আবারো ভারত-পাকিস্তান ক্ল্যাসিকো। পাল্লেকেলের উত্তাপ এবার দেখা যাবে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে। এশিয়া কাপ নামক মহাদেশীয় এ আসরকে অবশ্য ভারত-পাকিস্তান মধ্যকার ছোট খাটো একটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মঞ্চ বললেও ভুল হয় না। ৭ দিনের ব্যবধানে একই টুর্নামেন্টে আবারো মুখোমুখি হচ্ছে এ দুটি দল। সুপার ফোরে সেরা দুইয়ে থাকলে অবশ্য একই টুর্নামেন্টে এই দল একে অপরের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে ৩ টা।
যদিও গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। আংশিক সে ম্যাচটিতেও কম জৌলুশ ছিল না। শাহীন-নাসিম-রউফ পেসত্রয়ীর পেস আগ্রাসন, ঈশান কিষাণ-হার্দিক পান্ডিয়ার পাল্টা আক্রমণ, দুটোরই সাক্ষী হয়েছিল পাল্লেকেলে। তবে দিনশেষে ‘পরিত্যক্ত’ ফলাফলেই সমস্ত উত্তাপে জল ঢেলে দিয়েছিল বৃষ্টি।
এবার অবশ্য ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ফল নিয়ে শেষ হওয়া চাই-ই চায়। অন্তত এসিসি’র পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ তো সেটিই বলে। সুপার ফোরে খেলছে ৪ টা দল, ম্যাচ বাকি রয়েছে ৫ টা। কিন্তু টুর্নামেন্টের মাঝপথে, ভারত-পাকিস্তান মধ্যকার এই ম্যাচের জন্য হঠাতই রাখা হলো রিজার্ভ ডে। যে কোনো টুর্নামেন্টেই এমন ঘটনা বিরলই বটে।
যাহোক, ভারত-পাকিস্তান মধ্যকার এই ম্যাচে ফেরা যাক। সুপার ফোরের এ ম্যাচটি হবে কলম্বোর। কলম্বোর উইকেটে রান করা সবসময়ই কঠিন। এখানকার পিচ সাধারণত মন্থরই হয়ে থাকে। যার স্পিনার জন্য বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এমন কন্ডিশনে দু’দলই তাই একাদশে পরিবর্তন আনবে, এটা এক প্রকার নিশ্চিতই।
সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন নাসিম শাহ। যদিও সে ম্যাচেই পরে ফিরে এসেছিলেন। ফেরার পর দুর্দান্ত বোলিংও করেছিলেন। ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও তাই এ পেসারকে নিয়ে তেমন শঙ্কা নেই। তবে আগের ম্যাচে ৪ পেসার নিয়ে খেলা পাকিস্তান এবার তিন পেসার তত্ত্বে ফিরতে পারে। কারণ কলম্বোর স্পিন সহায়ক উইকেট। সে ক্ষেত্রে ফাহিম আশরাফের জায়গায় ফিরতে পারেন মোহাম্মদ নওয়াজ। এই একটি পরিবর্তন ছাড়া বাকি দশ টি জায়গা অনেকটা অনুমেয়ই। এমনকি পাকিস্তান অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে খেললেও তেমন বিস্ময়ের কিছু হবে না।
ভারতের হয়ে আগের ম্যাচে খেলেননি জাসপ্রিত বুমরাহ। ব্যক্তিগত কারণে উড়াল দিয়েছিলেন ভারতে। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে এ পেসার নিশ্চিতভাবেই থাকছেন। একই সাথে ফিরতে পারেন লোকেশ রাহুলও। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন লোকেশের বদলেই সুযোগ পাওয়া ঈশান কিষাণ।
তবে এই ৫ নম্বর পজিশনে পঞ্চাশের উপরে গড়ে ব্যাটিং করেছেন লোকেশ রাহুল। এখন শেষমেশ কার উপর ভরসা রাখবে ভারত, তা জানা যাবে পরের ম্যাচেই। এ ছাড়া স্পিন সহায়ক উইকেট বিবেচনায় শার্দূল ঠাকুরের জায়গায় দলে আসতে পারেন অক্ষর প্যাটেল।
ভারতের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম ভরসা বিরাট কোহলির সাথে কলম্বোর স্মৃতি দারুণ। এই মাঠে ভারতীয় এ ব্যাটারের ব্যাটিং গড় ১০৫! তবে এই সম্ভাবনার বিপরীতে শঙ্কাও রয়েছে। ২০২২ এর পর থেকে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৬৫ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন কোহলি। তাছাড়া পাকিস্তানি পেসারদের সাম্প্রতি আগ্রাসনও চোখ রাঙাচ্ছে ভারতীয় ব্যাটারদের। সবশেষ দেখায়, ভারতের সব কটি উইকেটই নিয়েছিল পাকিস্তানি পেসাররা।
কলম্বোর মাটিতে ম্যাচ হওয়ায় অবশ্য ইতিবাচকতা খুঁজে নিচ্ছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, সবশেষ ২ মাসে পাকিস্তানের সিংহভাগ ক্রিকেটারই শ্রীলঙ্কায় খেলেছেন। শ্রীলঙ্কা সফর, এরপর লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল)। এশিয়া কাপের আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও পাকিস্তান খেলেছে এই লঙ্কানদের মাটিতেই। তাই এই কন্ডিশনের অভ্যস্ততায় তুলনামূলক সুবিধা বেশি পাবে পাকিস্তান— তেমনটাই মনে করেন বাবর।
এ দিকে ভারতের শুবমান গিল এ ম্যাচটিকে মনে করছেন মাস্ট উইন গেম। তিনি বলেন, ‘এর আগে আমি পাকিস্তানের বিপক্ষে বেশি ম্যাচ খেলিনি। তাই এটি যেমন চাপের, তেমনি আমার জন্য প্রমাণ করারও। কারণ বিশ্বকাপে ৯ টি ম্যাচও বড় ম্যাচ। এর আগে তাই এমন ম্যাচগুলা প্রস্তুতিতে দারুণ সহায়তা করবে।’