রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের যবনিকাপাত

এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশের ঘোষিত ১৭ সদস্যের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নেই। এই এক ঘোষণাতেই কি তবে রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে যবনিকাপাত ঘটে গেল? 

এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশের ঘোষিত ১৭ সদস্যের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নেই। এই এক ঘোষণাতেই কি তবে রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের যবনিকাপাত ঘটে গেল? 

সর্বশেষ তিনটি সিরিজের দলেও রিয়াদ ছিলেন না। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের অনুশীলনে তাঁর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতোই। তাছাড়া, রিয়াদ দল থেকে বাদ পড়ার পর তাঁর জায়গায় এসে কেউ তেমন আস্থার প্রতিদানও দিতে পারেননি৷ 

তাই এশিয়া কাপের সম্ভাব্য স্কোয়াডে রিয়াদ জায়গা পেতে পারেন, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু সব সময় তো  আর দুইয়ে দুইয়ে চার মেলে না। মাহমুদউল্লাহর ক্ষেত্রেও সেটিই হয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্ট এখন আর রিয়াদকে নিয়ে এগোতে চাচ্ছে। ভবিষ্যৎ বিবেচনায় রিয়াদকে এক প্রকার ছেঁটে ফেলাই হলো, বলা চলে। 

রিয়াদকে দলে না রাখার অবশ্য স্পষ্ট ব্যখ্যা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। তিনি জানিয়েছেন, রিয়াদকে বাদ দেওয়া সিদ্ধান্ত সবার সাথে আলোচনা করেই নেওয়া হয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্ট তাদের একটা পরিকল্পনা দিয়েছে। ম্যানেজমেন্ট, অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রিয়াদের থাকার কি ন্যূনতম সম্ভাবনাও টিকে রইল? বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ নিজেদের প্রস্তুতি সারবে এশিয়া কাপ আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে। আর সেই প্রস্তুতির অংশই হতে পারছেন না রিয়াদ। অর্থাৎ, রিয়াদকে ছাড়াই বিশ্বকাপের রণকৌশল সাজাচ্ছে বাংলাদেশ। 

এই সম্ভাবনা আরেকটু স্পষ্ট করে তোলে আরেকটি জায়গায়। এশিয়া কাপের স্কোয়াড একটু পর্যবেক্ষণ করে দেখলেই দেখা যাবে, বাংলাদেশ মূলত দারুণ সব ফিল্ডারদের যুক্ত করেছে। যেমন সাত নম্বরের বিবেচনায় আফিফ ছাড়াও শামিম হোসেন পাটোয়ারি, মেহেদী হাসানরা রয়েছেন। অর্থাৎ এই একটি পজিশনেই তিন তিনজন ক্রিকেটারকে দলে ভিড়িয়েছে বিসিবি। আবার এই তিনজনই দুর্দান্ত ফিল্ডার। 

এখন আফিফ ব্যর্থ হলে তাঁর রিপ্লেসমেন্টে শামিম অথবা মেহেদীকেও বাজিয়ে দেখা যেতে পারে। এমনকি মেহেদি মিরাজও হতে পারেন এই পজিশনের দাবিদার। সব মিলিয়ে রিয়াদের জন্য জাতীয় দলের দুয়ারটা একরকম বন্ধই হয়ে যাচ্ছে। 

রিয়াদ টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন। টি-টোয়েন্টির দলেও নেই অনেকদিন হলো। সর্বশেষ ওয়ানডে দল থেকেও বাদ পড়লেন। এই মুহূর্তে তাই বাইশ গজে নিজেকে টিকিয়ে রাখা একটু কঠিনই হবে এ অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের জন্য। 

প্রথমত, সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট বাংলাদেশের বেশ কিছু ক্রিকেটার সুযোগ পেলেও সেই সুযোগটা মেলেনি রিয়াদের। অথচ রিয়াদেরও রয়েছে সিপিএল, পিএসএল খেলার অভিজ্ঞতা।

ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নে অন্যান্য দেশের ক্রিকেটাররা এই ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটেই বেশি ঝুঁকে থাকেন। কিন্তু রিয়াদ সেই সুযোগটা পাচ্ছেন না। জাতীয় দলে নিজের ভাগ্য বদল না হওয়ার সাথে সাথে যেন অস্ত গিয়েছে তাঁর বিদেশি লিগ খেলার সম্ভাবনাও। 

আর বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি যেটা বলে, জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটেও তাঁকে নিয়ে মাতামাতি হয় না। এই যেমন পরের বিপিএলে রিয়াদ কোন দলে খেলবেন, সেটিই নিশ্চিত হয় নি। অথচ এর মধ্যে সাকিব দল পাল্টেছেন, তামিমও নিজের ঠিকানা বদল করেছেন। কিন্তু রিয়াদকে নিয়ে বিপিএল ইস্যুতে যেন আলেচনাই হয়নি। 

সব মিলিয়ে বাইশ গজে নিজের শেষটা হয়তো দেখতেই চলেছেন এ ক্রিকেটার। হয়তো ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে আরে কটা বছর খেলা চালিয়ে যাবেন। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামার সম্ভাবনাটা শূন্যের কোঠাতেই চলে গিয়েছে। বাংলাদেশের জার্সিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ‘শেষ’ শব্দটা যোগ হয়ে গিয়েছে এ বছরের মার্চ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই।  

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...