উদ্দাম স্ট্রোক প্লে, ক্লিন হিটিং অ্যাবিলিটি, ভয়ডরহীন মানসিকতা এবং আগ্রাসনের সাথে নিখুঁত টেম্পারমেন্ট- সব কিছুর সংমিশ্রণ তাঁকে করে তুলেছিল সবার চেয়ে আলাদা। পেসারদের গতির দৌরাত্ম্য কিংবা স্পিনারদের স্পিন বিষ ভেঙ্গে সুইপ, রিভার্স সুইপের ধুম্রজালে সব বোলারদের করেছেন বিধ্বস্ত।
ক্রিকেটীয় সব ব্যকরণকে তোয়াক্কা না করেই খেলেছেন নান্দনিক সব শট। নাম না বললেও হয়ত এতক্ষণে বুঝে ফেলা যায়, লোকটি ধুন্ধুমার ব্যাটিং করে ক্রিকেটে নতুনত্ব আনা আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স।
গত বছর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার আগে দীর্ঘদিন ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে খেলেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। দলের জন্য অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ওপেনার ক্রিস গেইলের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ব্যাটসম্যান ডি ভিলিয়ার্সকেও দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্গালুরুর ‘হল অব ফেম’ পুরস্কার।
তবে আবারো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ফিরছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। তাঁকে দেখা যাবে তাঁর সাবেক দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতেই। তবে আগামী মৌসুমে দলটিতে তিনি কোন ভূমিকায় ফিরবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
সম্প্রতি এক ইউটিউব চ্যানেলে তিনি বলেন, ‘আমি আবারো চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ফিরছি। তবে খেলার জন্য নয়। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ভরা গ্যালারিটা আবার দেখতে চাই। ওখানে ফিরতে পারলে ভালো লাগবে। আমি সেটার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। এত বছর ধরে ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে খেলার পরও কোনো আইপিএল শিরোপা না জিততে পারায় আমি সমর্থকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে তাদের এত বছরের সমর্থন আর ভালোবাসায় আমি কৃতজ্ঞ। আমি আর ক্রিকেট খেলছি না। কারণ আমার চোখে একটি সার্জারি হয়েছে।’
ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে কোন ভূমিকায় তিনি ফিরবেন এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোচিং প্যানেলে যুক্ত হব না। এত বছর যা শিখেছি তা শুধু শেয়ার করতে চাই। আর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ১৮ বছর পর আমি এখন ভাল সময় কাটাচ্ছি। পরিবারকে সময় দিচ্ছি। এতেই আমি খুশি।’
অর্থাৎ ডি ভিলিয়ার্স ফিরলে হয়তো দলের মেন্টর হিসেবে ফিরতে পারেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ তিনি কোচিংয়ে আগ্রহী নন। এ ছাড়া এই ইন্টারভিউয়ে আরো জানা যায়, সম্প্রতি হওয়া লিজেন্ডস ক্রিকেটে খেলারও আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তিনি। তবে চোখের সমস্যার কারণে তিনি আর যাননি।
এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এখন বেশ বয়স্ক। আমাকে লিজেন্ডস ক্রিকেট খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেটা খেলতে পারলে দারুণ হতো। তবে আমার চোখের অপারেশনের জন্য অংশ নিতে পারিনি সেখানে।’
ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে আইপিএলে ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ড ছিল দুর্দান্ত। ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে ১৭০ ইনিংসে ৩৯.৭১ গড়ে তিন শতক ও ৪০ অর্ধশতকে করেছেন ৫১৬২ রান। যা আইপিএলের ইতিহাসে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। আর বিদেশি ব্যাটারদের মধ্যে ডেভিড ওয়ার্নারের পরেই তাঁর অবস্থান। ২০১৬ সালে ব্যাঙ্গালুরুকে ফাইনালে তোলার কারিগর ছিলেন ডি ভিলিয়ার্শ। তাঁর ৪২ বলে ৭৯ রানের অপরাজিত ইনিংসেই গুজরাট লায়নসকে প্রথম কোয়ালিফায়ারে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ব্যাঙ্গালুরু।
তবে, ফাইনালে তারা হেরে যায় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের কাছে। খেলোয়াড় হিসেবে আইপিএল শিরোপা জিততে পারেন নি। তবে মেন্টর হিসেবে আরসিবি’র ভাগ্য বদলাতে পারেন কিনা তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু মাস।