বাইশ গজে বাবর সাম্রাজ্য!

সেঞ্চুরি তৃষিত মন। তাই পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংসেও যেন কোনো তৃপ্ততা নেই। সবশেষ দুই ম্যাচেও পেয়েছিলেন ফিফটি। কিন্তু বাইশ গজের বাবর সাম্রাজ্যের অভ্যস্তততায় ফিফটিও যেন আক্ষেপের জন্ম দেয়। এশিয়া কাপের মঞ্চে এসে আর সেই আক্ষেপ রাখলেন না বাবর আজম। নেপালের বিপক্ষে গ্রপ পর্বের প্রথম ম্যাচে খেললেন ১৫১ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস।

প্রথমে ফিফটি, এরপর তিন অঙ্কের পথে ছুটে চলা। সেঞ্চুরি পূরণের পরও যেন নেপালি বোলারদের নিস্তার নেই। ব্যাটিংয়ের ব্যকরণে সিদ্ধহস্ত বাবর চালালেন তাণ্ডব। তাতে সেঞ্চুরিয়ান বাবর পৌঁছে গেলেন ১৫০ তে।

বাবর সেঞ্চুরি করেছেন, আর প্রাপ্তির পালকে কোনো অর্জন যুক্ত হবে না— তা আবার হয় নাকি? নেপালের বিপক্ষে সেঞ্চুরির মধ্য দিয়ে বাবর কীর্তি গড়েছেন বেশ ক’টা।

নেপালের বিপক্ষে এই সেঞ্চুরির সৌজন্য একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৯ টা শতকের মালিক হলেন বাবর আজম। আর এখানেই সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন তিনি। ১৯তম সেঞ্চুরি করতে পাকিস্তানি এ ব্যাটার খেললেন ১০২ টা ইনিংস।

আর এর মধ্য দিয়ে দ্রুততম ১৯ সেঞ্চুরির তালিকায় বাবর ছাড়িয়ে গিয়েছেন হাশিম আমলাকে। ১৯ সেঞ্চুরি করতে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ব্যাটারের লেগেছিল ১০৪ ইনিংস। উল্লেখ্য, এ সময়ে যার সাথে বাবরের সবচেয়ে বেশি তুলনা করা হয় সেই  বিরাট কোহলির ১৯ টা সেঞ্চুরি পূরণ করতে লেগেছিল ১২৪ টা ইনিংস।

এখানেই শেষ নয়। এর আগে পাকিস্তানি অধিনায়ক হিসেবে এশিয়া কাপের মঞ্চে সেঞ্চুরির কীর্তি ছিল ২ জনের। একজন শোয়েব মালিক আর অন্যজন হলেন শহীদ আফ্রিদি। নেপালের বিপক্ষে এই সেঞ্চুরিতে এবার শোয়েব মালিক, শহীদ আফ্রিদির পর এমন কীর্তিতে নাম লেখালেন বাবর আজমও।

সেঞ্চুরির গল্পে ফেরা যাক। মুলতানে এশিয়া কাপের শুরুর ঘন্টায় চমক দেখিয়েছিল নেপালিরাই। ২৫ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে কিছুটা ধাক্কাই খেয়েছিল পাকিস্তান। তবে শুরুর সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার কাজটা করেছিলেন বাবর আজম।

ইনিংসের ৬ষ্ঠ ওভারে এসে পাকিস্তান অধিনায়ক জুটি বাঁধলেন মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে। ৮৬ রানের সেই জুটি পাকিস্তানকে এগিয়েই দিয়েছিল। তবে রিজওয়ানের পর সালমান আগা ফিরে গেলে আবারো কিছুটা ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে পাকিস্তান।

কিন্তু সেই বিপদকে আর দীর্ঘ সময়ে সঙ্গী করতে চাননি বাবর। ইফতেখার আহমেদের সঙ্গে গড়ে তোলেন ম্যাচ ঘুরানো জুটি।ইফতেখারের সাথে জুটির পথেই সেঞ্চুরি তুলে নেন বাবর। ইনিংসের ৪২তম ওভারে দীপেন্দ্র সিং ঐরীর বলে দুই রান নিয়ে তিন অঙ্কে পৌছে যান তিনি।

তবে ১০৯ বলে সেঞ্চুরি তুলেন নেওয়া বাবর থেমেছেন ১৩১ বলে ১৫১ রানের ইনিংস খেলে। অর্থাৎ সেঞ্চুরি পূরণের পর নেপালি বোলারদের উপর রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছিলেন বাবর। যার ফলাফল, শেষ ২২ বলে বাবরের ৫১, আর পাকিস্তানের ৩০০ পেরিয়ে ৩৫০ ছুঁইছুঁই স্কোর।

নেপালের বিপক্ষে এমন ইনিংসের পর পাকিস্তানি ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে সেঞ্চুরির তালিকায় আরো এগিয়ে আসলেন বাবর আজম। ২০ টি সেঞ্চুরি নিয়ে এ তালিকায় শীর্ষে থাকা নামটা সাঈদ আনোয়ার। আর বাবর আজম এরই মধ্যে পৌঁছে গিয়েছেন ১৯-এ।

বাবরের যেমন সেঞ্চুরি প্রবাহ, তাতে এই এশিয়া কাপেই সাঈদ আনোয়ারকে ছুঁয়ে ফেলা কিংবা টপকে যাওয়া— কোনোটাই অসম্ভব নয়। বরং সেটি যে ‘অনুমেয়’ হতে পারে, বাবর আজম যেন নিজেকে সেভাবেই তৈরি করছেন। এ যেন এক বাইশ গজের বাবর সাম্রাজ্য।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link