লড়াকু এক সৈনিকের সীমাহীন নিবেদন

ক্র্যাম্পের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তবুও মাঠ থেকে নেমে গিয়ে নিস্তার চাইছেন না। কারণ তখনও যে শ্রীলঙ্কার দেওয়ার লক্ষ্যটা দূরের পথ। 

এই বোধোদয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ান নিজেও জানতেন, তিনি নেমে গেলে ফাঁটল ধরবে জুটিতে। আর তাতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতে পারে পাকিস্তানের ম্যাচজয়ের পথে রানের গতি। 

মোহাম্মদ রিজওয়ান তাই তীব্র ব্যথা নিয়েই ছুটলেন। বাউন্ডারি মারছেন। আবার খানিকক্ষণ বাদেই ব্যথায় লুটিয়ে পড়ছেন। এমন দৃশ্যপটে রিজওয়ান যেন একটা উদাহরণ হয়ে উঠলেন। দলের প্রতি অসীম নিবেদনের একটা প্রতিচ্ছবি আঁকলেন।

তবে রিজওয়ান শুধু দলের প্রতি তাঁর নিবেদনের উদাহরণই তৈরি করেননি, বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করতে নেমে ম্যাচজয়ের নায়ক বনেও গিয়েছেন তিনি। ব্যথা বাঁধা হয়নি। লঙ্কানদের পাহাড়সম সংগ্রহও হার মেনেছে রিজওয়ানের ১৩১ রানের নায়কোচিত ইনিংসে। 

ক্রিকেটের চরম বাস্তবতায় আবার ট্র্যাজিক হিরোদের সংখ্যা মোটেই অপ্রতুল নয়। মোহাম্মদ রিজওয়ান যখন ক্র্যাম্পিংয়ে কাঁতরাচ্ছেন, তখন সেই শঙ্কা ঠিকই ভর করেছিল পাকিস্তানের ড্রেসিংরুমে, পেশোয়ার থেকে লাহোরে— গোটা পাকিস্তানে। 

রিজওয়ান শেষ পর্যন্ত সেই ট্র্যাজিক হিরোর দু:খগাঁথা লিখেননি। লঙ্কানদের ঝড়ের প্রত্যুত্তর দিয়েছেন শান্তচিত্ত, সৌম্যপ্রভায়। 

প্রথমে আব্দুল্লাহ শফিককে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন৷ ৩৭ রানের মাঝে ২ উইকেট হারানো পাকিস্তান ঐ যুগলবন্দীতেই পৌঁছে যায় ২১৩ রানে। এর মাঝে আব্দুল্লাহ শফিক সেঞ্চুরি করেছেন। তবে সেই সেঞ্চুরির উদযাপনটা যেন বেশি ছিল রিজওয়ানেরই।

কারণ শফিকের সেঞ্চুরিতে এগিয়েছে তো পাকিস্তানই। আর রিজওয়ানের নিবেদন কিংবা আসক্তি তো ঐ পাকিস্তান দলটাকে ঘিরেই কেন্দ্রিভূত। 

সেঞ্চুরির পর শফিক ফিরেছেন দ্রুতই। ম্যাচের পেণ্ডুলাম তখন ঘুরে গিয়েছে দু’দিকেই। এমতাবস্থায় নিজের কাঁধে দায়িত্বটা তুলে নিলেন রিজওয়ান। তবে সে যাত্রায় বাঁধ সাধল ক্র্যাম্পিং। কিন্তু কী আর করার। দলটাকে জয়ের বন্দরে নিতে যে রিজওয়ান নামক তরীরই তখন বেশি প্রয়োজন। 

রিজওয়ান তাই সেই প্রতিকূলতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন সম্মুখ গতিতে। আগেই পঞ্চাশ পেরোনো রিজওয়ান দেখা পেয়ে যান তিন অঙ্কেরও। 

দ্য জব ইজ নট ডান ইয়েট। শতরান ছোঁয়ার পর এমন একটা মূলমন্ত্রই হয়তো দীক্ষিত হয়েছিলেন রিজওয়ান। তাই শেষ পর্যন্ত দৃঢ়চেতা রিজওয়ানকে টলাতে পারেনি কেউ। সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন, লক্ষ্যকে কাছে টেনে নিয়েছেন।

তাতেই পাকিস্তান পৌঁছে গিয়েছে বিশ্বকাপের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের বন্দরে।  আর সে জয়ের নেপথ্যের নায়কের ছাপ রেখে মাঠ ছেড়েছেন রিজওয়ান।

৯ চার আর ৩ ছক্কায় সাজানো তাঁর ১২১ বলে ১৩১ রানের ইনিংসকে ঠিক কোন বিশেষণে সংজ্ঞায়িত করা যায়, তা আপাতত উর্ধ্বেই থাকছে। তবে এই ইনিংসে লুকিয়ে দুরন্ত এক লড়াই। লড়াইয়ের সাথে যেখানে মিশেছে অসীম নিবেদন আর জয়ের তীব্র ক্ষুধা।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link