ক্রিকেটের রাজনীতিবিদ একাদশ

অনেকে আবার ভিন্ন কোন পথ বেছে নেন। অধিকাংশ ক্রিকেট বহির্ভূত যেই সকল পেশাকে বেছে নেন ক্রিকেটাররা তার মধ্যে সবার উপরের দিকে থাকে ব্যবসা। সেক্ষেত্রে মার্কেটিং-টা আগেভাগেই করা থাকে। তাছাড়া খেলোয়াড়ী জীবনের খ্যাতিটা আরো একটি ক্ষেত্রে খুব কাজে লাগে কিংবা ব্যবহৃত হয়। সেটা হয় রাজনীতির মাঠে। এই উপমহাদেশে সেই চর্চাটা খানিক বেশি।

ক্রিকেট ময়দানে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এমন খেলোয়াড়দের সংখ্যা গুণে শেষ করা যাবে না। খেলার মাঠের ভাল পারফর্মেন্স স্বাভাবিক অর্থে বেশ খ্যাতি বয়ে নিয়ে আসা। সেই খ্যাতিই তাঁদেরকে প্রভাবিত করে ক্রিকেট পরবর্তী সময়ে যুক্ত হন নানান পেশায়। কাজে লাগান সেই খেলোয়াড়ী জীবনের খ্যাতি। সাধারণত ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া খেলোয়াড়রা যুক্ত থাকেন ক্রিকেটের সাথেই। হয়ত কোচ কিংবা সংগঠক।

অনেকে আবার ভিন্ন কোন পথ বেছে নেন। অধিকাংশ ক্রিকেট বহির্ভূত যেই সকল পেশাকে বেছে নেন ক্রিকেটাররা তার মধ্যে সবার উপরের দিকে থাকে ব্যবসা। সেক্ষেত্রে মার্কেটিং-টা আগেভাগেই করা থাকে। তাছাড়া খেলোয়াড়ী জীবনের খ্যাতিটা আরো একটি ক্ষেত্রে খুব কাজে লাগে কিংবা ব্যবহৃত হয়। সেটা হয় রাজনীতির মাঠে। এই উপমহাদেশে সেই চর্চাটা খানিক বেশি।

আজকে খেলা ৭১ এর আয়োজনটা একটু ভিন্ন। আজকের তালিকা একটি একাদশকে ঘিরে। যে একাদশে রয়েছেন ক্রিকেট ময়দান থেকে রাজনীতির ময়দানে পা রাখা খেলোয়াড়েরা। একটা সাদামাটা তালিকা করে দেওয়া যায়। তবে একটি একাদশ সাঁজানোতে খানিক বেগ পোহাতে হয়। কাকে রেখে কাকে বাদ দেওয়া যাবে সেই নিয়েই যত দ্বিধাদ্বন্দ। সে যাই হোক চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।

  • সানাথ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের এক সদা উজ্জ্বল নক্ষত্র সানাথ জয়াসুরিয়া। তিনি লঙ্কান দ্বীপের হয়ে প্রায় বিশ হাজারের অধিক রান করেছেন এছাড়াও দলের প্রয়োজনে বল নিয়মিত বলও করতেন তিনি। সেই সুবাদে তাঁর নামের পাশে রয়েছে ৪০০ আন্তর্জাতিক উইকেটও। ইনিংসের শুরু করার পাশাপাশি বল হাতেও ছিলেন তিনি বিধ্বংসী। যোগ্য অল রাউন্ডার।

ক্রিকেট ছেড়ে ২০১০ সালে তিনি পা রেখেছিলেন রাজনীতির মাঠে। অংশ নিয়েছিলেন সংসদ নির্বাচনে। বিজয়ী হওয়া যেন ছিলো অবধারিত। এমনকি সংসদ সদস্য থাকার পাশাপাশি দুই দফা মন্ত্রীসভার সদস্যও ছিলেন ভিন্ন দুই মেয়াদে। প্রথমবার ছিলেন ডাক বিভাগ প্রতিমন্ত্রী। দ্বিতীয় দফা দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর। বর্তমানে তিনি ক্রিকেট এবং রাজনীতি সবকিছু থেকেই দূরে রয়েছেন।

  • নভজ্যোৎ সিং সিধু (ভারত)

ভারতের নিজের সময়কার সবচেয়ে হার্ডহিটার ব্যাটার ছিলেন নভজ্যোৎ সিং সিধু। ১৯৯৯ সালে নিজের ক্যারিয়ারের ইতি টেনে নেওয়ার আগে প্রায় ৭৫০০ হাজারের বেশি রান  করেছিলেন। আজকের এই একাদশে থাকছেন তিনি ওপেনার হিসেবেই। যদিও নিজের ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময়ে তিনি কাজ খেলেছেন নম্বর তিন পজিশনে।

২০০৪ সাল বর্তমান ভারতের নেতৃত্বে থাকা দল ভারতীয় জনতা পার্টির হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন সিধু। লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০১৪ সাল অবধি রাজনীতিতে নানান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ছিলেন পাঞ্জাব সংস্কৃতি ও টুরিজম মন্ত্রীও। ২০১৪ সালে বিজেপি থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় রাজ্যসভা নির্বাচনে লড়েছেন এবং জিতেছেন সতন্ত্র্য প্রার্থী হয়ে। এরপর রাজনীতিকেও জানিয়েছেন বিদায়। হয়ত সাময়িক সময়ের জন্যে।

  • মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন (ভারত)

ভারতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়ক মোহাম্মদ আজাহারউদ্দীন ছিলেন মিডেল অর্ডার ব্যাটার। তিনি ভারতের হয়ে খেলেছিলেন ৯৯টি টেস্ট তাঁর মধ্য থেকে ৪৭টিতে ছিলেন অধিনায়ক। তাছড়া ৩৩৪টি ওয়ানডে ম্যাচেও তিনি গায়ে জড়িয়েছিলেন ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি। ফিক্সিং বিতর্কে নিষিদ্ধ হওয়া আজহারউদ্দীন পরবর্তীতে যুক্ত হয়েছিলেন রাজনীতিতে।

ভারতের এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার রাজনীতিতে যোগ দেন ২০০৯ সালে। তাঁর রাজনৈতিক দল হলো ভারতীয় ন্যাশন্যাল কংগ্রেস। ২০০৯ সালে উত্তর প্রদেশের মোরাবাদ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপরে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে হেরে যান। এখনো রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন তিনি।

  • স্যার ফ্রাঙ্ক ওরেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ক্রিকেটের ইতিহাসে সম্মানিত খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম স্যার ফ্রাঙ্ক ওরেল। ডান-হাতি ব্যাটিং ও বা-হাতি মিডিয়াম পেস বোলিং এর সংমিশ্রণে তিনি ছিলেন একজন প্রমিনেন্ট অল রাউন্ডার। ১৫০০০ হাজারের বেশি প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটের রানের পাশাপাশি তাঁর রয়েছে ৩৫০টি উইকেট।

আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ারেও তাঁর রয়েছে পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই ব্যাটিং গড়। ক্রিকেট পরবর্তী সময়ে তিনি ক্যারিবিয়ান দেশ জামাইকার সিনেটর পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁকে সিনেটর পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন আলেক্সান্ডার বুস্তামান্তে।

  • অর্জুনা রানাতুঙ্গা (শ্রীলঙ্কা): সহ-অধিনায়ক

আজকের একাদশে মিডেল অর্ডারে ব্যাটার হিসেবে থাকছেন লঙ্কান বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা। ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বেই বিশ্বকাপ জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ৯৩টি টেস্ট ও ২৬৯টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি লঙ্কানদের হয়ে। প্রায় ১৮ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ার রঙিন হয়ে রয়েছে বিভিন্ন অর্জনে।

ক্রিকেটের পাট চুকিয়ে তিনি পুরোদস্তুর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয় অর্জুনা রানাতুঙ্গা। বর্তমানে তিনি লঙ্কান পোর্ট ও শিপিং মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগে অবশ্য তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন ডেপুটি টুরিজম মিনিস্টার হিসেবে। ক্রিকেটের পর দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন রানাতুঙ্গা।

  • হাসান তিলাকারত্নে (শ্রীলঙ্কা): উইকেটরক্ষক

আজকের একাদশে উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে থাকছেন ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ী শ্রীলঙ্কান দলের অন্যতম সদস্য হাসান তিলাকারত্নে। লঙ্কারদের হয়ে ৮৩ টেস্ট ও ২০০ ওয়ানডেতে মাঠে নেমেছেন হাসান। এমনকি টেস্ট দলকেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন একটা সময়।

ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরমুহূর্ত থেকেই তিনি রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন দেশটির ইউনাইটে ন্যাশনাল পার্টির হয়ে। রাজনৈতিক জীবনের পরিক্রমায় পার্টির একটা অংশের সংগঠক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন হাসান তিলাকারত্নে।

  • ইমরান খান (পাকিস্তান): অধিনায়ক

পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ‘পোষ্টার বয়’ ইমরান খান। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৯২ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল পাকিস্তান। ইতিহাসের পাতায় সফল অধিনায়ক হিসেবে নিজের নামটি লিখে ফেলা ইমরান খানের উপর থাকছে আজকের এই একাদশের অধিনায়কের দায়িত্বভার। ৩৮ গড়ের ব্যাটিং এবং বোলিং গড় ২৩ এর নিচে রয়েছেন ইমরান খানের। সর্বকালের সেরা অল রাউন্ডারদের একজন বিবেচনা করা হয় তাঁকে।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটিয়ে তিনি হাল ধরেছিলেন পাকিস্তানের রাজনীতিতে। ক্রিকেটের মতো নেতৃত্ব দিয়েছেন তেহরিক-ই-ইনসাফ নামক রাজনৈতিক পার্টির। তাঁর প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। সেই দলের হয়ে পাকিস্তানের সংসদ নির্বাচনে জয়ী ইমরান খান বর্তমানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশকেও দিচ্ছেন নেতৃত্ব।

  • নাইমুর রহমান দুর্জয় (বাংলাদেশ)

টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশকে অভিষেক টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নাইমুর রহমান দুর্জয়। তিনি একাধারে যেমন বেশ ভাল মানে স্পিনার ছিলেন তেমনি ব্যাট করতে পারতেন যেকোন পজিশনে। এমনকি খেলোয়াড়ি জীবনে ওপেনিং অবধি করেছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারে আটটি টেস্ট ও ২৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন দুর্জয় জাতীয় দলের জার্সি গায়ে।

ক্রিকেট ছেড়ে রাজনীতিতে এসেছেন নাইমুর রহমান দুর্জয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য তিনি। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নবনিযুক্ত বোর্ড পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

  • মাশরাফি বিন মর্তুজা (বাংলাদেশ)

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের অন্যতম সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাংলাদেশের প্রথম গতিশীল বোলারের তকমা পাওয়া মাশরাফি তাঁর ক্যারিয়ারে ভুগেছেন বেশকিছু মারাত্মক ইনজুরির কারণে। বোলার মাশরাফির সেই তেজ নিস্তেজ হয়ে গেলেও বেশ ইকোনমিকাল এবং বুদ্দিদীপ্ত বোলিং দিয়ে একাদশে জায়গা করে নিতেন তিনি।

আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেট থেকে অবসর না নিয়েও ২০১৯ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনের মনোনয়ন পান তিনি এবং নড়াইল-১ আসন থেকে জয়লাভ করে বর্তমানে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন মাশরাফি।

  • কীর্তি আজাদ (ভারত)

কীর্তি আজাদ ছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী ভগত ঝা আজাদের ছেলে। তিনি ভারতের হয়ে ৭ টেস্ট এবং ২৫ ওয়ানডে খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর পদার্পণ বেশি না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ ভালো পারফর্ম ছিলো কীর্তি আজাদের।

খেলা ছাড়ার পর রাজনীতিতে আসেন কীর্তি আজাদ। তিনি দিল্লীর গোল মার্কেট আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) যোগ দেন। সেখানে যোগ দিয়ে নিজ রাজ্য বিহারের ধরভাঙ্গা অঞ্চল থেকে নির্বাচন করেন। এই আসনে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৯ সালে বিজেপি ছেড়ে যোগ দেন ভারতীয় ন্যাশন্যাল কংগ্রেসে।

  • সরফরাজ নওয়াজ (পাকিস্তান)

ভারত ও ইংল্যান্ডে বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের অন্যতম কান্ডারী মনে করা হয়ে পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার সরফরাজ নওয়াজকে। তাছাড়া রিভার্স সুইং এর প্রণেতা হিসেবেও তিনি বিবেচিত হন। ইমরান খানের সাথে জুঁটি বেঁধে তিনি ১০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে পাকিস্তানের হয়ে উইকেট নিয়েছেন ২৪০টি।

ক্রিকেট পরবর্তী জীবনে তিনি রাজনীতিকে বেছে নেন। ১৯৮৫ সালে পাকিস্তান জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হন সরফরাজ নওয়াজ। প্রায় তিন বছর সেই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর ২০১১ সালে অন্য আরেকটি পাকিস্তানি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে যোগ দিয়ে এখন অবধি তাঁদের সাথেই যুক্ত রয়েছেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...