ভাগ্যের বাঁক বদল বুঝি একেই বলে। এই সপ্তাহের শুরুতেও মোটরবাইকে চেপে চেন্নাইয়ের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়িয়ে ফুড ডেলিভারির কাজ করতেন লোকেশ কুমার। কিন্তু মাত্র ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে চেন্নাইয়ের এ বাসিন্দা এখন নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট দলের কোচিং স্টাফের অংশ হয়ে থাকবেন ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে।
কদিন আগেই ব্যাঙ্গালুরুর আলুরে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শুরু করেছেন নেদারল্যান্ডস। সেখানেই ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলার জন্য ডাচ ব্যাটারদের প্রস্তুত করতে নেট বোলার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল নেদারল্যান্ডস।
নেদারল্যান্ডস শিবিরে নাম লেখাতে প্রায় ১০ হাজার আবেদন জমাও পড়ে যায় তাতে। সেখান থেকে শেষমেশ ৪ জনকে বেছে নেওয়া হয়। যারা বিশ্বকাপের আগে নেদারল্যান্ডসের অনুশীলনে নেট বোলার হিসেবে কাজ করবেন। আর সেই ৪ জনের মধ্যেই জায়গা পেয়েছেন ফুড ডেলিভারি এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করা লোকেশ কুমার।
বাইশ গজের সাথে লোকেশের পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। খেলেছেন পেশাদার ক্রিকেটও। কলেজে পড়ার সময় থেকে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন তিনি। যদিও সেগুলো শীর্ষ পর্যায়ের কোনো ক্লাব ছিল না। তাই ক্রিকেট নিয়ে লোকেশ বেশিদিন এগোতে পারেন নি। উপার্জনের পথ হিসেবে ফুড ডেলিভারি বয়ের চাকরি বেছে নেন তিনি। চার বছর ধরে আছেন সেই পেশাতেই। তবে ক্রিকেট টা একেবারে ছেড়ে দেন নি। এখনো খেলেন চতুর্থ বিভাগের ক্রিকেট।
লোকেশ কুমার একজন চায়নাম্যান। নেদারল্যান্ডসের নেট অনুশীলনে তিনি তাঁর বাঁহাতি লেগস্পিন জাদুতেই ডাচ ব্যাটারদের প্রস্তুত করবেন। মাত্র ২ দিনের ব্যবধানে এমন একটা সুযোগ পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই আপ্লুত লোকেশ। নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ভারতীয় গণমাধ্যমেও।
সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। আমার গণ্ডি চতুর্থ ডিভিশনেই আটকে থেকে গিয়েছে। আমি কখনো তৃতীয় ডিভিশনেও খেলার সুযোগ পাইনি। নেদারল্যান্ডসের হয়ে নেট বোলার হিসাবে ডাক পাওয়ার পর মনে হচ্ছে এত দিন পর আমার প্রতিভা কেউ চিনল। আর ওদের কথাও আমাকে দারুণ অনুপ্রাণিত করেছে। আমাকে বলে দিয়েছে, একদম নিজের দল ভেবে খেলতে। এরই মধ্যে নিজেকে আমি আমি ডাচ পরিবারের অংশ ভাবতে শুরু করেছি।’
নেদারল্যান্ডসের নেট বোলার হওয়ার প্রক্রিয়ায় লোকেশ কুমার কীভাবে সবাইকে পিছনে ফেলে চেয়ে সেরা চারের মধ্যে এলেন? মূলত বিজ্ঞাপন দেখার পরই লোকেশ ঠিক করেছিলেন, তিনি ভিডিও পাঠাবেন। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞাপন দেখার পর আমি ঠিক করেছিলাম, একবার চেষ্টা করে দেখব। আমাদের দেশে অত বেশি চায়নাম্যান বোলার নেই। যেহেতু ওরা একটু মিস্ট্রি স্পিনার খুঁজছিল, তাই একটু ভরসা পাই। কোনো কিছু না ভেবেই আমি ভিডিওটা পাঠিয়ে দিই।’