যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে – প্রবাদটা যেন সাকিব আল হাসানের জন্যই। মাঠের সবকিছু তো বটেই, মাঠের বাইরেও কত কত কাজ একাই সামলান তিনি। সেটা নিয়ে সমালোচনাও শুনতে হয়; এইতো দিন দুয়েক আগেই বাংলাদেশে এসেছিলেন ব্যক্তিগত ছুটিতে, তাতেই গেল গেল রব রব উঠেছিল।
কিন্তু সাকিব ঠিকই প্রমাণ করলেন কেন তিনি আলাদা, কেন তাঁকে ছুঁতে পারে না ক্লান্তি। শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সংক্ষিপ্ত একটা ভ্রমণ করে এসেও কি অনায়াসে খেললেন মনে রাখার মত একটা ইনিংস। দল যখন ব্যাটিং বিপর্যয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তখন বরাবরের মতই আবির্ভূত হয়েছেন ত্রাতা হয়ে।
৩৪তম ওভারে আউট হওয়ার আগে সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে এসেছে ৮৫ বলে ৮০ রান। ছয় চার এবং তিন ছয় দিয়ে সাজানো এই ইনিংসে সাকিবের স্ট্রাইক রেট ৯৫ এর কাছাকাছি। তবে সংখ্যা তত্ত্ব দিয়ে মাহাত্ম্য বোঝা সম্ভব নয় পুরোপুরি, বাংলাদেশ যখন লজ্জাজনক কোন মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল সাকিবের এমন অধিনায়কোচিত ব্যাটিংই দেখিয়েছে উত্তরণের পথ।
সতীর্থ ব্যাটাররা যাদের বিপক্ষে টিকে থাকতে সংগ্রাম করেছেন রীতিমতো তাদেরকেই সাকিব সামলেছেন নিপুণতার সাথে। কোন সময়ই অস্বস্তিতে আছেন তিনি এমন মনে হয়নি; তাই তো ইনসাইড এজ হয়ে আউট হওয়াটা আক্ষেপ জাগিয়েছে সমর্থকদের মনে। মুহুর্তের সেই দুর্ভাগ্যের শিকার না হলে হয়তো দলকে আরো নিরাপদ জায়গায় পৌছাতে দিতে পারতেন নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার।
অবশ্য আরেকটা আক্ষেপও রয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে; দীর্ঘসময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি না পাওয়া সাকিব আল হাসানের সামনে আজ অন্তত সুযোগ ছিল হেলমেট খুলে উদযাপনের। কিন্তু অন্য আরো অনেকদিনের মত আজও সেটা কাজে লাগাতে পারলেন না তিনি।
সবমিলিয়ে ক্যারিয়ারে এ নিয়ে ২৯ বার আশি বা তার বেশি করেছেন সাকিব আল হাসান। এর মধ্যে মাত্র নয়বার পেরেছেন শতরান করতে এবং চার বার ছিলেন অপরাজিত। বাকি ১৬ বারেই তিনি শতক মিস করেছেন, অথচ একটু দায়িত্ব নিয়ে খেললে কিংবা ভাগ্যের ছোঁয়া পেলে আরো দশ-বারো খানা হান্ড্রেড থাকতো তাঁর ঝুলিতে।
ষাট রানের মাঝেই চার ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরার পরে ক্রিজে এসেছিলেন তাওহীদ হৃদয় আর তাঁকে নিয়ে নতুন করে এগিয়ে চলতে শুরু করেন ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান। দুইজনের ১০১ রানের জুটিতে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে না পারলেও অন্তত ভদ্রস্থ স্কোরবোর্ডের দেখা পায় বাংলাদেশ।
আর মহাগুরুত্বপূর্ণ এই জুটিতে সাকিব আল হাসানের অবদান ৫৪ বলে ৬০ রান। আক্সার প্যাটেল, রবীন্দ্র জাদেজাদের বিপক্ষে প্রায় ১২০ স্ট্রাইক রেটে খেলেছিলেন তিনি; সেজন্যই ভারতীয় স্পিনাররা মাঝের ওভার গুলোতে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি তেমন।
চমকপ্রদ কিছু না ঘটলে ভারতের বিপক্ষে এ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় পাওয়ার সম্ভাবনা কমই। তবে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে এমন ইনিংস সাকিবকে আত্মবিশ্বাস দিবে বিশ্বকাপে। কি জানি, হয়তো বহুদিনের দেখা না পাওয়া সেঞ্চুরির দেখাটাও বিশ্ব মঞ্চে পাবেন মি. অলরাউন্ডার।