অ্যাশেজের সর্বকালের সেরা পাঁচ ক্রিকেটার

অ্যাশেজে অংশগ্রহণ করেছেন ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার। স্যার ডন ব্রাডম্যান, স্যার জ্যাক হবস থেকে শুরু করে স্যার অ্যালিস্টেয়ার কুকের মতো আধুনিক যুগের অনেক খেলোয়াড়। তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের সর্বকালের সেরা হিসেবে প্রমান করেছেন আবার কেউ বা তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

ক্রিকেটের দুই অদি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে ১৮৮২ সাল থেকে নিয়মিত ভাবে হয়ে আসছে অ্যাশেজ। টেস্টে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের, সেরা মঞ্চ হিসেবে এই সিরিজকে দেখে দুইদল। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭১ বার অ্যাশেজ সিরিজের আয়োজন হয়। সম্মানের এই লড়াইয়ের মধ্যে ৩৩ বার অস্ট্রেলিয়া ও ৩২ বার ইংল্যান্ড জয় লাভ করে। আর ৬ বার সিরিজ ড্র থাকে।

অ্যাশেজে অংশগ্রহণ করেছেন ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার। স্যার ডন ব্রাডম্যান, স্যার জ্যাক হবস থেকে শুরু করে স্যার অ্যালিস্টেয়ার কুকের মতো আধুনিক যুগের অনেক খেলোয়াড়। তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের সর্বকালের সেরা হিসেবে প্রমান করেছেন আবার কেউ বা তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আজকে আমরা জানবো অ্যাশেজ ইতিহাসের সর্বকালের সেরা কয়েকজন ক্রিকেটার সম্পর্কে।

  • স্যার ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড)

ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত ইয়ান বোথাম ইংল্যান্ডের হয়ে অধিনায়কত্বও করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ারে পদার্পণ করেন কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার। ইংল্যান্ডের হয়ে তিনি ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ১০২ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন।

টেস্ট ক্যারিয়ারে ব্যাট ও বল হাতে অসাধারণ সময় পার করেন বোথাম। ১০২ টেস্টে ৫২০০ রান ও ৩৮৩টি উইকেটের মালিক তিনি। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করেছেন ১৪টি ও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ২২টি। বল হাতে প্রতিপক্ষের জন্য সবসময়ই বিপদের কারন ছিলেন বোথাম। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করেছে ৪ বার আর ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ২৭ বার।

১৯৮১ অ্যাশেজ সিরিজে বোথাম অসাধারণ অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট ও রান সংগ্রহকারী ছিলেন। ৬ ম্যাচের সিরিজটির প্রথম দিকের তিনি অধিনায়কত্ব হারান। প্রথম টেস্টের ১ম ইনিংসে ১ রান ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩ রান করেন। দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের কোন ইনিংসে স্কোর বোর্ডে ১ রান ও তুলতে পারেননি। তাছাড়া প্রথম টেস্টে পরাজয় ও দ্বিতীয় টেস্টে ড্র, অতঃপর দলীয় ও ব্যাক্তিগত ব্যর্থতায় অধিনায়কত্ব হারান বোথাম।

নতুন অধিনায়কের অধীনে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মাঠে নামে ইংলিশরা। সে ম্যাচেই জয়ের ধারায় ফিরে তারা। তবে সে জয়ে ব্যাট ও বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন ব্যর্থতার কারনে অধিনায়কত্ব হারানো বোথাম। ম্যাচটির প্রথম ইনিংসে অর্ধশতক ও ৬ উইকেট শিকার করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ছিলেন ১৪৯ রানে, উইকেট শিকার করেন ১টি। সে সিরিজে বোথাম ২টি শতক ও ১টি অর্ধশতকে ৩৯৯ রান করেন এবং ৩৪টি উইকেট শিকার করেন।

  • রিচি বেনো (ইংল্যান্ড)

১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে ইংল্যান্ড দল ৪-০ তে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয়। অধিনায়ক তখন রিচি বেনো, তখন থেকেই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেট বিশ্বে। তিনি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা প্রতিভাবান অধিনায়ক হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেন। তাছাড়া ১৯৬১ সালের অ্যাশেজ সিরিজও তার নেতৃত্বে ২-১ এ জয় লাভ করে অজিরা। সে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে তার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে হারতে যাওয়া ম্যাচে জয় লাভ করে অস্ট্রেলিয়া।

রিচি তার আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ৬৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন। তিনি একজন অলরাউন্ডার ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ছিলেন। ৬৩ টেস্টে ২,২০১ রানের পাশাপাশি ২৪৮টি উইকেট রয়েছে তার। রিচি তার অ্যাশেজ ক্যারিয়ারে ২৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন। যাতে ১৪টি ম্যাচে তিনি অধিনায়কত্ব করেন। তার অধীনে ৬টি জয়, ২টি পরাজয় ও ৬টি ম্যাচ ড্র হয়।

২৭টি টেস্টে ১৯.৬৬ গড়ে ৭৬৭ রান করেন তিনি। বল হাতে ৮৩টি উইকেট শিকার করেন। তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ২০০০ রান ও ২০০ উইকেট শিকারি বোলার ছিলেন। তার অধিনে অস্ট্রেলিয়া কোন সিরিজ হারেনি। ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে তার অধিনে ১-১এ অ্যাশেজ সিরিজ ড্র করে অজিরা।

  • অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ (ইংল্যান্ড)

ইয়ান বোথামের পর ইংল্যান্ডের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে আন্ড্রু ফ্লিনটফকে বিবেচনা করা হয়। ১৯৯৮-০৯ সাল পর্যন্ত ফ্লিনটফ ইংলিশদের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন। এতে তিনি ৭৯টি টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ৩,৮৪৫ রানের পাশাপাশি ২২৬টি উইকেট শিকার করেন। তিনি একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও ফাস্ট বোলার ছিলেন।

২০০৫ অ্যাশেজ সিরিজ জয়ের পেছনে ফ্লিনটফ অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন। সিরিজটিতে ইংলিশরা ২-১ এ জয় লাভ করে। ফ্লিনটপ ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন। সিরিজটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে ৪০২ ও বল হাতে ১৪ উইকেট শিকার করেন।

  • স্যার ডন ব্রাডম্যান (অস্ট্রেলিয়া)

ক্রিকেট ইতিহাসের অপরাজেয় ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত রয়েছেন ডোনাল্ড ব্রাডম্যান। টেস্ট ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য ৯৯.৯৪ গড় নিয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। ক্যারিয়ারে ৫২টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৬৯৯৬ রান করেন তিনি। যাতে ২৯টি শতক ও ১৩টি অর্ধশতক পূর্ণ করেন। ক্যারিয়ারের ৫২টি টেস্টের মধ্যে ৩৭টি ম্যাচই তিনি অ্যাশেজ সিরিজে খেলেছেন।

৩৭ টেস্টের ৬৩ ইনিংসে ৮৯.৭৮ গড়ে ৫,০২৮ রান সংগ্রহ করেন তিনি। ব্রাডম্যান এখনও অ্যাশেজ ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। ২২ বছর বয়সে ১৯৩০ সালের অ্যাশেজ সিরিজে ৯৭৪ রান সংগ্রহ করেন। যাতে দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি ও একটি ট্রিপল চেঞ্চুরি রয়েছে। সে ম্যাচেই তিনি তার ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত রানের ইনিংস খেলেন। যাতে ৩৩৪ রান সংগ্রহ করেন।

১৯৩২-৩৩ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে ব্রাডম্যান ৩৯৬ রান সংগ্রহ করেন। সে মৌসুমে ততোটা ভালো করতে না পারলেও ১৯৩৪ এর অ্যাশেজ সিরিজে নিজের যোগ্যতার ঘোল আনাই প্রমান করে ৭৫৮ রান সংগ্রহ করেন। ১৯৪৮ সালে তার ক্যারিয়ারে শেষ টেস্ট সিরিজিটি ছিল অ্যাশেজ। তার শেষ সিরিজে ইংল্যান্ডকে ৪-০ তে হোয়াইটওয়াশ করে অজিরা। তখন থেকে তার নামের পাশে ‘ব্র্যাডম্যান অপরাজেয়’ লেখাটি যুক্ত হয়ে যায়।

  • জিম লেকার (ইংল্যান্ড)

অ্যাশেজ ইতিহাসের এক সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার হলেন জিমি লেকার। ১৯৫৬ সালের ৫ ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজে রেকর্ড সংখ্যা ৪৬ টি উইকেট শিকার করেন। যা এখন পর্যন্ত কোন বোলারেরে পক্ষে ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি। লেকার সে আসরে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ৪ ইনিংসে এবং ১০ উইকেট করে নিয়েছিলেন ২ ম্যাচে। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচের ২০ টি উইকেটের মধ্যে ১৯টি তার শিকার।

লেকার ১৯৪৮-৫৯ পর্যন্ত ১৫টি অ্যাশেজ ম্যাচ খেলে ৭৯টি উইকেট শিকার করেন। তাছাড়া ইংল্যান্ডের হয়ে ১৯৪৮-৫৯ পর্যন্ত ৪৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১৯৩টি উইকেট শিকার করেন। ডানহাতি এই অফ ব্রেক বোলার ১৯৮৬ সালে মৃত্যু বরণ করেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...