প্রেম বোধহয় জীবনের সবচেয়ে বড় রহস্যের চেয়ে একটু খানি বেশি রহস্যময়। কখন কিভাবে যে প্রেম এসে দরজায় কড়া নাড়বে সেটা বুঝে ওঠার আগেই প্রেম ঘরের ভিতর ঢুকে পড়বে।
এই মোহাম্মদ আমিরের কথাই ভাবুন না। পাকিস্তানের এই বাঁ-হাতি পেসার ছিলেন কারাগারে। অথচ বন্দী থাকা অবস্থাতেই প্রেমে পড়ে গেলেন তিনি।
২০১০ সালের কথা, আঠারো বছরের তরুণ মোহাম্মদ আমির বাইশ গজে গতি আর সুইংয়ের ঝড় তুলছেন নিয়মিত। কিন্তু হঠাৎই কালবৈশাখী ঝড় এসে এলেমেলো করে দিয়ে যায় তাঁর জীবন।
স্পট ফিক্সিংয়ের দায় মাথায় নিয়ে ক্রিকেট থেকে দূরে সরে আসতে হয় তাঁকে। যেতে হয় পুলিশি হেফাজতেও। সব মিলিয়ে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা আর ছয় মাসের কারাবাসা ভোগ করতে হয়েছিল মোহাম্মদ আমিরকে।
আর পুরোটা সময় তাঁর হয়ে মামলা লড়েছিলেন বাঙালি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ আইনজীবী নারজিস খাতুন। একটা সময় সুশ্রী এই বাঙালি নারীর মায়াতে আটকা পড়েন পাক তারকা; বিপরীত দিক থেকেও ছিল ইতিবাচক উত্তর।
জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মাঝেই মোহাম্মদ আমির প্রেমের স্বাদ পান। জেল থেকে বেরোনোর পর দুজনে চুটিয়ে উপভোগ করেন একে অপরের সঙ্গ। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে দীর্ঘ দিনের প্রণয়কে পূর্ণতা দেন দু’জনে।
পরের বছরেই তাঁদের সংসারে আসে প্রথম সন্তান, মিনসা আমির। ২০২০ সালে আরেক কন্যার বাবা হন পাকিস্তানি পেসার; আর গত বছর আয়রা আমিরের জন্ম হওয়ার মধ্য দিয়ে তিন কন্যার মালিক হলেন আমির-নারজিস দম্পতি।
ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত আমিরের দু:সময়ের প্রতিটা মুহূর্তেই পাশে ছিলেন নারজিস খাতুন। অন্ধকার সময়ে যে হাত এগিয়ে এসেছিল আমিরের জন্য। বাকি জীবনের জন্য সেই হাত ধরে রেখেছেন তিনি।
আপাতত স্ত্রী ও পরিবার নিয়ে লন্ডনে স্থায়ী হয়েছেন এই বাঁ-হাতি। পাকিস্তানের সাথে খুব একটা সম্পর্ক এখন আর নেই। মোহাম্মদ আমিরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারেও রয়েছে নানান নাটকীয়তা।
২০১৬ সালে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জাতীয় দলে ফিরেছিলেন তিনি, কিন্তু খুব বেশিদিন পাকিস্তানের জার্সিতে খেলতে পারেননি। নির্বাচকদের অবহেলার শিকার হয়েছেন এমন দাবি করে ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন আমির।
দেশের হয়ে ৩৬ টেস্ট, ৬১ ওয়ানডে আর ৫০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন মোহাম্মদ আমির। তবে তাঁর প্রতিভা আর সম্ভাবনার তুলনায় এমন ক্যারিয়ার হতাশাজনক; তবে এই ছোট ক্যারিয়ারেই ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন তিনি।