ভাইয়ের জন্য ভাই

জুয়ারিদের খপ্পরে পড়ে অনেক ক্রিকেটারেরই ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে, মোটা অংকের জরিমানা দিতে হয়েছে, কাউকে আজীবন ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হতে হয়েছে। সংখ্যা বিবেচনা করলে পাকিস্তান ক্রিকেটাররাই সবচেয়ে বেশি এই খপ্পরে পড়ে ম্যাচ ফিক্সিং, স্পট ফিক্সিং করেছে। ম্যাচ পাতানোর এক প্রস্তাব পাকিস্তানের উমর আকমল ও পেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে (পিসিবি) না জানানোর অপরাধে তাকে তিন বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর লম্বা সময়ের জন্যই পাকিস্তানকে সার্ভিস দিয়ে আসছিলেন উমর আকমল। তিন ফরম্যাটে নিয়মিত রান করেছেন। ২০১৬ এর পর পর অফ ফর্মের কারণে দলে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকলেও পাকিস্তান দলের স্কোয়াডে নিয়মিত মুখ ছিলেন উমর আকমল।

কিন্তু ২০১৯ সালে ৩০ বছর বয়সে ক্যারিয়ারের এই গুরত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে দল এভাবে শুধু দল থেকে না পুরো ক্রিকেট থেকে বাদ পড়ে যাওয়ায় খুব হতাশ সময় কাটছে উমর আকমলের। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময়ই আদালত থেকে বলে দেওয়া হয়েছে তিন বছরের এই নিষেধাজ্ঞার বদলে মোটা অংকের জরিমানা দিলে ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন এই ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

সেই টাকার পরিমাণ ৪.২৫ মিলিয়ন যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৬ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনি সেই সময়ই বলেছিলেন এতো সামর্থ্য নাই তার এতো মোটা অংকের জরিমানা পরিশোধ করার। তাই তার ক্রিকেট মাঠে ফেরাটা ও ছিল অনিশ্চিত।

যত দ্রত সম্ভব ক্রিকেটে ফিরতে চান উমর আকমল। তাই তিনি পিসিবিকে জানিয়েছিলেন কিস্তিতে পরিশোধ করে হলেও যেনো মাঠে ফিরতে পারেন। কিন্তু  পিসিবি উমর আকমলের এই প্রস্তাবকে নাকচ করে সাফ জানিয়েছিলেন টাকাগুলো একবারে পরিশোধ করলেই মাঠে ফিরতে পারবেন তিনি। সংকটটা এখানেই।

এই অবস্থায় ছোট ভাইয়ের পাশে দাড়ালেন তার বড় ভাই পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান কামরান আকমল। তিনি পাকিস্তান সুপার লিগ থেকে পাওয়া টাকা দিয়েই তাই মাঠে ফেরাতে চান তিনি। ভাইয়ের প্র‍তি এই ভ্রাতৃত্ববোধ থেকে ভাইয়ের মাঠে ফেরার আকুতি দেখে তিনি তার ছোট ভাইয়ের পাশে দাড়িয়েছেন। কামরান আকমল বলেন, ‘আমার ভাইয়ের জরিমানার টাকা আমি পরিশোধ করতে চাই, বোর্ডের কাছে আমার অনুরোধ, পিএসএলের ম্যাচ থেকে আমার ইনকামের টাকা যেনো উমরের জরিমানা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।’

কামরান মনে করেন উমরের ব্যাপারে আরেকটু নমনীয় হওয়া উচিৎ ছিল পিসিবির। উমর ২০০৯ সালে তিন ফরম্যাটেই অভিষেকের পর ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৬ টি টেস্ট, ১২১ টি ওয়ানডে এবং ৮৪ টি টোয়েন্টি খেলেছেন। সাদা বলে এই ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান পাকিস্তানের হয়ে নিয়মিত রান করেছেন এবং অনেক জয়ে অবদান রেখেছেন।

টেস্টে ৩৫ গড়ে করেছেন ১০০৩ রান, ওয়ানডেতে ৩৪ গড়ে ৩১৯৪ রান এবং টি টোয়েন্টিতে ২৬ গটে ১৬৯০ রান। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট তিন টি শতক ও ৩৪ টি অর্ধশতক করেছেন। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাটিংয়ে ভালো স্ট্রোক থাকার কারণে দ্রুত রান করার সামর্থ্য তাকে সাদা বলের ক্রিকেটে পাকিস্তান দলে নিয়মিত খেলেছেন ও রান করেছেন।

কিন্তু টাকার কঠিন হিসাবটা দুই ভাই যদি পূরণ করতে পারেও, তাও পাকিস্তান দলে নিজের হারানো জায়গাটা ফিরে পাবার হিসাবটা পূরণ করা উমর আকমলের জন্য বেশ কঠিনই। কারণ বর্তমান পাকিস্তান দল ২০২৩ বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে প্রায় ২০-২৫ জনের দল সাজিয়ে ফেলেছেন। সেখানে মূল দলে জায়গা ফিরে পাওয়ার জন্য উমর আকমলকে অনেক কঠিন হিসাবই মেলাতে হবে।

তবে এখন এই দুই ভাইয়ের টাকার হিসাবটা কতটুকু কি হয় তাই দেখবার বিষয়। জানিয়ে রাখা ভালো উমর আকমল ও কামরান আকমলের আরেক ভাই রয়েছেন যার নাম আদনান আকমল। আকমল ব্রাদার্সদের মধ্যে মেজো ভাই আদনান আকমলও ক্রিকেটার। ছিলেন উইকেটরক্ষক ও ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু, বাকি দুই ভাইয়ের মত তিনি পরিচিতি পাননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।

এছাড়াও তাদের কাজিন হলেন বর্তমানে পাকিস্তান দলের অধিনায়ক বাবর আজম। আবার উমর আকমলের শ্বশুরের নাম আব্দুল কাদির, পাকিস্তানের কিংবদন্তি লেগ স্পিনার যিনি ২০১৯ সালে মারা গেছেন। তার ছোট ছেলে উসমান কাদির উমর আকমলের শ্যালক। সেও বাবার মতো লেগ স্পিনার, এখন পাকিস্তান দলে সাদা বলের ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link