দিনের শুরুটা বড়সর এক ইনসাইড এডজ দিয়ে। ইনিংসের প্রথম বলেই তাসকিন আহমেদ পেয়ে যেতে পারতেন উইকেট। তবে হয়েছে উল্টো। বাউন্ডারি হজম করতে হয়েছে। তবে দূর্দান্ত সেই বলটাই বাংলাদেশ দলের পেসারদের গোটা দিনের প্রতিচ্ছবি।
শ্রীলঙ্কার সাথে মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ বাংলাদেশের। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জয়ের রেকর্ড নেই। ১১ ম্যাচের সবক’টি ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। তার উপর বৃষ্টির শঙ্কা নিয়েই মাঠে নামতে হয়েছে ১২ তম ম্যাচে। বাংলাদেশের অধিনায়ক বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন টসে জিতে। ভরসার জায়গাটা ছিলেন বাংলাদেশের পেসাররাই।
শুরুর ওভারেই তাসকিন অবশ্য আঘাত হেনেছিলেন। তবে ডিআরএস বাঁচিয়ে দেয় পাথুমা নিসাঙ্কাকে। ষষ্ঠ ওভারে গিয়ে হাসান মাহমুদ প্রথম উইকেটের দেখা পান। দারুণ লাইন লেন্থের ফলাফল স্বরুপ দিমুথ করুণারত্নে মুশফিকের দস্তানায় বন্দী।
কিন্তু এরপর আর উইকেটের দেখা পায়নি বাংলাদেশী কোন বোলার। দীর্ঘ একটা সময় ধরে উইকেট শূন্য থাকতে হয়েছে টাইগার বোলারদের। ২৪ তম ওভারে গিয়ে উইকেটের দেখা মেলে আবার। নিসাঙ্কা এদফা শরিফুলের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন। শ্রীলঙ্কার ৯টি উইকেটের পতন ঘটে ইনিংসের শেষ বল অবধি। যার ৮টি উইকেটই নিয়েছেন তাসকিন, শরিফুল ও হাসানরা।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে বাংলাদেশের পেসাররা দূর্দান্ত বোলিং করেছেন। এক অর্থে তারা অবশ্যই দূর্দান্ত বোলিং করেছেন। ইনিংসের শুরুতে তিনজন পেসারই সুইং পেয়েছেন। শরিফুল তো ৪০ ওভারের দিকেও বল হাতে সুইং আদায় করেছেন। আর লাইন লেন্থ নিয়ে খুব বেশি অভিযোগেরও সুযোগ দেননি বাংলাদেশের পেসাররা।
কিন্তু মাঝে মধ্যেই পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে বল করেছেন তাসকিনরা। যে কারণে বাউন্ডারিও হজম করতে হয়েছে। তাছাড়া অতিরিক্ত রানও এসেছে পেসারদের কাছ থেকে। মাঝে মধ্যেই একটু মনোযোগ হীনতায় ভুগতে দেখা গেছে হাসান মাহমুদদের। তবে পরক্ষণেই আবার দারুণভাবে কামব্যাক করেছে টাইগার পেস ইউনিট। উইকেট বাগিয়েছে।
তবে তাদের উইকেট পেতে সবচেয়ে বেশি সহয়তা করেছে বাংলাদেশের স্পিনাররা। বিশেষ করে নাসুম আহমেদ। তাইজুল ইসলামের পরিবর্তে নাসুমকে দলে নিয়েছিল নির্বাচকরা। তখনই তারা বলেছিলেন নাসুম রক্ষনাত্মক বলেই তাকে দলে রাখা হয়েছে। সেই বক্তব্যের সত্যতাও মিলেছে। একেবারে আঁটসাঁট লাইন-লেন্থে নাসুম বল করেছেন। বিন্দুমাত্র সুযোগ তিনি দেননি লঙ্কান ব্যাটারদের।
নিজের কোটার ১০ ওভারই শেষ করেছেন নাসুম। রান খরচ করেছেন মাত্র ৩১। ইকনোমি মাত্র ৩.১০। বাংলাদেশী বোলারদের মধ্য সবচেয়ে কম। তিনি চাপ সৃষ্টি করেছেন, আর সেই চাপের ফায়দাটা তুলে নিয়েছেন পেসাররা। সাকিব আল হাসানও রানের চাকায় লাগাম ধরে রেখেছিলেন।
ইনিংস বিরতিতে সাদিরা সামারাভিকরামাও বলেছেন স্পিনারদের বিপক্ষেই হাঁসফাঁস করতে হয়েছে তাদের। তাতে অবশ্য পেসারদের কৃতীত্ব কোন অংশেই কমিয়ে দেওয়া যায় না। তারা প্রত্যেকেই বেশ পরিশ্রম করেই তুলে নিয়েছেন এক একটি উইকেট।
হাসান, শরিফুলরা তো নিজেদের খানিকটা দুর্ভাগাও ভাবতে পারেন। দারুণ বল করেও এই দুইজন দু’টি উইকেট থেকে হয়েছেন বঞ্চিত। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিম ছেড়েছেন হাসানের একটি উইকেট। অন্যদিকে শামীম হোসেন বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ ছেড়ে ছক্কা বানিয়েছেন। তবুও হাসান শেষ অবধি উইকেট নিয়েছেন ৩টি।
প্রথম ওভারে উইকেট বঞ্চিত হওয়া তাসকিনের ঝুলিতেও যুক্ত হয়েছে ৩টি উইকেট। যার মধ্যে শতকের কাছে চলে যাওয়া সাদিরার উইকেটটিও রয়েছে। আরেক হাফসেঞ্চুরিয়ান কুশল মেন্ডিসের উইকেটসহ শরিফুল নিয়েছেন ২টি উইকেট। বাংলাদেশি পেসারদের জন্যে নিশ্চিতভাবেই ‘এ গুড ডে অ্যাট দ্য অফিস’।