একের পর এক পরাজয় – বিশ্বকাপে যেন জিততেই ভুলে গিয়েছিল আফগানিস্তান। তীব্র জয়খরার মধ্যেই হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি হয়ে এলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়। আর তাতেই ১৪ ম্যাচের পরাজয়ের ধারা ভেঙে বিশ্ব মঞ্চে উদযাপন করার সুযোগ পেল রশিদ, মুজিবরা।
এই জয়ে অবদান আছে প্রায় সবাই। ব্যাটিং, বোলিং দুই বিভাগেই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ওপর আধিপত্য দেখিয়েছে তাঁরা। তবে জয়ের পথে অগ্রণী ভূমিকা রাখাদের নিয়ে আলাদা কোন বিশেষ তালিকা করা হলে সেখানে নিশ্চিতভাবেই রাখতে হবে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। ওপেনিংয়ে নেমে প্রথমবার জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনিই।
ক্রিজে নেমেই ইংলিশ বোলারদের উপর তাণ্ডব চালাতে শুরু করেছিলেন এই ব্যাটার। তৃতীয় ওভারে ক্রিস ওকসকে পুল শটে মিড উইকেট ছাড়া করে শুরুটা করেছিলেন, এরপর আর পিছনে ফিরে তাকানননি। প্রায় প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি আদায় করেছেন, ফলে পাওয়ার প্লেতেই ৭৯ রান জমা হয় আফগানিস্তানের স্কোরবোর্ডে।
ততক্ষণে গুরবাজের ব্যক্তিগত রানও চল্লিশ রানের গন্ডি। ফিফটির জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি এরপর, চার মেরে মাত্র ৩২ বলে পৌছে যান ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরিতে। একই সাথে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নেন এই তরুণ ব্যাটার।
শেষপর্যন্ত আউট হওয়ার আগে ৫৭ বলে ৮০ রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে। আট চার আর চার ছয়ে সাজানো ১৪০ স্ট্রাইক রেটের এই ইনিংসের ওপর ভর করেই বড় সংগ্রহের ভিত পেয়েছিল আফগানিস্তান। পরবর্তীতে লোয়ার মিডল অর্ডারের বদৌলতে ২৮৪ রানের পুঁজি পায় তাঁরা।
অবশ্য মাঝের ওভারগুলোতে ব্যাটিং ধ্বস নাহলে আরো আগ্রাসী হতে পারতেন আফগান ওপেনার। অল্প সময়ের ব্যবধানে ইব্রাহিম জাদরান আর রহমত শাহ আউট হওয়ায় রান তোলার গতি কমাতে হয় তাঁকে। তবে যা করেছেন সেটাই যথেষ্ট হয়েছে ইংলিশ পরীক্ষা উতরে যাওয়ার জন্য।
এই জয় টুর্নামেন্টের বাকি অংশেও অনুপ্রেরণা দিবে আফগানিস্তানকে; পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার মত দলের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সাহস তাঁরা পেয়ে গিয়েছে এখান থেকেই। অনুপ্রেরণা দিবে তরুণ ব্যাটারকেও, আগামী ম্যাচগুলোতেও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চাইবেন তিনি।
এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষেও রান পেয়েছিলেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। সেদিন ভাগ্য সহায় হয়নি তাঁর, সাজ ঘরে ফিরতে হয়েছিল ৪৭ রানের মাথায়। কিন্তু আজ আর কোন আফসোস রাখলেন না; নিজেও করলেন মনে রাখার মত পারফরম্যান্স, দলও পেলো ইতিহাস গড়া একটা জয়।
আফগানিস্তানের ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হলেই কথা হবে এই জয় নিয়ে। সেই সাথে জয়ের নায়ক হিসেবে স্মরণ করা হবে এই ডানহাতিকে। দেশটিতে ক্রিকেট যতদিন থাকবে, ততদিনই তাই শোনা যাবে ‘রহমানউল্লাহ গুরবাজ’ নামটা।