‘ক্যাপ্টেন কে হবে, এটা আপনারা জানেন না? আশ্চর্য লাগছে… আমার তো মনে হয়, যে কোনো মানুষকে জিজ্ঞেস করলে বলে দেবে… অবভিয়াস চয়েজ, এটা নিয়ে কেন জানি আমি বুঝলাম না, আপনারা টেনশন করছেন…’
এটা বলেই কথা শুরু করলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।
ভিডিও দেখে তার কথায় হাসিও পেল, রাগও হলো। গত ৭ দিন ধরে এটা নিয়ে নানান কিছু পেচিয়ে গেলেন তিনি নিজে এবং তার বোর্ডের কর্তারা। বিশ্বকাপ দুয়ারে, সাকিব ছাড়া বিকল্প ভাবার সুযোগই নেই আসলে।
অথচ, তিন সংস্করণ, দীর্ঘমেয়াদী নেতৃত্ব – সাকিবকে নিয়ে এসব সংশয় আর জটিলতার কথা তিনি বলেছেন নিজের মুখে। আরও দুজনকে বিবেচনায় রাখার কথা তারাই ছেড়ে দিয়েছেন বাজারে। এখন অরিন্দম বলছেন উল্টো কথা।
আগেও অবশ্য নানা সময়ে তিনি নিজের আগের কথা উল্টে ফেলেছেন, পুরো অস্বীকার করেছেন। নতুন করে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তার পরও তার বিশেষত্ব এখানে যে, এসব কাণ্ড করে তিনি আবারও অবাক করে দিতে সক্ষম হন।
স্পেশাল এক ক্ষমতা।
সাকিবকে অধিনায়ক করার কথা শুক্রবার তিনি যেভাবে জানালেন, এটিও বোর্ড সভাপতি হিসেবে তার দায়িত্ব ও সার্বিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরেকবার ফুটিয়ে তোলে। এই তো দুদিন আগেই বিসিবির অপেশাদারিত্বের কথা লিখলাম।
এবার আরও একটি কুৎসিত নমুনা উপস্থাপন করা হলো। এত বড় একটি সিদ্ধান্তের কথা বিসিবি সভাপতি জানিয়ে দিলেন কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই, কিছু মিডিয়ার উপস্থিতিতে এবং তাঁর বাড়ির গ্যারেজে।
এমনকি বিসিবির কয়েকজন পরিচালকও এতে বিস্মিত ও বিব্রত। বোর্ড সভাপতি এভাবে ঘোষণা করে দেবেন, এটা নাকি তারা জানতেন না।
অবশ্য তাদের বিস্মিত ও বিব্রত হওয়ার অধিকার আছে কি না, এই প্রশ্নও তোলা যায়। তারা তো দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এসবকে সাপোর্ট করেই আসছেন।
ক্ষেত্রও তৈরি করেছেন। এই যেমন, বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধানের আজকে যারপর নাই বিব্রত হওয়া উচিত।
গত মঙ্গলবার বিসিবির জরুরি সভা শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘যেহেতু আমাদের সামনে এশিয়া কাপটা আছে, আমরা চাচ্ছি আগে এশিয়া কাপের অধিনায়ক ঘোষণা করি। এর সাথে সাথে মূলত আরও বাকি যে দুই ফরম্যাট আছে, একসাথেই হয়তো চিন্তাভাবনা করে তখন এটা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’
যদিও এটা কোনো যুক্তিতে পড়ে না যে শুধু এশিয়া কাপের অধিনায়ক দেওয়া হবে, তার পরও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান যখন এরকম কিছু বলেন, নিশ্চয়ই বোর্ড সভায় আলোচনা হয়েছিল এটা নিয়ে!
অথচ, আজকে যখন বিসিবি সভাপতিকে প্রশ্ন করা হলো এটা নিয়ে, তিনি সাফ বলে দিলেন, ‘এরকম কোনো কথা জীবনে আমি শুনিই নাই। আমাকে এরকম কথা কেউ বলেও নাই।’
উল্টো প্রশ্নকারীকেই বিসিবি সভাপতি বললেন, ‘আপনারা কেন এরকম চিন্তা করেন? আমার মনে হয়, এরকম চিন্তা করা উচিতই না।’
লে হালুয়া, আপনার সঙ্গে সভা শেষে আপনার বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নিজে এটা বলেছেন। আপনি কি না উল্টো দায় দিচ্ছেন!
তাহলে কি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস সেদিন মিথ্যা কথা বলেছিলেন? নাকি এবার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান মিথ্যা বলছেন!
বিসিবির জাদুঘর নেই বলে নানা সময়ে কত স্টোরি হয়েছে। এখন মনে হয়, জাদুঘরের দরকার নেই। বিসিবি সভাপতির বাসার গ্যারেজই যে কোনো জাদুঘরের চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের কত ইতিহাসের স্বাক্ষী এই গ্যারেজ! একটু চেষ্টা-তদবির করে এই গ্যারেজের প্রসঙ্গ আইসিসির বোর্ড সভায় তুলতে পারলে, আইসিসির অফিসিয়াল স্বীকৃতিও মিলতে পারে। তখন ক্রিকেট বিশ্বের টপ ট্রাভেল ডেস্টিনেশনগুলোর মধ্যে থাকবে এই গ্যারেজ।
যা হোক, যেভাবে হোক, যেখানে হোক, শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটি ঠিক নেওয়া হয়েছে, এটা বড় স্বস্তির। বিশ্বকাপ অধিনায়ক এই মুহূর্তে সাকিব আল হাসানকে ছাড়া অন্য কাউকে ভাবার সুযোগই নেই।
সব ঠিকঠাক থাকলে বাংলাদেশকে দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়া দ্বিতীয় অধিনায়ক হবে সাকিব। বিশ্বকাপে প্রথমবার নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৪ ছুঁইছুঁই বছরে। আবার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাড়ে ১২ বছর পর। বছরের পর বছর ধরে তার অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা, তার শ্রেষ্ঠত্ব এবং তার ওপর নির্ভরতা, সবকিছুরই প্রতিফলন এতে।
অভিনন্দন সাকিব আল হাসান। এবার তবে ছুটতে থাকুক স্বপ্নরথ।
– ফেসবুক থেকে