লিটন দাস, পারফরম্যান্সহীনতার অহংকার

রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। রেগে গিয়ে লিটন দাস বুঝিয়ে দিলেন তিনি হেরে গেছেন। অন্য ভাবে বললে, তিনি হেরে গেছেন বলেই রাগটা মিটিয়েছেন সাংবাদিকদের ওপর। গণমাধ্যম বরাবরই যে তাঁর সহজ শিকার।

ঘটনাটা পুনেতে বাংলাদেশ দলের ঠিকানা কনরাড হোটেলে ঘটেছে। অনুশীলন নেই, বাংলাদেশ দলের বিশ্রামের দিন। হোটেল লবিতে অপেক্ষমান সাংবাদিকরা। অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরনের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেতে বেরিয়ে যাওয়ার আগে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে হাসিমুখেই সৌজন্য বিনিময় করে যান তাসকিন আহমেদ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

এই দৃশ্যটা বাংলাদেশ ক্রিকেটে খুব পরিচিত। কিন্তু, এরপর লিটন নেমে যেটা করলেন সেটা ছিল অনাকাঙ্খিত। সাংবাদিকদের দেখেই তিনি ক্ষেপে উঠলেন। হোটেলের নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে ছুটে গেলেন। তেতে গিয়ে বললেন, ‘মিডিয়া এখানে কেন? আমার ছবি তুলছে কেন?’

নিরাপত্তাকর্মীদের কয়েকজন এসে বিনয়ের সঙ্গে সাংবাদিকদের বললেন, ‘আপনাদের এখন বেরিয়ে যেতে হবে।’ একজন ব্যাখ্যাও দিলেন, ‘দু:খিত, আপনাদের একজন খেলোয়াড় অভিযোগ করাতেই আমাদের এরকম করতে হচ্ছে।’

পুরো ঘটনাটা ঘটতে যতটা সময় লাগল, ততটা সময় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ক্রিজেও কাটাননি লিটন দাস। এর আগে প্রথম ম্যাচটাতেও তিনি ছিলেন ব্যর্থ। মাঝে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটা হাফ সেঞ্চুরি পেলেও তাঁতে দলের হারের ব্যবধান কমা ছাড়া কোনো উপকার হয়নি।

ওই একটা ইনিংস বাদ দিলে সাম্প্রতিক সময়ে লিটনের ব্যাটে রান নেই বললেই চলে। তিনি ওপেনার, অথচ সর্বশেষ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ‍৩১ ইনিংস আগে। কিছুদিন আগে মিরপুরে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে ব্যাট ভেঙেছিলেন, এবার ঝাল মেটালেন গণমাধ্যমের ওপর। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এখন অবধি নীরব।

গণমাধ্যম অবশ্য বরাবরই লিটন দাসের সহজ শিকার। গণমাধ্যম সামলাতেও তিনি পারদর্শী নন। আগে পরে অনেকবারই সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রশ্ন শুনে রেগে গিয়ে যা নয় তাই বলেছেন। কথা বলবেন বলে গণমাধ্যমকে অপেক্ষায় রেখে তাঁর মাঠ থেকে বের হয়ে যাওয়ার নজীরও আছে।

বিশ্বকাপের আগেও তিনি সহ-অধিনায়ক ছিলেন। বিশ্বকাপ দলে হঠাৎ করেই তাঁর জায়গায় সহ-অধিনায়ক করা হয় নাজমুল হোসেন শান্তকে। এখানে লিটনের অফ-ফর্ম একটা কারণ ছিল। আরেকটা কারণ ছিল তাঁর মিডিয়া সামলানোর অক্ষমতা।

এখানে তিনি কতটা অকার্যকর, সেটা প্রমাণ হল আরেকবার, পুনের কনরাড হোটেলে। অথচ, কিছুদিন আগেই ক্রীড়া সাংবাদিকদের দুটি সংগঠনের বিবেচনায় বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পান লিটন। লিটনের সেই সুদিনও নেই। ব্যাট হাতে সুদিন হারিয়ে সেই প্রভাবটাই কি তিনি এখন ফেলছেন তাঁর আচরণে?

নাকি লিটন বরাবরই এমন অহংকারী, যার অহংবোধই তাঁকে এমন আচরণে উদ্বুদ্ধ করে? কিন্তু, লিটন জানেন কি, অহংকারই পতনের মূল। আর সেই পতনের শুরুটা বিশ্বকাপের আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিটন অবশ্য তাঁর কৃতকর্মের জন্য দু:খ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু, তাঁর অহংবোধের আগুন তাতেও কি নিভবে?

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link