সোধির হৃদয়ে স্মরণীয় ‘বাংলাদেশ’

মিরপুর হোম অব ক্রিকেটের পুরোটা জুড়েই যেন ইশ সোধির আধিপত্য। ২০১৩ সালে অভিষেক হওয়ার প্রায় এক দশক পরে তিনি এসেছেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশেই যেন সকল স্মৃতি রেখে যাওয়ার পরিকল্পনা ইশ সোধির। তার অভিষেকের সাথেও তো জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ।

এবার পরিণত ইশ সোদি পারফরমেন্সের স্মৃতিই রেখে যেতে চাইলেন এই বঙ্গদেশে। তাইতো প্রায় একা হাতেই বাংলাদেশকে হারিয়ে দিলেন তিনি। ব্যাটে-বলে সমানতালে পারফরম করেছেন তিনি। বাংলাদেশের মানকাড ইতিহাসে জড়িয়েও বিতর্কের অন্যতম চরিত্র এখন তিনি। তবুও দিনশেষে জয়ের বিস্তৃত এক হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ইশ সোধি।

বাংলাদেশের বিপক্ষের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। তাইতো পারফরম করবার সুযোগই হয়নি ইশ সোধির। তবে একটা আগুন নিশ্চয়ই পুষে রেখেছিলেন নিজের মধ্যে। সেটাই যেন সামনে নিয়ে আসলেন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে।

আগে ব্যাট করে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল না নিউজিল্যান্ড। তবুও শেষ দিকে ইশ সোধির ব্যাটে ভর করেই ২৫৪ অবধি পৌঁছায় ব্ল্যাকক্যাপসরা। ২১, ৩২, ২১ ও ১৪ রানের চারটি গুরুত্বপূর্ণ জুটিতে অবদান রাখেন ইশ সোদি। তাকে অবশ্য প্যাভিলনেই পাঠিয়ে দেওয়া যেত তার ব্যক্তিগত ১৭ রানেই।

৪৬ তম ওভারের চতুর্থ বলের আগে সৃষ্টি হয় এক অনন্য গল্পের। ইতিহাসের প্রথমবার বাংলাদেশি কোন বোলার মানকাডিং করেন। শিকার ইশ সোধি। তবে ক্রিকেটের আইনে থাকা নিয়মকে তোয়াক্কা না করেই বাংলাদেশ স্থাপন করতে চাইলো এক মহানুভবতার দৃষ্টান্ত। যাতে ফিরিয়ে আনা হয় ইশ সোধিকে।

ফিরে এসে আরও ১৮ রান যুক্ত করেন ইশ সোধি। শেষ উইকেট হিসেবেই তাকে শিকার করেছিলেন খালেদ আহমেদ। সোদির মূল কাজটাই ছিল মূলত বল হাতে। তাকে বল হাতেই হতে হতো বাংলাদেশের যম। তিনি ঠিক ঠিক হয়েছেন বাংলাদেশের যমদূত।

গুনে গুনে ছয় খানা উইকেট শিকার করেছেন তিনি। দারুণ আগ্রাসনের সাথে খেলতে থাকা তরুণ তানজিদ হাসান তামিমকে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করেন ইশ সোধি। মিড অফে ক্যাচ তুলে দেন তানজিদ। তা তালুবন্দী করতে অসুবিধাই হয়নি লোকি ফার্গুসনের। তার পরের বলেই সৌম্য সরকার ইশ সোদিকে উইকেট দিয়ে আসেন। অহেতুক, অনিয়ন্ত্রিত এক শটে সোদির হাতেই জমা পড়ে বল।

তারপর তাওহীদ হৃদয়ের উইকেটটিও নিজের করে নেন কিউই এই লেগ স্পিনার। তরুণ হৃদয়কে চার রানে বোল্ড আউট করেন তিনি। একপ্রান্ত আগলে রাখা তামিম ইকবালের উইকেটও শিকার করেছেন সোদি। ততক্ষণে দিশেহারা বাংলাদেশ দল। ২৫৫ রানের টার্গেটেও বড় হার তখন চোখের সামনে দোদুল্যমান। ইশ সোদি দুলতে থাকা সেই বড় জয়কে স্থীর করেন।

শেষদিকে শেখ মেহেদী ও হাসান মাহমুদের উইকেট তুলে নিয়ে বড় পরাজয়ের দিকেই ঠেলে দেন বাংলাদেশকে। তার কোটার শেষ বলেও উইকেট পেতে পারতেন ইশ সোধি। তবে স্লিপে ক্যাচ মিস হলে সপ্তম উইকেটটি পাওয়া হয়নি সোদির। তবুও ৩৯ রানে ছয় উইকেট শিকারই সোদির ওয়ানডে  ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার।

শুধু তাই নয়, ওয়ানডেতে উপমহাদেশে নন-এশিয়ান কোনো স্পিনারের এটাই সেরা বোলিং ফিগার। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটি উঠেছে তার হাতে। বাংলাদেশ স্মরণীয় হয়েই থাকছে সোদির ক্রিকেট ইতিহাসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link