ক্রিকেটের সবচেয়ে দীর্ঘ ও কঠিন ফরম্যাট ধরা হয় টেস্টকে। ধরুন সেই টেস্টেই কোন ওপেনার একটি ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলটি খেললেন। আবার সেই একই ব্যাটারই একেবারে শেষ বলটি খেলে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন। অবাক করার মতোই নয় কি ব্যাপারটা?
বেশ দারুণ ও অন্যরকম ব্যাপার কিন্তু! সম্প্রতি এমনই এক ইতিহাস গড়লেন পাকিস্তানী ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক। আর এই ভিন্নধর্মী ইতিহাসের সাক্ষী হল শ্রীলঙ্কার গল ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে গলে কাল শফিক যে অপরাজিত ১৬০ রানের ইনিংস খেলেছেন, সেটি টেস্ট ইতিহাসে সময়ের হিসেবে কোন ব্যাটারের দীর্ঘতম সফল ইনিংস। শফিক সর্বমোট ৫২৪ মিনিট ব্যাটিং করেছেন।
এর আগে লঙ্কান ব্যাটার অরবিন্দ ডি সিলভা ১৯৯৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টের একটি ইনিংসে ৪৬০ মিনিট ধরে ব্যাটিং করেছিলেন। অর্থাৎ আবদুল্লাহ শফিক টেস্টের প্রথম ব্যাটার যিনি ৫০০-র বেশি মিনিট ক্রিজে অবস্থান করেছেন। ঘণ্টার হিসেব করলে প্রায় আট ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তিনি ব্যাটিং করেছেন!
অথচ শফিকের টেস্ট ক্যারিয়ারের সংখ্যা জানলে আপনি অবাক হতে বাধ্য। তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারটা মাত্র নয় মাসের। অথচ এই স্বল্প মেয়াদেই জাতীয় দলের ভরসার অন্যতম জায়গায় চলে গেলেন তিনি। বয়সটা তেইশ ছুঁই ছুঁই। ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পথচলাটা একবারেই শুরুর দিকে।
এই যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টটি হল শফিকের ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট! নিতান্ত নবীণ এই ক্রিকেটার যে অসাধারণভাবে টেস্ট ফরম্যাটে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন তাতে ক্রিকেটমহল শফিককে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ তারকা বলতেই পারেন।
বুধবার ম্যাচের পঞ্চম তথা শেষ দিনে জয়ের জন্য বাবরের দলের দরকার ছিল ১২০ রান। সেখানে শ্রীলঙ্কার জিততে হলে দরকার ছিল সাত উইকেট নেয়া। ক্রিজে শফিক এক দিক আগলে রাখলেও, অন্য প্রান্তে একের পর এক উইকেট পড়তে থাকলো।
ম্যাচের শেষ অবধি তিনি ৪০৮ টি বল মোকাবেলা করে ১৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন। আর তাঁর এই দুর্দান্ত ইনিংসের জন্যই চতুর্থ ইনিংসে ৩৪২ রান তাড়া করে চার উইকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জিততে পেরেছে পাকিস্তান। ঠান্ডা মাথার আবদুল্লাহ শফিক পুরো ইনিংসে মারলেন সাতটি চার ও একটি ছয় এবং তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ৩৯.২১। চতুর্থ ইনিংস বিবেচনায় এমন পরিপূর্ণ ইনিংসের দেখা তো রোজ রোজ মেলে না।
এদিকে আবদুল্লাহ শফিকের দারুণ ইনিংসে ভর করে গল স্টেডিয়ামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়ল পাকিস্তান। পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ার তালিকায় এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে ইউনিস খানের অপরাজিত ১৭১ রানের সুবাদে ২০১৫ সালে টেস্ট জিতেছিল পাকিস্তান। যেন ইউনুস খানের উত্তরসূরি হিসেবে আবদুল্লাহ শফিক থিতু হয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটালেন।
পাকিস্তানের হয়ে মাত্র হাফ ডজন টেস্ট খেলেই শফিক করে ফেলেছেন ৭২০ টি রান। গলে এই ১৬০ রানের ইনিংসটি তাঁর এই স্বল্প অথচ শক্তিশালী ক্যারিয়ারের জন্য সর্বোচ্চ। তাঁর ব্যাটিং গড় ৮০। এই ওপেনার এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের হয়ে কোন ওয়ানডে খেলেননি। অন্যদিকে মাত্র তিনটি টি -টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৪১ টি রান।
পাকিস্তান ক্রিকেট অনুরাগীরা নিশ্চয়ই দীর্ঘ সময় পরে পাকিস্তান দলে একজন শক্তিশালী ও কৌশলী ওপেনারকে পেয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচবেন। ওয়াসিম আকরাম তো টুইটারে মত দিয়েই দিয়েছেন যে, টেস্টে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অন্যতম সেরা ইনিংস এটি। এদিকে দলের অধিনায়ক বাবর আজমের মতে, ‘কেবল পাকিস্তান ক্রিকেটেরই নয়, বরং বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার পথে আছেন আবদুল্লাহ শফিক।’
পাকিস্তান দলের সুদিন যেন ফিরে এসেছে। দলটিতে নিশ্চয়ই সব ফরম্যাটেই এখন নিয়মিত দেখা যাবে আবদুল্লাহ শফিককে। এমন দায়িত্ববান একজন ওপেনারকে কেইবা বসিয়ে রাখতে চাইবে। পাশাপাশি তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক শক্তিশালী বাবর আজম সহ বেশ কয়েকজন শক্তিশালী ব্যাটার তো আছেনই।
বাইশ বছর বয়সী আবদুল্লাহ শফিক ভবিষ্যতে আরও কোন কোন বিশাল রেকর্ড গড়বেন বা ভাঙবেন, এবং তাঁর পরিপক্ব ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান দলকে আরও কতদূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন তা দেখতে উদগ্রীব থাকবে বিশ্ববাসী।