অকুতোভয়, অদম্য, অবিচল, অবিশ্বাস্য! আপনি বিরাট কোহলির নামের পাশে যুক্ত করে দিতে পারেন এসব কিছুই। বিশেষণের ফুলেল মালায় গলায় চাপিয়ে দিতে পারেন সহস্র খানেক। তবুও কি কোহলির শ্রেষ্ঠত্ব যাবে বর্ণনা করা! নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ অবধি ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি। তাতে তো আর খর্ব হয়না দৃঢ়চেতা এক চরিত্র।
বিরাট কোহলি, ঘরের মাঠের পূর্ণ ব্যবহার। ঘরের দর্শকদের উন্মদনা ছড়িয়ে দেওয়াতে যার নেই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য। একটা চরিত্র প্রায় প্রতি দিন ম্যাচ জেতাচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন সব শট খেলছে। দলের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ রান করছে। এসবই তিনি করছেন বিশ্বকাপের মহামঞ্চে। এসব কি নিতান্তই ফ্লুক?
যা কিছু বিরাট করছেন তার সবটাই ‘ক্লাস’। এসব কিছুই কোহলির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। ধারাবাহিকতার এক পাথুড়ে মূর্তি হয়ে তিনি দিয়ে যাচ্ছেন অনুপ্রেরণা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরিটা তার পাওয়া হলো না। থেমেছেন তিনি ৯৫ রানে। ততক্ষণে অবশ্য ভারতের জয়ের রাস্তাটা একেবারে মাখনে ঘষা। সেই কাজটাও যে করে দিয়ে গেছেন ‘কিং কোহলি’।
রান তাড়ায় তার যে জুড়ি মেলা ভার। তাইতো ধারভাষ্যকক্ষ থেকে রবি শাস্ত্রী বলে উঠলেন, ‘হি ইজ দ্য মাস্টার অব চেজ’। পরিসংখ্যানের জমাট পাতাও সেই কথাই বলে। এই ম্যাচটা তিনি শেষ করে আসতে পারেননি। এই ম্যাচটা তিনি দারুণ এক ছক্কায় শেষ করতে চেয়েছিলেন। তবে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন যখন তখন তো দলের জয়ের ফারাক কেবল পাঁচ রান।
তবে এমন বহু ম্যাচ তিনি শেষ করে এসেছেন। রান তাড়া করা ম্যাচের ৩২টি-তে তিনি জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। তাছাড়া তিনি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮টি সেঞ্চুরির ৪০টি তিনি করেছেন রান তাড়ায়। দল সেসব ম্যাচে জিতেছে। আরেকটু হলেই ৪১ নম্বর সেঞ্চুরিটা হয়েই যেতো। তাতে ছোঁয়া যেতে ‘লিটন মাস্টার’ শচীন টেন্ডুলকারকে।
বিরাট হয়ত এই বিশ্বকাপেই ছুঁয়ে ফেলবেন শচীনকে। এবারের বিশ্বকাপেই পেয়ে যাবেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯ তম সেঞ্চুরি। অন্তত তার ধারাবাহিকতা সেই দিকটাই তো ইঙ্গিত করছে। বিশ্বকাপের ৫ ইনিংসের মধ্যে তিনটিতেই থেকেছেন তিনি অপরাজিত। তিনটে ফিফটি আর একটি শতক। এই নিয়ে অবস্থান করছেন রান সংগ্রাহকদের তালিকায় সবার উপরে।
৩৪০ রান করার এই যাত্রায় কোহলির গড় ১৭০! ধারাবাহিকতার আর কি উদাহরণ চাই, বলুন তো মশাই! দূর্দান্ত এক সময়ই তো যাচ্ছে তার ব্যাট হাতে। তাকে দমানো তো দায়। পরপর দুই ম্যাচেই প্রায় সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি আসলেও, ব্ল্যাকক্যাপসদের সাথে ভাগ্যটা সহায় হয়নি। এই বিরাটকে কি আদোতে থামানো যায়!
হ্যা একটু হয়ত তিনি নিজেকে নিয়ে ভেবে ফেলছেন শেষ দিকটায়। তাতে খুব বেশি তিরস্কার করবারও তো সুযোগ নেই। দলকে নিরাপদ এক অবস্থানে রেখেই তো তবে নিজের গৌরবের সন্ধান করছেন বিরাট। সেটা নিশ্চয়ই দোষের নয়।
বিরাটের ব্যাট হাসলেই ভারত জয়ের দেখা পায়। বিরাট ভারতের জয় দেখেছেন ১৭৫টা ওয়ানডে ম্যাচে। আর তার ৮১ ম্যাচেই বিরাটের কাছ থেকে এসেছে ৫০ বা তার বেশি রানের ইনিংস। তাতেও তো প্রমাণ হয় তার ব্যাটেই জয় অনেকটাই নির্ভর করে।
সে কাজটা তিনি এবারের বিশ্বকাপেই করে যাচ্ছেন নিয়ম করে। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। সেবার নিতান্তই এক তরুণ বিরাট দলের অংশ হয়ে জিতেছিলেন শিরোপা। এবার বিরাট জিততে চান। তিনি নিজেই দলকে জেতাতে চান। সে পথে যা কিছু বাঁধা সবকিছু দুমড়ে-মুচড়ে ছুড়ে ফেলে দিতে চান। হতে চান ‘আনটাচেবল’।