আবার বছর কুড়ি পর…

ভারতীয়দের জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ পরিণত হয়েছিল এক বিষাদ নগরীতে।  আরও একটি বিশ্বকাপ এক হাত দূরে। তবুও রয়ে যায় এক আলোকবর্ষ ব্যবধানে।

১৯৮৩ বিশ্বকাপ, একেবারেই গণনার বাইরে ভারত দল। কপিল দেবের সেই দলটা চমকে দিলো গোটা বিশ্বকে। তুখোড় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে হারিয়ে জিতে নেয় বিশ্বকাপ। এরপর প্রতিটা বিশ্বকাপেই ভারত আদায় করেছে সমীহ। তবে শিরোপা জয়ের খুব একটা কাছে যাওয়া যায়নি পরবর্তী কুড়ি বছর।

২০০৩ সালে এসেছিল সেই সূবর্ণ সুযোগ। তবে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে যায় ‘মাইটি অস্ট্রেলিয়া’। ২০০৩ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড কিংবা ‘রাউন্ড অব সিক্স’ সবখানেই এই অস্ট্রেলিয়াই ভারতকে নিজেদের পেছনে রেখেই এগিয়ে নিয়ে গেছে নিজেদের শিরোপা অন্বেষণ।

তবে কেনিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে যাওয়া সৌরভ গাঙ্গুলীর দল দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের স্বপ্নে ছিল বিভোর। শচীন টেন্ডুলকার, বীরেন্দ্র শেবাগ, রাহুল দ্রাবিড়দের মত দিগগজ ব্যাটার। সেই সাথে বোলিং আক্রমণে জাভাগাল শ্রীনাথের সাথে জহির খান ও আশিষ নেহরা। স্পিন ডিপার্টমেন্টে হারভাজান সিং।

এমন এক দল নিয়ে শিরোপার প্রত্যাশাই করেছিল ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী ভারত। তবে সেটা আর হতে দেয়নি রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া দল। ভারতীয়দের জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ পরিণত হয়েছিল এক বিষাদ নগরীতে।

আরও একটি বিশ্বকাপ এক হাত দূরে। তবুও রয়ে যায় এক আলোকবর্ষ ব্যবধানে। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ডেমিয়েন মার্টিনের পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসের পর, অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের অদম্য ১৪০ রান। এতেই ভারতের সামনে ৩৫৯ রানের বিশাল পাহাড়।

ভারতের বোলিং আক্রমণ যেন নিরুত্তর। স্রেফ হরভজন সিংয়ের পকেটে গিয়েছিল মাত্র দু’টি উইকেট। তবে প্রথম ইনিংসের পর নিশ্চয়ই খুব একটা ঘাবড়ে যায়নি ভারত। কেননা দলে যে সর্বোচ্চ রান করা শচীন ছিলেন। অধিনায়ক সৌরভও ছিলেন বেশি রান তোলাদের তালিকায়, তাও আবার শচীনের ঠিক পরে।

তবে সৌরভ-শচীনদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগই দেয়নি ম্যাকগ্রা-লি জুটি। এই দুই অজি পেসার তুলেছিলেন গতির ঝড়। তাতেই ২৩৪ রানে থামে ভারতের বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন। তখন যারা কেবল তরুণ ভারতীয় ক্রিকেট ভক্ত, তাদের হৃদয়জুড়ে হয়েছিল তীব্র রক্তক্ষরণ। গোটা ভারত ছেয়ে গিয়েছিল বিষাদের ধূসর মেঘে।

সেই ২০০৩ বিশ্বকাপের পর অবশ্য ভারত বিশ্বকাপ জিতেছে। ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে। এরপর আবার কেটে গেছে দুইটি বিশ্বকাপ। মাঝে ফাইনালে ওঠার সুযোগ হয়ে ওঠেনি ভারতের। ২০১৫-তে অস্ট্রেলিয়া আর ২০১৯-এ নিউজিল্যান্ডের কাছে হারতে হয়েছে সেমিফাইনালে।

তবে ঠিক ঠিক বছর কুড়ি পর, আবার যেন ফিরে এলো সেই ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল। জোহানেসবার্গ থেকে আহমেদাবাদ। ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে শিরোপার লড়াইয়ে। এদফা দাপট দেখিয়েই ভারত পৌঁছে গিয়েছে শিরোপার দোরগোড়ায়।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল জয় যেন প্রতিশোধের নয়। আসল প্রতিশোধ তো নেওয়া এখনও বাকি। বছর কুড়ি বাদে এসেছে সুযোগ ভারতের সামনে। সেবারের অস্ট্রেলিয়া আর এবারের অস্ট্রেলিয়ার মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক। ভারত দলেও রয়েছে দৃষ্টিগোচর হওয়ার মতই তফাৎ।

আহমেদাবাদের দেড় লাখ, আর গোটা ভারতজুড়ে প্রায় দেড়শ কোটি মানুষ সম্ভবত অধীর আগ্রহে সেই প্রতিশোধের মধুর অনুভূতির অপেক্ষায়। আবার বছর কুড়ি বাদে যে এসেছে এই সুযোগ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...