আফগানিস্তানের ‘অ্যাকিলিস হিল’

দুই প্রভাবক যেমন তাদেরকে দিয়েছে ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ অভিযানের স্বাদ। তেমনি সেই দুই প্রভাবকই লজ্জায় ডুবিয়েছে আফগানিস্তানকে।

ফলাফল যাই হোক, বিশ্বকাপ শেষে মাথা উঁচু করেই বিদায় নিল আফগানিস্তান দল। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বড় বড় দলগুলোকে মাত দিয়েছে আফগানিস্তান। যার প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বেশ কিছু বিষয়। সেমিফাইনালে ভরাডুবির পেছনেও সেই সব প্রভাবকের অনুপস্থিতিই ভুগিয়েছে তাদের।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বনিম্ন দলীয় রানে অলআউট হয়েছে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপের নকআউটে এর থেকে কম রানে কোন দল গুটিয়ে যায়নি। এমনটা হয়েছে দু’টো কারণে। প্রথমত উইকেট, দ্বিতীয়ত আফগানদের ওপেনিং জুটি। আর এই দুইটি বিষয়ই আফগানদের এবারের বিশ্বকাপ যাত্রায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

প্রথমেই আফগানিস্তানের ওপেনিং জুটি নিয়েই আলাপ করা যাক। এই জুটি ছিল আফগানিস্তানের ‘অ্যাকিলিস হিল’। শক্তির জায়গা উদ্বোধনী জুটি আবার সবচেয়ে বড় দূর্বলতাও ছিল সেটি। এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তান নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের দেখা পেয়েছে।

সেই দু’টো ম্যাচেই ওপেনিং থেকে এসেছে সর্বাধিক রান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৩ রানের জুটি গড়েছিলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও। সেই ম্যাচেই এই জুটি থেকে এসেছিল ১১৮ রান। যা রানের বিচারে এবারের বিশ্বকাপে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি।

শুধু কি তাই, সর্বোচ্চ রানের জুটিটাও গুরবাজ ও ইব্রাহিমের যুগলবন্দীতে মঞ্চায়ন হয়েছে। ১৫৪ রান করেছেন এই দুইজনে মিলে। উগান্ডার বিপক্ষেও জয় পেয়েছে রশিদ খানের দল। এবারের বিশ্বকাপে সর্বাধিক তিনবার ১০০ রানের জুটি গড়েছেন এই দুইজন।

অতএব আফগানিস্তানের সফলতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই জুটি নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাতেই তাসের ঘরে পরিণত হয়েছে তাদের ব্যাটিং অর্ডার। যার পেছনে কাজ করেছে উইকেট। আফগানিস্তানের এবারের বিশ্বকাপ যাত্রায় পরম বন্ধু।

সুপার এইটে আফগানিস্তান দু’টো ম্যাচ জিতেছে। দু’টোই জিতেছে আর্নস ভ্যালি স্টেডিয়ামে। একটু স্লো-টার্নিং উইকেট ছিল সেইন্ট ভিনসেন্টের পিচ। সেই পিচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২১ রানে জিতেছে। বাংলাদেশকে তো হারিয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে। সেটায় তাদের জয়ের ব্যবধান ৮ রান।

উইকেটের কন্ডিশনের সহয়তা পুরো টুর্নামেন্টেই পেয়েছে আফগানিস্তান। যেই ম্যাচগুলো আফগানিস্তান হেরেছে সেগুলো হয়েছে অপেক্ষাকৃত ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে। যেখানে প্রতিপক্ষ ১৮০ রানের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উইকেটটা অবশ্য ব্যাটিং সহায়ক ছিল না। কিন্তু পেসারদের বেশ সহয়তা করেছে।

প্রত্যাশার বেশি সুইং পেয়েছেন মার্কো ইয়ানসেন ও কাগিসো রাবাদারা। সে বিষয়টি রাবাদাই জানিয়েছেন ইনিংস পরবর্তী সময়ে। এমন উইকেটে সাধারণত আফগানিস্তান খেলে অভ্যস্ত নয়। এশিয়ার অধিকাংশ দলের মতই অবস্থান আফগানিস্তানের। তাছাড়া প্রথমবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলবার বাড়তি চাপ তো ছিলই।

দুই প্রভাবক যেমন তাদেরকে দিয়েছে ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ অভিযানের স্বাদ। তেমনি সেই দুই প্রভাবকই লজ্জায় ডুবিয়েছে আফগানিস্তানকে। তবুও মাথায় নিচু করবার মত কিছু ঘটেনি। বরং বীরদর্পে তারা ফিরবেন পাহাড়ে ঘেষা জনপদে। সেখানে আনন্দ-উৎসব হওয়া উচিত। তারা যা করে দেখিয়েছেন, তা তো এখনও বহুদলের অধরা স্বপ্ন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...