২০১৯ সালে রংপুর রাইডার্সের নেটে প্রথম তাঁর দেখা মিললো। সেই সময় রংপুর রাইডার্সের তারকার কোন কমতি নেই। তবে হঠাৎই অনেকটা আফ্রিদির মত বোলিং অ্যাকশনের একজনকে বল করতে দেখা গেল। রংপুরের কোচ টম মুডিও বেশ মুগ্ধ হয়ে দেখলেন এই লেগ স্পিনারকে। পরে জানা গেল এই ছেলের নামও আফ্রিদি। ব্যাস, খুঁজে পাওয়া গেল আমাদের নিজস্ব আফ্রিদিকে। পুরো নাম মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদি।
রংপুর রাইডার্সের নেট বোলার থেকে পরে স্কোয়াডেই নিয়ে আসা হয়েছিল এই লেগ স্পিনারকে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজন স্পিনারের যে অভাব সেটা আফ্রিদি পূরণ করবেন এমন স্বপ্নই দেখা হচ্ছিল। ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও নজরে চলে আসেন দ্রুতই। সেই সময় বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়মিতই রাখা হত আফ্রিদিকে।
এছাড়া চট্টগ্রামের এই লেগ স্পিনার ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিজেকে প্রমাণ করতে শুরু করেছিলেন। চট্টগ্রামে বাংলাদেশের অনুশীলনে নিয়মিত বোলিং করতে আসতেন এই স্পিনার। এবার ডিপিএলেও খেলেছেন শেখ জামালের হয়ে।
শেখ জামালের হয়ে এবার চার ম্যাচ খেলে তুলে নিয়েছেন চার উইকেট। আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ২৫ রান দিয়ে পেয়েছেন দুই উইকেট। যদিও বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় না লেগ স্পিনারদের। ফলে অবহেলার কারণে আফ্রিদিও হারিয়ে যাবেন কিনা সেই শঙ্কা জাগে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশ্য কখনোই এই লেগস্পিন শিল্পের প্রকৃত ধারকদের কখনও দেখা যায়নি।
অলক কাপালি, রকিবুল হাসান, আল শাহরিয়ার রোকন, জাভেদ ওমর, মোহাম্মদ আশরাফুল থেকে শুরু করে মার্শাল আইয়ুব ও সাব্বির রহমান রুম্মনরা পার্টটাইম লেগস্পিন করেছেন বা করতেন। কিন্তু ওয়াহিদুল গনির পর বাংলাদেশে সে অর্থে সফল কোনো লেগ স্পিনার জন্মই নেয়নি। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওয়াহিদুল গনি ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ওয়ানডের বেশি আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারেননি; তার সময়ে টেস্ট থেকে শতহস্ত দূরে বাংলাদেশ।
এছাড়া একজন লেগ স্পিনারের যত্ন কি করে নিতে হয় সেটা বাংলাদেশ ঠিক জানে না। জুবায়ের হোসেন লিখনও শুরুর দিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্যও পেয়েছিলেন। তবে এরপর আর আলাদা করে লিখনের যত্ন নেয়া হয়নি। লিখনও আস্তে আস্তে হারিয়ে গিয়েছেন।
আফ্রিদির ক্ষেত্রেও অনেকটা একই রকম পরিস্থিতি। একজন লেগ স্পিনারকে গড়ে তোলার জন্য যা যা করা উচিৎ তাঁর কিছুই আসলে করা হয় না। ঠিক মত ম্যাচ খেলার সুযোগও পান না। অথচ মাত্র ১৬ বছর বয়সেই টম মুডির নজর কেড়ে নিয়েছিলেন এই স্পিনার।
সেই সময় আফ্রিদিকে নিয়ে নিজের আশার কথা বলেছিলেন মোহাম্মদ রফিকও। এই লেগ স্পিনারকে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘বিপিএলে যদি তার অভিষেক হয়, তবে বছর খানেকের মধ্যে সে ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্কে পরিণত হবে। ওর ভেতর যেসব গুণ দেখেছি, তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য আছে তার। আমি তাকে রশিদ খানের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। রশিদ যে রকম মানের বোলার, সেও তাই। এতদিন ধরে দেখছি দেশের ক্রিকেট, ওর মত বোলার আমি দেখিনি সত্যি বলতে। যদি একটা বছর সে পরিশ্রম করে, তবে খুব দ্রুতই সে বাংলাদেশ দলে খেলবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হওয়ার জন্য যেসব গুণ দরকার, তার ভেতর সেগুলো দেখছি।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজন লেগ স্পিনারের আক্ষেপ মেটাতে হলে আফ্রিদিদের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া আফ্রিদিরও নিজের বোলিং নিয়ে আরও অনেক কাজ করা প্রয়োজন। তাহলে যদি আফ্রিদি আক্ষেপটা মেটাতে পারেন।