রিয়াদের সেঞ্চুরি, পুষে রাখা অভিমানের স্বল্পভাষী প্রকাশ

বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় হার যখন চোখ রাঙানি দিচ্ছিল, তখন রিয়াদের কল্যাণেই মান বেঁচেছে বাংলাদেশের। অথচ, এই রিয়াদকে বিশ্বকাপে নেওয়া, না নেওয়া নিয়ে কত জল্পনা ,কল্পনারই না সূত্রপাত ঘটেছিল দেশের ক্রিকেট পাড়ায়। 

চলতি বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর, প্রায় ৬ মাস বাংলাদেশের একাদশের বাইরেই ছিলেন রিয়াদ। এই সময়কালে টানা ১৩ টা ম্যাচে দলের বাইরে ছিলেন তিনি। 

এশিয়া কাপের দলে জায়গা না পাওয়ার পর অনেকে ধরেই নিয়েছিল, বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকবেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে সব শঙ্কার অবসান ঘটিয়ে রিয়াদ ঠিকই ফিরেছিলেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে৷  

সেটি নিয়েও আবার কম আলোচনা হয়নি। শুধু অভিজ্ঞতার মানদণ্ডের কারণেই যে রিয়াদ সুযোগ পান, এমন অভিযোগ তোলেন অনেকেই। তবে রিয়াদ বরাবরই ছিলেন নীরব। কোনো সমালোচনারই প্রত্যুত্তর করেননি। নীরবে নিজের কাজটা চালিয়ে গিয়েছিলেন। আর তার ফলটা অবশেষে পাচ্ছেন অভিজ্ঞ এ ব্যাটার। 

সবাইকে চমকে দিয়ে, বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান এসেছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাট থেকে। ৩ টা ইনিংস খেলেছেন। তাতে ৯৯ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ১৯৮ রান। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছেন ১১১ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। তবে রিয়াদের এমন ইনিংসের পরও বড় পরাজয় এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। 

প্রোটিয়াদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের পর রিয়াদকে নিয়ে প্রশংসার পাপাশাশি আবার একটা সমালোচনার জায়গাও তৈরি হয়েছে। নিশ্চিত পরাজয় জানার পরও সেঞ্চুরি পূরণ করে সেলিব্রেশন করেছিলেন রিয়াদ। যা অনেকের কাছেই দৃষ্টিকটু লেগেছে। 

তবে আলোচনা, সমালোচনা যাই হোক, বাংলাদেশ মান বেঁচেছে রিয়াদের ব্যাটিংয়েই। ১০০ রানের আগেই ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তাদের  ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরাজয়েই নাম লেখাতে পারতো। কিন্তু টেলএন্ডারদের সাথে ব্যাট করে রিয়াদ প্রথমে ১০০, এরপর বাংলাদেশকে নিয়ে যান ২০০-গণ্ডিতেও। 

রিয়াদ অবশ্য ম্যাচ শেষেই জানিয়েছিলেন, তাঁর লক্ষ্য কখনোই সেঞ্চুরি ছিল না। তিনি শুধু ক্রিজে ওভারের পর ওভার টিকে থাকতে চেয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে রিয়াদ আরো বলেন, ‘আমি রান রেটের ব্যাপারটা মাথায় রেখেছিলাম। এ জন্য মুস্তাফিজ, হাসান, শেষের দিকের সবাইকে শুধু টিকে থাকতে বলেছিলাম।’

রিয়াদকে নিয়ে এই বছরে সবচেয়ে চর্চিত প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তিনি বিশ্রামে নাকি বাদ পড়েছিলেন? এ নিয়ে রিয়াদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর না পাওয়া গেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি নিয়ে মুখ খোলেন তিনি।

আর সেখানে কিছুটা অভিমানের সুরেই তিনি বলেন, ‘বিশ্রামটা মনে হয় একটু বেশিই হয়ে গেছিল। তবে এটা আমার হাতে নেই। এটা নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত। আমার কাজটা আমি যদি সততা দিয়ে করতে পারি, এটাই আমার কাজ। আমি এটাই করতে চাই।’

সেঞ্চুরির সাথে রিয়াদের এমন অভিমানী রূপ মোটেই নতুন ঘটনা নয়। এর আগে টেস্ট ক্রিকেটে বাদ পড়ার ফিরে এসেই ১৫০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন রিয়াদ। আর সে ম্যাচ চলাকালীনই তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। রিয়াদের এমন সিদ্ধান্তে বুঝতে বাকি ছিল না, সিদ্ধান্তটি তিমি চরম ক্ষোভ আর অভিমান পুষেই নিয়েছিলেন। 

ওয়ানডে ক্রিকেটে দীর্ঘ বিরতির পর এবার ফিরে এসে আবার সেঞ্চুরি করলেন তিনি। এবারও কি তবে আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে? খুব সম্ভবত, না। এই একটি ফরম্যাটেই টিকে আছে রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। আর এখান থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিলে এখানেই থেমে যাবে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার নিশ্চয় এখনই সেই পথে হাঁটবেন না। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link