটু সময় আর সহযোগিতা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...