বিপিএল আঙিনায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পা পড়েছিল ২০১৫ সালে। প্রথমবারের মতো দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট খেলতে নেমেই সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দলটি। কুমিল্লার সেই শিরোপা যাত্রায় মাশরাফি বিন মুর্তজা নেতৃত্ব দিলেও ব্যাট হাতে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই মুনশিয়ানা দেখিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ রানসহ ফাইনাল ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ফিফটি।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে সেই যে ইমরুল কায়েসের পথচলা শুরু, সেই সম্পর্ক এখনো রয়েছে অবিচ্ছেদ্য ভাবে। সর্বশেষ আসরের মতো এবারও ইমরুল কায়েসের ঠিকানা হয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে। কারণ তিনিই যে বিপিএল ইতিহাসের সেরা দলটার জন্য এক ‘লাকি চার্ম’।
কুমিল্লার চার শিরোপার প্রত্যেকটিতেই দলে ছিলেন। আর বাঁহাতি এ ব্যাটারের নেতৃত্বেই তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বলা চলে, মাশরাফি বিন মর্তুজার পর বিপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় সফলতম অধিনায়ক হচ্ছেন ইমরুল কায়েস।
তবে এবারের বিপিএল ড্রাফটে শুরুর দিকে এক রকম অবহেলিতই ছিলেন ইমরুল। কুমিল্লার ধরে রাখা চার ক্রিকেটারের তালিকায় ছিল না তাঁর নাম। দেশি ক্রিকেটারদের তৃতীয় কলে এসে তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
অবশ্য ইমরুলকে দলে ভেড়ানোর সময় তাঁর প্রতি অভূতপূর্ব এক সম্মান দেখিয়েই ডেকেছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘এই কলটা আমাদের জন্য একটা গর্বের মুহূর্ত। কারণ, আমরা আমাদের অধিনায়ককে ডাকছি। যিনি আমাদের দলে খেলছেন ২০১৫ সাল থেকে।’
ড্রাফটের ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ছিলেন ইমরুল। ৫০ লাখ টাকার সম্মানীর এই তালিকায় আরো ছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব, এবাদত হোসেন ও রনি তালুকদার। এর মধ্যে আগেই জানা গিয়েছিল, এবাদত চোটের কারণে এবারের বিপিএল খেলতে পারবেন না।
এই ক্যাটাগরিতে থাকা ইমরুল কায়েস বাদে বাকি দুই ক্রিকেটারকে অবশ্য দল পেতে তেমন একটা অপেক্ষা করতে হয়নি। রনি তালুকদারকে প্রথম ডাকেই দলে টানে রংপুর রাইডার্স। আর আফিফ হোসেনকে দলে নিয়েছিল খুলনা টাইগার্স। তবে ইমরুল কায়েসকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বেশ খানিকটা।
অবশ্য বিপিএলের বিগত আসরগুলোতে ব্যাট হাতে বিবর্ণই ছিলেন ইমরুল কায়েস। অধিনায়ক হিসেবে সর্বশেষ আসরের শিরোপা জিতলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে ইমরুল ছিলেন তলানির দিকে। ১৪ ম্যাচে ১৬.৭৬ গড়ে মাত্র ২১৮ রান করেছিলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। মূলত এ কারণেই তাঁকে নিয়ে বাকি দলগুলোর তেমন আগ্রহও ছিল না।
কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে ইমরুল কায়েসের অবদানকে অগ্রাহ্য করেনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। কিছুটা দেরিতে হলেও তাঁকে দলে টেনে নেয় কুমিল্লা ফ্রাঞ্চাইজি। জানা গেছে, ইমরুল তাদের ভাবনাতেই ছিলেন। ড্রাফটের প্রথম দিকে দলটাকে ঠিক গুছিয়ে নেওয়ার জন্যই এমন স্ট্র্যাটেজি।
বিগত আসরগুলোতে ব্যাট হাতে মলিন হলেও বিপিএল ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার আবার ইমরুল কায়েস।শুধু তাই নয়, দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে তামিমের পর বিপিএলে সর্বোচ্চ ছক্কা এসেছে ইমরুলের ব্যাট থেকে। তবে ইমরুল কায়েস অন্যদের চেয়ে এগিয়ে শিরোপা জয়ের সংখ্যায়।
এখন পর্যন্ত ৯ বিপিএলে ৪ টিতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ নিয়েছেন বাঁহাতি এ ব্যাটার। আর ইমরুলের সেই চার শিরোপার সাথেই জড়িয়ে আছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ইমরুল আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস, সম্পর্কটা এখনো অবিচ্ছেদ্য। প্রতিবারের মতো এবারও শক্তিশালী দল গড়েছে ফ্রাঞ্চাইজিটি।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে চোখ তাদের। ইমরুলের সংস্পর্শে কিংবা কুমিল্লা সংস্পর্শে ইমরুল, প্রায় সমার্থক হয়ে পড়া এই সম্পর্কটা কি এবার পেন্টাজয় করতে পারবে? সেটি সময়ই বলে দিবে। তবে সেটি হলে ইমরুল শুধু অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ বিপিএল জয়ের রেকর্ডই গড়বেন না, প্রথমবারের মতো তাঁর হাত ধরেই কোনো দল জিতবে হ্যাটট্রিক শিরোপা।