‘অমুক বা তমুককে নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না’ – খুব জরুরি বা বিরল কিছু না হলে, সরাসরি এই ধরনের কথা কখনোই কোনো অফিসিয়াল প্রেস কনফারেন্সে বলা হয় না। কাজেই আজকেও এমন কিছু বলা হয়নি যে, রিয়াদকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।
তবে প্রেস কনফারেন্সের শুরুতেই মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম (লিড ছবিতে ডানে থাকা ভদ্রলোক) পরিষ্কার ইংরেজিতে বলেছেন, ‘আপনাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি, এই প্রেস কনফারেন্স এশিয়া কাপ, এটির প্রস্তুতি এবং আমরা কীভাবে এশিয়া কাপে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি, সুনির্দিষ্টভাবে সেসব নিয়েই…’ (‘Just to remind you that, this press conference is specifically on the Asia cup, it’s preparation & how we plan on going to Asia cup’)
রিয়াদ যেহেতু এশিয়া কাপের দলে নেই, তাকে নিয়ে প্রশ্ন করার যৌক্তিক কারণও নেই। তার পরও বিশ্বকাপ নিয়ে টুকটাক প্রশ্ন হয়েছে, সেটা প্রসঙ্গক্রমেই। তামিম ইকবালকে নিয়ে একটি প্রশ্ন হয়েছে, তিনিও বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় আছেন।
কিন্তু, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যেহেতু এশিয়া কাপের দলে নেই, স্ট্যান্ড বাই তালিকায়ও নেই, তার মানে এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপের সরাসরি পরিকল্পনায় নেই। তাকে নিয়ে আজকে, এই সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের যৌক্তিকতা নেই।
যদিও গত কিছুদিনে যুক্তির দফা-রফা করা হয়েছে। বারবার। এজন্যই আজকে অনেকে প্রশ্ন করছেন যে, ‘আজকে কেন সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গ তোলা হলো না?’ প্রশ্নকারীরাও ঠিক আছেন। কিন্তু এই ইস্যু এতদিন টেনে নেওয়া যেমন ঠিক হয়নি, আজকে প্রশ্ন করলেও তা ঠিক হতো না।
হ্যাঁ, ১৫ বছর ধরে খেলা একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ক্রিকেটার দলে জায়গা না পেলে কথা হবে, আলোচনা হবে। তাকে ‘বিশ্রাম’ দেওয়া, এরপর না নেওয়ার প্রক্রিয়া, তাকে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে কি না, এসব প্রশ্নও তোলা যায়। তবে দল ঘোষণার সময় নির্বাচকরা ব্যাখ্যা করেছেন তাকে না নেওয়ার কারণ। সেটা নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তির বিশ্লেষণ হবে। কিন্তু সেটা কতদিন?
দুই দিন? তিন দিন, চার দিন? তার পরও কেন হবে! এশিয়া কাপের দল ঘোষণা করা হয়েছে ১৫ দিন আগে।
কিন্তু এটা বাংলাদেশের ক্রিকেট, এখানে আদর্শ কিছু কমই হয়। এজন্যই এটা বিশাল ইস্যু করা হয়েছে এবং এখনও তা জিইয়ে আছে।
এমনিতে ১৫ দিন কেন, ১৫ মাস পরও প্রশ্ন হতে পারে কারও বাদ পড়া নিয়ে। কিন্তু সেটা সত্যিকার অর্থেই সেরকম উপযুক্ত কিছু হতে হবে। এটা কি ততটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আসলে?
রিয়াদ ক্যারিয়ারের যে পর্যায়ে আছেন, যে পজিশনের জন্য তাকে নিয়ে আলোচনা, সেখানে তিনি কতটা পার্থক্য গড়তে পারবেন আসলে? বা কতটা জরুরি যে, ‘শতভাগ নিতেই হবে?’ তাকে নিলেও লাভ-ক্ষতি কোনোটাই খুব বেশি হতো না, না নেওয়াতেও লাভ-ক্ষতি খুব একটা নেই।
আমি নিজে যেমন রিয়াদকে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখাতে পারব, তেমনি না নেওয়ার পক্ষেও দেখাতে পারব। বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুসরণ করা যে কেউ এটা পারবেন।
সেটা শুধু রিয়াদ নয়, ওই পজিশনের অন্য সবার ক্ষেত্রেও সত্যি। সবাই ১৮-১৯-২০। কাছাকাছি। যে কাউকে নিলে বা বাদ দিলে খুব বেশি লাভ-ক্ষতি কোনোটাই নেই। কাজেই এটা নিয়ে দিনের পর দিন হইচইয়ের কারণও দেখি না। নির্বাচকরা ও টিম ম্যানেজমেন্ট একটা পলিসি বেছে নিয়েছে। সেটা ব্যর্থ হলে প্রশ্ন তোলার সময়-সুযোগ তো আসবেই।
অথচ, আমরা একদল রিয়াদকে ‘দলে চাই দলে চাই’ স্লোগান তুলে দেদার ডলার কামাচ্ছি। আরেক দল ‘দলে চাই না, দলে চাই না’ জিকির তুলে ডলার কামাচ্ছি। নিজেদের পকেট ভারী হচ্ছে। এই তো। বাস্তবতা কি কিছুই বদলাচ্ছে?
বাস্তবতা বলছে, রিয়াদ এশিয়া কাপের ১৭ জনের মূল স্কোয়াড ও ৩ জনের স্ট্যান্ড বাই তালিকায় নেই। যেহেতু এখন ঘরোয়া ক্রিকেট মৌসুম চলছে না, তাই জরুরি প্রয়োজনের জন্য আরও কজনকে অনুশীলনে রাখা হচ্ছে। রিয়াদ সেখানে আছেন। তার মানে, বিশ্বকাপের জন্য তৃতীয় ধাপের পরিকল্পনায় আরও কয়েকজনের সঙ্গে তিনি আছেন। এই বাস্তবতা বুঝতে তো বিরাট ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। এমনিতেই পরিষ্কার।
রিয়াদের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা নিয়ে আমার ভাবনাটা বলি। আমার যতটুকু মনে হচ্ছে, এশিয়া কাপে বাংলাদেশ যদি গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে যায়, তাহলে রিয়াদের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে ৫০-৬০ ভাগ।
আমাদের মিডিয়া, আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া, আমাদের জনতা প্রবল উত্তেজিত থাকবে তখন, আমাদের বোর্ড কর্তারা থাকবেন ‘প্যানিকড’। সেটার প্রভাব নিউ জিল্যান্ড সিরিজের দলে ও বিশ্বকাপ দলে পড়বে। আর বাংলাদেশ যদি এশিয়া কাপে ভালো করে, তাহলে রিয়াদের এখনকার বাস্তবতা বদলাবে না।
যদিও বাংলাদেশের ক্রিকেটে শেষ কথা বলে কিছু নেই। অভাবনীয় অনেক কিছুই হতে পারে। অস্বাভাবিকতাই এখানে স্বাভাবিক ব্যাপার। তার পরও আপাতত এখনকার ভাবনা বললাম।
তবে এই ইস্যু টেনে টেনে টেনে টেনে এত লম্বা বানানোর পেছনে সত্যিকারের ক্রিকেট প্রেম, দল প্রেম আছে বলে মনে হয় না। কোন প্রেম আছে, সেটা নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবে না!
– ফেসবুক থেকে