আলী নাকভি, সম্ভাব্য তারার পতন

চার্লস ব্যানারম্যান ইতিহাসের প্রথম বলটা মোকাবেলা করার পর থেকেই ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। ১৯৯৭ সালে রাওয়ালপিন্ডির সেই টেস্টে আদতে কি ঘটেছিল! সেবারই প্রথম দুজন অভিষিক্ত ক্রিকেটার একই টেস্টে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন।

তাঁদের একজন আজহার মেহমুদ পরবর্তীতে পাকিস্তান জাতীয় দলে খেলেছেন দাপটের সাথে, অন্যজন হারিয়ে গেছেন মাত্র চার টেস্ট পরেই। অথচ অমিত প্রতিভাধর হিসেবে কৈশোর পেরোতেই জাতীয় দলে পা রেখেছিলেন। তিনি সৈয়দ আরুজ আলী নাকভি, পাকিস্তানের ক্রিকেট পাড়ায় যিনি আলী নাকভি নামেই পরিচিত। 

টেকনিক্যালি দুর্দান্ত এবং কম্প্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে মাত্র ২০ বছর বয়সেই জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে আলি নাকভির। ঘরোয়া ক্রিকেটে হাউজ বিল্ডিংয়ের হয়ে দারুণ খেলার সুবাদে দ্রুতই আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখেন তিনি। রাওয়ালপিন্ডিতে নিজের প্রথম ম্যাচেই ২৭০ বলে ১১৫ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস খেলে নিজের প্রতিভার জানান দেন তিনি।

রাওয়ালপিন্ডির পেস সহায়ক সেই পিচে অ্যালান ডোনাল্ড, শন পোলক, ব্রায়ান ম্যাকমিলান, জ্যাক ক্যালিস, প্যাট সিমকক্সের মত বোলাররাও সেদিন পাত্তা পাননি তাঁর কাছে। অপর প্রান্তে আসা যাওয়ার মিছিলের মাঝেও তিনি ছিলেন অবিচল। পরবর্তীতে লেট মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি করেন আজহার মেহমুদও। 

ক্রিকেট ইতিহাসে সেবারই প্রথম একই টেস্টে সেঞ্চুরি পান দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটার। নাকভি ছিলেন মূলত ওপেনার, সেই টেস্টে কিংবদন্তি ওপেনার সাইদ আনোয়ারের সাথে গড়েন ৪৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। তবে প্রথম ইনিংসে সফল হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ফেরেন দ্রুতই। যদিও তিন চারে তাঁর করা ১৯ রানেও ছিল ভবিষ্যতের বড় তারকা হওয়ার হাতছানি। 

বয়স কম হলেও জাতীয় দলে আসার পূর্বে সব ধরণের ক্রিকেটেই রান পেয়েছেন নাকভি। শুরুতে এইচবিএফসির হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করার সুবাদে ডাক পান ইংল্যান্ডগামী ‘এ’ দলের সফরে। রানের ধারা বজায় ছিল বিলেতের মাটিতেও।

এরপর অভিষেক টেস্টের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসেও খেলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। রাওয়ালপিন্ডির সেই টেস্টে তাই তাঁর অভিষেক হওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। সবাই ভেবেছিল ভবিষ্যতের নতুন তারকা পেয়ে গেছে পাকিস্তান। 

কিন্তু শুরুর সাফল্য ধরে রাখতে পারেননি তরুণ আলি নাকভি। রাওয়ালপিন্ডির সেই টেস্টের পর মোটে চার ম্যাচে মাঠে নামেন পাকিস্তানের হয়ে। জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই সাত ইনিংসে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি, করেন মাত্র ১০৮ রান। ফলশ্রুতিতে জাতীয় দল থেকে বাদ দেয়া হয় তাঁকে। পরবর্তীতে আর কখনোই ফিরতে পারেননি তিনি। 

পাকিস্তানকে দীর্ঘসময় সার্ভিস দেয়ার সক্ষমতা ছিল আলী নাকভির। কিন্তু শুরুর ব্যর্থতার পর তাঁর উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেন নির্বাচকরা। হয়তো আরো কিছুদিন সুযোগ পেলে জাতীয় দলের ক্যারিয়ারটা দীর্ঘায়িত হতে পারতো তাঁর।

কিন্তু, আমির সোহেলের আবির্ভাবে জাতীয় দলের ওপেনিং স্লটেও জায়গা ফাঁকা ছিল না আর। আর সাইদ আনোয়ার ছিলেন অটো চয়েজ। ফলশ্রুতিতে আলী নাকভির ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে মাত্র পাঁচ টেস্টেই। 

যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি বরাবরই ছিলেন সেরাদের একজন। পাকিস্তান কাস্টমস, খান রিসার্চ ল্যাব, করাচি, অ্যাবোটাবাদের মত দলের হয়ে মাঠে নেমেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। ১৪ সেঞ্চুরি আর ৩৫ হাফ সেঞ্চুরিতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর সংগ্রহ ৫৮৮১ রান। এছাড়া লিস্ট এ ক্রিকেটে আট সেঞ্চুরিতে ৪৩.২৬ গড়ে তাঁর ঝুলিতে আছে ২৪২৩ রান। 

প্রতিভা বিনষ্ট করায় পাকিস্তান ক্রিকেটের জুড়ি মেলা ভার। পাকিস্তানের সেই অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়ার তালিকায় থাকা আলী নাকভি কেবল দীর্ঘশ্বাসই বাড়িয়েছেন ক্রিকেট রোমান্টিকদের। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link