রিয়াদ, বিষণ্ন দিনের প্রসন্ন নায়ক

হতে পারতো অনেক কিছুই। নিশ্চিত পরাজয়ের দিকে ধাবিত বাংলাদেশের পাশে যুক্ত হতে পারতো নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে পরাজয়ের মুহূর্ত। প্রোটিয়াদের রানপাহাড়ে চাপা পড়ে অল্পরানে আটকে গিয়ে টাইগারদের সঙ্গী হতে পারতো লজ্জার এক অধ্যায়।

কিন্তু হয়নি কোনটাই। পরাজয় এড়ানো যায়নি বটে। তবে মান বাঁচানো একটা লড়াই ঠিকই জিইয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। আর তার নেপথ্যের মূখ্য চরিত্রে আবির্ভূত হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছিলেন না একাদশে। তবে ফিরেছিলেন পরের ম্যাচেই, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৭৫ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আট নম্বরে নেমে খেলেছিলেন ৪৯ বলে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংস।

ভারতের বিপক্ষেও নেমেছিলেন ১৭৯ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর। এবার ৩৬ বলে ৪৬ রান। বাংলাদেশে আর নিউজিল্যান্ড, দুই প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই বাংলাদেশ ২৫০ পেরিয়েছিল রিয়াদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়েই।

সেই ধারা এবারও অব্যাহত রাখলেন রিয়াদ। তবে এ ম্যাচটাতে পরিস্থিতি বিবেচনায় ছাপিয়ে গেলেন আগের ম্যাচ গুলোকেও। ১০০ রানের আগেই গুঁটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দূর করে প্রথম দলকে ১০০-পার করালেন। এরপর দলকে নিয়ে যান ২০০ পেরোনো সংগ্রহের কাছেও। আর সেই পথযাত্রায় তিনি নিজেও করলেন সেঞ্চুরি।

টিম বাংলাদেশের বিষণ্ন দিনে তিনি নিজেকে রাঙালেন ১১১ রানের ইনিংস খেলে। যে ইনিংস তাঁকে নিয়ে গেল এক কীর্তিতে। বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের হয়ে একক ভাবে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক এখন রিয়াদের।

৭২ রানে ৫, ৮২ রানে ৬। এর মধ্যে কোয়েৎজির বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। দল তখন নব্বইয়ের গণ্ডিতে আটক। বাংলাদেশ ১০০ পেরোতে পারবে তো? এমন শঙ্কা যখন ঘণীভূত হচ্ছে, ঠিক তখনই পরের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে কাভার দিয়ে চার মেরে বাংলাদেশকে ১০০ রানে পৌঁছে দেন রিয়াদ।

রিয়াদের সেই ১০০ পেরোনোর চেষ্টা ছিল ২০০ পেরোনোতে। বাংলাদেশ তাঁর সেই একক প্রচেষ্টায় ২০০ রান পেরিয়েছে। এমনকি রিয়াদ ব্যক্তিগত ইনিংসেও পেরিয়েছেন শতরান।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন তিনি ২০১৫ সালে, বিশ্বকাপের মঞ্চে। ‘প্রথম’-এর পর দ্বিতীয়টা পেয়েছিলেন পরের ম্যাচেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই সেঞ্চুরিতে সাইল্যান্ট কিলারের পরিচিতিটা গড়িয়েছিল বিশ্বকাপে ‘ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরিয়ান’ হিসেবে। সেই কীর্তিতেও যে তিনিই প্রথম বাংলাদেশি।

টানা দুই ম্যাচে ১০০ পেরোনো মাহমুদউল্লাহর পরের সেঞ্চুরিটি ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। ২০১৭ সালে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সে সেঞ্চুরিই ছিল মাহমুদউল্লাহর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বশেষ।

এরপর সময় গড়িয়েছে ৬ বছর। ক্যারিয়ারের মধ্যগগণ পেরিয়ে যখন অন্তিম লগ্নে, তখন বিশ্বকাপ খেলবেন কি খেলবেন না, সেই শঙ্কাতেই দিন কেটেছে রিয়াদের। তবে অনেক জল্পনা কল্পনার পর ঠিকই বিশ্বকাপে দলে জায়গা পান রিয়াদ।

তখন হয়তো নিজেকে দেখিয়ে দেওয়ার একটা বারুদ মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলেন রিয়াদ। তাঁর বিস্ফোরণ ঘটলো এ ম্যাচেই। সেঞ্চুরির পর ভেসে গেলেন উচ্ছ্বাসে। দলের নিশ্চিত পরাজয়ের পরও এমন উচ্ছ্বাস? প্রশ্ন উঠতেই পারে।

তবে প্রশ্ন তো এমনও হতে পারে, সব সেঞ্চুরিই কেন জয়ের পুষ্পমাল্যে গাঁথা থাকবে? কখনো কখনো তো এমন নি:সঙ্গ লড়াইয়ের গল্পও আর্কাইভে বন্দী রাখা যায়। রিয়াদ আজ সেই গল্পেরই নায়ক। এমন সেঞ্চুরি পাওয়ার দিনে পুষ্পমাল্য না হোক, একটা করতালি তো তিনি পেতেই পারেন।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link