স্বপ্নের মতো একটা সময় কাটাচ্ছেন মোহাম্মদ শামি। বিশ্বকাপ শুরুর চার ম্যাচে যার একাদশে জায়গাই হয়নি, সেই শামি এখন ৬ ম্যাচে ২৩ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী বোলার। মুম্বাইয়ের ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটেও যার বোলিং আগ্রাসন দেখলো পুরো বিশ্ব। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে একাই নিয়েছেন ৭ উইকেট। আর শামির এমন আগুনঝরা বোলিংয়ে ফাইনালেও পৌঁছে যায় ভারত।
বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ারের সেঞ্চুরিতে ভারত এগিয়ে গিয়েছিল আগেই। কিন্তু ৩৯৭ রানের রানপাহাড় ছোঁয়াটাও কিউইদের জন্য একটা সময় পর্যন্ত সম্ভবপর মনে হচ্ছিল। কিন্তু না। সেখান থেকে বাকি গল্পটা লেখেন শামি।
৯.৫ ওভার বল করে ৫৭ রানের বিনিময়ে তিনি একাই তুলে নেন ৭টি উইকেট। চলতি বিশ্বকাপের যেটি সেরা বোলিং ফিগার তো বটেই, এমনকি বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোনো নক-আউট ম্যাচে ৭ উইকেট নিতে পারেননি আর কোনো বোলার। যার শুরুটা হলো শামির হাত ধরে।
আর এখানেই বেশ কিছু কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন ভারতীয় এ পেসার। এ নিয়ে চলতি বিশ্বকাপে তিনবার পাঁচ উইকেট ও পুরো বিশ্বকাপ মিলিয়ে ৪ বার ফাইফারের স্বাদ নিলেন শামি। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখন সর্বোচ্চ ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ড। এ ছাড়া ওয়ান ডে ক্রিকেটে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ফাইফারের রেকর্ডটাও এখন শামির দখলে।
বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর তালিকায় নিজেকে আগেই বসিয়েছিলেন শামি। জহির খান আর জাভাগাল শ্রীনাথের সঙ্গে তিনি ৪৪ উইকেট নিয়ে ভারতের সেরা বোলারের তালিকাটা ভাগাভাগি করছিলেন। তবে সেমিফাইনালে ৭ উইকেট তাকে পার করিয়েছে বিশ্বকাপের ৫০ উইকেটের মাইলফলকও। যে কীর্তি ছোঁয়ার পথে তিনি খেলেছেন মাত্র ১৭টি ম্যাচে। যা এখন বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম পঞ্চাশ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়ার রেকর্ড।
তবে এত কীর্তির মাঝেও আড়ালে থেকে গিয়েছে বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে তাঁর বোলিং আগ্রাসনের গল্প। এবারের বিশ্বকাপে বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে ৫২ টি ডেলিভারি করেছেন শামি। যার মধ্যে ৯ বার তিনি উইকেটের দেখা পেয়েছেন। আর রান দিয়েছেন ৩২ টি। অর্থাৎ বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে তাঁর বোলিং গড় ছিল ৪ এরও কম, ৩.৫৫ আর স্ট্রাইকরেট ছিল ৫.৭৭।
৬ ম্যাচের ২৩ উইকেট নেওয়া শামির এমনিতে চলতি টুর্নামেন্টে বোলিং গড় ৯.১৩। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে কত দুর্দান্ত ছিলেন এই পেসার। রাচিন রবীন্দ্র থেকে শুরু করে ডেভন কনওয়ে, বেন স্টোকস, মঈন আলীদের মতো ব্যাটারদের জন্য ত্রাস হয়ে ছিলেন মোহাম্মদ শামি।
শামি কখনো বিশ্বকাপ জেতেননি। এবার সেই ‘না পাওয়া’ আক্ষেপটাই ঘুচানোর সুযোগ তাঁর সামনে। দুর্দান্ত একটা টুর্নামেন্টের শেষটাও তাই রাঙানোর দিকে চোখ শামির সামনে।