খেই হারানো ব্রাজিলে অ্যাটালাস লায়ন্সের থাবা

মরক্কোর গোটা ফুটবলের চিত্রনাট্যই পাল্টে গেছে। এটা কেবলই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়। পুরো দলটাই নিজেদের একটা আলাদা ইতিহাস লিখে যাওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট বলিয়ান। অন্যদিকে, নিজেদের হারানো ঐতিহ্যের সন্ধানে এখনও ধুঁকছে ব্রাজিল।

মরক্কো ফুটবলের নব উত্থান যে কোন ধরণে রুপকথা নয়, সেটাই যেন আরও একটি বার মনে করিয়ে দিল আফ্রিকার দেশটি। ব্রাজিলের সাথে পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করেই খেলেছে তাঁরা। জিতেছে ম্যাচ সগৌর্বে। ঘরের মাঠে দর্শকদের তাঁরা ভাসিয়েসছে আনন্দ বন্যায়।

২০২২ বিশ্বকাপটা স্বপ্নের মত কেটেছে মরক্কোর। দলটা গোটা আফ্রিকা মহাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত খেলেছে বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমিফাইনাল। টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে বিভোর ফ্রান্স দলটাই কেবল হয়েছিল তাদের বাঁধা। ইউরোপের বাঘা-বাঘা সব দলকে টপকে ফাইনাল খেলার স্বপ্নটা অধরাই থেকে যায় মরক্কোর খেলোয়াড়দের।

তবে সে আক্ষেপটাই যেন আরও একবার নতুন করে শুরু করবার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের শীর্ষদের। নতুন কোন মহাকাব্য লিখতে বেশ মুখিয়ে অ্যাটলাস লায়ন্সরা। সে পথে বিশ্বকাপ পরবর্তী আন্তর্জাতিক উইন্ডোতে তাঁরা এবার হারিয়েছে ব্রাজিলকে। গেল বিশ্বকাপটায় প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে না পারা ব্রাজিল দলটা মরক্কোর বিপক্ষেও হয়েছে ব্যর্থ।

এক ঝাঁক তরুণ মুখ নিয়ে আফ্রিকা গিয়েছিল লাতিন আমেরিকার প্রতিনিধিরা। শৈল্পিক ফুটবলের বাহক দলটা পুরোটা সময় জুড়ে ছিল ভীষণ রকম ছন্নছাড়া। রক্ষণ থেকে মধ্যমাঠ কিংবা আক্রমণ কোথাও গোছালো ফুটবলটাই যেন খেলতে পারেনি পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বল দখলে যথেষ্ট পিছিয়ে ছিল সেলেসাওরা।

অন্যদিকে, উজ্জীবিত মরক্কো দলটা খেলেছে দূর্বার গতিতে। ব্রাজিলের রক্ষণকে তছনছ করে দিয়ে গোল আদায় করেছে দু’টো। রেগ্রাগুইয়ের শীর্ষদের ছন্দময় ফুটবলে মাতোয়ারা হয়েছিল গোটা ইবনে বাতুতা স্টেডিয়াম। প্রথম আঘাতটা করেন সোফিয়ান বৌফাল। তখনও এলোমেলো ছিল ব্রাজিলের রক্ষণ। এরপর যখন আবদেলহামিদ সাবিরি জাল খুঁজে নিলেন তখন ব্রাজিলের রক্ষণের যেন ছিল না কোন উপস্থিতি। রীতিমত ছেলেখেলা করেই মরক্কো আদায় করেছে দু’টি গোল।

বিপরীতে ঠিকঠাক আক্রমণই সাঁজাতে পারেনি ব্রাজিল। তরুণদের নিয়ে গড়া দলটায় ভিনিসিয়াস জুনিয়র নির্ভর কৌশলে খেলতে গিয়ে বারেবারে আটকে গেছে রামন মেনেজেসের শীর্ষরা। ক্যাসেমিরোর পা থেকে আসা গোলটায় অবশ্য ভুলটা মরক্কান গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনোর। ব্রাজিলের এই দলটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই দেশটাই বিশ্বফুটবলের পরাশক্তি।

মধ্যমাঠে ছিল না কোন সৃজনশীলতা। ক্যাসেমিরো নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে লুকাস পাকুয়েতা দলকে সেই ম্যাজিক টাচটা দিয়ে সাহায্য করতে পারেনি। অন্যদিকে, রদ্রিগো গোয়েজও ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। প্রতিভাবান এই ফুটবলার ব্রাজিলের জার্সি গায়ে বড্ড মলিন। এখন অবধি তিনি কাজের কাজ কিছুই করে দেখাতে পারেনি হলুদ-নীল জার্সিতে।

মোদ্দা কথা ওয়ালিদ রেগ্রাগুই প্রমাণ করেছেন, তাঁরা একটা সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মরক্কোর গোটা ফুটবলের চিত্রনাট্যই পাল্টে গেছে। এটা কেবলই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে নয়। পুরো দলটাই নিজেদের একটা আলাদা ইতিহাস লিখে যাওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট বলিয়ান। অন্যদিকে, নিজেদের হারানো ঐতিহ্যের সন্ধানে এখনও ধুঁকছে ব্রাজিল। ২০০২ এ শেষবারের মত বিশ্বকাপ জিতেছিল সেলেসাওরা। এরপর আর ফাইনাল অবধি জেতে পারেনি তাঁরা।

ব্রাজিলের পরবর্তী কোচ কে হবেন, সে বিষয়ে নানান ধরণের গুঞ্জন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিশ্ব ফুটবলের বাতাসে। তবে ব্রাজিলের উচিৎ অতি দ্রুতই একজন বিশ্বমানের কোচ নিয়োগ করা। তাছাড়া ইউরোপীয় ফুটবলের সাথে পরিচিত এমন কোচ নিয়োগ দেওয়াই ব্রাজিলের কাছে খোলা থাকা একমাত্র পথ। কেননা বৈশ্বিক সব আয়োজনে ইউরোপের দলগুলোর কাছেই হেরে বিদায় নিতে হচ্ছে সেলেসাওদের।

মরক্কোর মহাকাব্যিক যাত্রার শেষটা কোথায় হবে, সেটা সময় বলে দেবে নিশ্চয়ই। তবে বিশ্ব ফুটবলে দলটি সমীহ আদায় করতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, ব্রাজিলের মিশন কেবল একটাই, নিজেদের হারানো জৌলুশ ফিরে পাওয়া।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...