Social Media

Light
Dark

আবার দেখা হবে!

স্পিন বোলিং একটা শিল্প। এমনটাই মনে করেন সদ্য ইতিহাসে অনন্য এক রেকর্ডে নিজের নাম লেখানো নিউজিল্যান্ডের বা-হাতি স্পিনার আজাজ প্যাটেল। তিনি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের একজন স্পিনার হিসেবে আমার প্রধান কাজ নতুন প্রজন্মের কাছে স্পিন বোলিং শিল্পকে বেছে নিতে অনুপ্রাণিত করা।’

ads

এসব কথা অবশ্য আজাজ বলছিলেন ভিন্ন এক প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ বর্তমানে অবস্থান করছে নিউজিল্যান্ডে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজকে সামনে রেখে। ঘরের মাঠের টেস্ট সিরিজে দল থেকে বাদ পড়েছেন আজাজ প্যাটেল। সেই আক্ষেপ নিয়ে বলা কথার পিঠেই নিজের লক্ষ্যের কথাই বলেছেন আজাজ।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস ১৪৪ বছরের। এই প্রায় দেড়শ বছরের ইতিহাসে মাত্র তিনজন বোলার রয়েছে যারা কিনা এক ইনিংসে সব ক’টি উইকেট নিজের করে নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক এই নিউজিল্যান্ডের আজাজ প্যাটেল। নিজের সেরা ফর্মে থাকাকালীন সময়ে তিনি কিনা বাদ পড়লেন টেস্ট দল থেকে।

ads

খানিক অপ্রত্যাশিত। কিন্তু পূর্ব অনুমেয়। কেননা নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন এবং পিচের হালচাল অন্তত কথা বলে স্পিনারদের পক্ষে। সেখানে যেন শুধুই দাপট চলে পেসারদের। তাছাড়া নিউজিল্যান্ড দলটা বর্তমানে ঠাসা দারুণ সব পেস বোলার দিয়ে।

আজাজ প্যাটেলও বিশ্বাস করেন বর্তমান ব্ল্যাকক্যাপস দলে রয়েছে সেরা পেস বোলাররা। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দলে রয়েছে সত্যিকার অর্থেই নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের অন্যতম সেরা পেস বোলাররা। অন্য যে কোন যুগের পেসারদের ছোট করা উদ্দেশ্যে নয় এটা বাস্তবতা।’

তবে আজাজ মনে করেন অদূর ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। ‘ভবিষ্যতে অবশ্য পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। যখন বিশেষজ্ঞ স্পিন বোলাররাও সমান গুরুত্ব পাবে এই কন্ডিশনে।’ 

সময়ের সেরা পেস বোলাররা তো দলে রয়েছেন তা খুবই বাস্তব একটি বিষয়। এছাড়াও পরিসংখ্যান ব্ল্যাকক্যাপস পেসারদের এগিয়ে রাখছে বেশ খানিকটা। বর্তমানে নিউজিল্যান্ডের ঘরের মাঠে পেসারদের সফলতার হার বেশি তাঁর সাথে পেসাররা পিচ থেকে বাড়তি সুবিধা পায় সেই বিষয়টাও মাথায় রাখতে হয়েছে নির্বাচকদের। যদি একটু পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা যায় তবে বিষয়টা আরো একটু পরিষ্কার হবে বোধকরি। 

বিগত তিন বছরে নিউজিল্যান্ডের ঘরের মাটিতে তাঁদের স্পিনাররা বল করেছেন মোটে ১৫২.৩ ওভার অবশ্যই টেস্টে। যেখানে স্পিনাররা কেবল সাতটি উইকেট শিকার করতে পেরেছিল। পক্ষান্তরে প্রায় দশ গুণ বেশি ওভার বল করেছেন কিউই পেসাররা।

মোট ১৫৬৫.৩ ওভার করেছেন নিয়েছেন ১৯৬ উইকেট। যেখানে স্পিনারদের স্ট্রাইকরেট ১৫২.৩ এবং পেসারদের ৪৭.৯। সুতরাং ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড দলে পেসারদের আধিক্য বা স্পিনারদের গুরুত্বহীনতা স্পষ্ট পরিলক্ষিত এবং যুক্তিসঙ্গতও বটে। সবাই চায় সিরিজ জিততে। ঘরের মাঠে অন্তত হারতে কেউই চাইবে না। 

এমন বাস্তবতা মেনে নিয়ে আজাজ নিজেকে প্রস্তুত রাখছেন যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্যে। এমনকি নিজের ব্যাটিং- এর ধারও বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি। নিজের এই চেষ্টা সম্পর্কে আজাজ বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে দল আরো অধিক ব্যাটার কিংবা ব্যাট করতে পারে এমন খেলোয়াড় চাইছে। নিজের এই গুণ বাড়াতে আমি সচেষ্ট। আশা করছি সামনে নিজের ব্যাটিং প্রদর্শনের সুযোগ পেলে আমি তা কাজে লাগিয়ে ভাল পারফর্ম করতে পারবো।’ বলে রাখা ভাল আজাজের বর্তমান টেস্ট ব্যাটিং গড় মাত্র দশ। 

দল থেকে বাদ পড়া যেন প্রত্যাশিতই ছিলো। আজাজ বোধকরি আগে থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। সেই জন্যেই হতাশ হওয়ার পরিবর্তে তিনি এটা নিচ্ছেন একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে। নিজের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজাজ বলেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে স্পিন বোলিং-কে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্ট করার লড়াইটা আমি লড়ে যাবো।’

তাছাড়া একজন স্পিনার হিসেবে আজাজ চান যাতে নিউজিল্যান্ডের পিচ কিউরেটর থেকে শুরু করে গ্রাউন্ডসম্যানরাও যাতে পিচগুলোকে খানিকটা স্পিন সহায়ক করে গড়ে তুলুক। তিনি প্রত্যাশা করেন বিন্দুমাত্র সুবিধাও যদি পিচ থেকে পাওয়া যায় তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও স্পিনাররা বেশ ভালই করবেন।

আজাজ দলে সুযোগ না পেলেও দলে রয়েছেন রাচিন রবীন্দ্র। তিনি মূলত একজন অল রাউন্ডার হিসেবেই দলে সু্যোগ পেয়েছেন। যদিও আজাজ মনে করেন অন্তত রাচিনের অন্তর্ভুক্তি তরুণদের নিরুৎসাহিত করবে না স্পিন বোলিং ক্যারিয়ার ঘটন করতে। তবে আজাজ সুযোগ পেলেই নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান যেন তিনি হতে পারেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্পিন বোলিং এর রোল মডেল।

বললেন, ‘আগামী ১০-২০ বছর পর কোন এক উদীয়মান তারকা বলবে যে আমি আজাজ প্যাটেলের বল দেখেছি এবং তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে স্পিনার হতে চেয়েছি। এর থেকে বেশি আমি আর কিছু চাই না।’

বিশ্বরেকর্ড গড়ার পরের সিরিজেই বাদ পড়ে হয়ত অনেকেই নিজেকে ঢেকে নিতেন হতাশার চাদরে। বিষন্নতায় মগ্ন হয়ে হারিয়ে যেতে চাইতেন কালের গর্ভে। তবে আজাজ প্যাটেল ভিন্ন। তিনি বাস্তবতা বোঝেন। তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে জানেন। হয়ত সফলতার দেখাও তিনি পেয়ে যাবেন আজ নতুবা কাল। তবে তাঁর লড়াই করে যাওয়ার দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হবে নতুন প্রজন্ম সে বিষয়ে সন্দেহর অবকাশ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link