মুজিব উর রহমান, আফগানকাব্যের নায়ক

বিশ্বকাপে অতীতের সব তিক্ততাকে মুছে ফেলে আফগানরা লিখল এক 'আফগানকাব্য'। যে কাব্যের প্রতিটি পৃষ্ঠায় অবধারিতভাবেই থাকবে ইংলিশবধের গল্প। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে দারুণ এক চমক দেখিয়েছে আফগানিস্তান। আর সেই চমক কিংবা ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক বনে গিয়েছেন মুজিব উর রহমান। 

সমীহ জাগানিয়া দল হিসেবে আফগানিস্তানের পরিচিতি বেশ কিছুকাল আগে থেকেই। তবে মঞ্চটা যখন বিশ্বকাপ, আফগানিস্তানের সঙ্গী হয়েছে শুধু হতাশাই। বিশ্বকাপের ইতিহাসে একটা মাত্র জয়ই ছিল আফগানদের সম্বল। তাও আবার সেটি এসেছিল সহযোগী দেশ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। তিন বিশ্বকাপের পথযাত্রায় ঐ একটি জয় বাদে টেস্ট প্লেয়িং দলগুলোর বিপক্ষে আফগানিস্তানের গল্পটা ছিল তিক্ততায় পূর্ণ।

তবে এবার সেই তিক্ততাকে মুছে ফেলে আফগানরা লিখল এক ‘আফগানকাব্য’। যে কাব্যের প্রতিটি পৃষ্ঠায় অবধারিতভাবেই থাকবে ইংলিশবধের গল্প। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে দারুণ এক চমক দেখিয়েছে আফগানিস্তান। আর সেই চমক কিংবা ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক বনে গিয়েছেন মুজিব উর রহমান।

প্রথমে ব্যাট করে ২৮৪ রান তুলেছিল আফগানিস্তান। লড়াকু সংগ্রহ। তবে ইংলিশদের কাছে সে লক্ষ্য টপকানো তা রোজকার ব্যাপার। কিন্তু বাজবল তত্ত্ব যেন এ দিন হার মানল আফগান স্পিন ঘূর্ণির কাছে। যার নেতৃত্বে ছিলেন মুজিব উর রহমান। আক্রমণাত্মক ব্যাটারে ঠাসা ইংলিশ ব্যাটিংকে রীতিমত গুঁড়িয়ে দিয়েছেন যিনি।

৫১ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছেন। তবে ক্যারিয়ারে বহুবার ফাইফার নেওয়া এ স্পিনার নিশ্চিতভাবেই এই বোলিং ফিগারকে মনে রাখবেন বহুদিন। কারণ তাঁর স্পিন বিষেই যে নীল হয়েছে ইংল্যান্ডের জয়যাত্রা।

শুরুটা করেছিলেন ফজল হক ফারুকি। তবে এরপর মুজিবের স্পিনরহস্য উন্মোচন করতে গিয়েই ধরা দিয়েছেন জো রুট। ইনিংসের সপ্তম ওভারে মুজিবের গুগলি বল গুড লেন্থ থেকে এতটাই নিচু হয়ে স্ট্যাম্পে ছুটে এসেছিল যে, রুট চেষ্টা করেও ব্যাট নামাতে পারেননি। ফলাফল, মুজিবের বলে বোল্ড হয়ে ১১ রানে ফিরে যান ইংলিশ ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে আস্থাভাজন এ ব্যাটার।

মুজিব এরপরে ইংলিশদের ইনিংসে আঘাত হেনেছেন আরো দুইবার। হ্যারি ব্রুককে সঙ্গ দিতে শুরু করেছিলেন ক্রিস ওকস। তবে ওকসের ইনিংস ৯ রানেই থামিয়ে দেন মুজিব। মুজিবের দুর্বোধ্য গুগলিতে বোল্ড হয়ে ফিরে যান এ অলরাউন্ডার। তবে এক প্রান্ত থেকে হ্যারি ব্রুক আফগান জয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন ঠিকই। ফিফটি পূরণের পর ক্রিজে সেট হয়ে চোখ রেখেছিলেন জয়ের পথেই।

কিন্তু, দিল্লীর অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে এ দিন ইংলিশ এ ব্যাটারকে ওয়ান ম্যান আর্মি হতে দেননি মুজিব। উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে ক্যাচ বানিয়ে ব্রুককে ৬৬ রানের ফেরান এ স্পিনার। আর সেই সাথেই ইংলিশবধের মঞ্চ পেয়ে যায় আফগানিস্তান। শেষদিকে রশিদ খানের জোড়া আঘাতে ঐতিহাসিক জয়ের মুহূর্তে পৌঁছে যায় আফগানিস্তান।

তবে বল হাতে ৩ উইকেট নেওয়া মুজিব উর রহমান এ দিন ব্যাট হাতেও দেখিয়েছিলেন চমক। দলীয় ২৩৩ রানে ৭ উইকেট পতনের পরও আফগানিস্তানকে ২৮৪ রানে পৌঁছে দেওয়ার মূখ্য ভূমিকায় ছিলেন এ ব্যাটার। শেষ দিকে তাঁর ১৬ বলে ২৮ রানের ঝড়ো এক ইনিংসেই লড়াই করার মতো একটা পুঁজি পায় আফগানিস্তান। স্পিন-শ্রেষ্ঠত্বে ইংলিশদের বিপক্ষে আফগানিস্তান জয়ের গল্প লিখেছে এরপরই।

ব্যাট হাতে কার্যকরী ২৮ রানের ইনিংসের পর বল হাতে তিনটি মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেট। মুজিব উর রহমানের জন্য দিনটা একটু স্পেশালই বটে। তাঁর অলরাউন্ড নৈপুণ্যেই যে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে কোনো টেস্ট প্লেয়িং দলকে হারালো আফগানিস্তান। এমন দিনের গল্প নিশ্চয়ই বারবার লিখতে চাইবেন মুজিব উর রহমান।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...