বর্ণময় থেকে সাদাকালোয়

আমরা যারা তাকে সেই সময় দেখেছি, আমরা জানি কতটা বর্ণময় চরিত্রের ছিলেন সেটা বাইশগজে হোক কিংবা বাইশগজের বাইরে। ঠোঁটে জিঙ্ক অক্সাইড, এমন চুলের বাহার, খুনে মানসিকতা, মাঠে নামলেই আমরা তখন ভয় করতাম যে বোলারদের গিলে ফেলবেন, করতেনও।  যাই হোক আজ তিনি আমাদের মধ্যে আর নেই, কিন্তু তিনি আমাদের মননে থেকে যাবেন। সকালে খবরটা শুনে বিশ্বাস করতে পারিনি, কিন্তু বাস্তব বড়ো কঠিন।। বর্নময় থেকে সাদাকালোয় অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে দেখা খুবই কষ্টদায়ক।

‘সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া’ বলতে সেই ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত টানা তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়াকেই বুঝে থাকেন সবাই। ম্যাথু হেইডেন আর অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে সর্বকালের সেরা ওপেনিং জুটির একটা ধরা হয়ে থাকে, উইকেরক্ষক হিসেবেও হয়তো ওয়ানডের সর্বকালের সেরা গিলক্রিস্টই।

তিন নম্বর পজিশনে ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান করার কৃতিত্ব রিকি পন্টিংয়ের, মাইকেল বেভানকে সর্বকালের সেরা ফিনিশার হিসেবেই বিবেচনা করা হয়, শেন ওয়ার্ন আর গ্লেন ম্যাকগ্রা তো সর্বকালের যেকোনো ওয়ানডে একাদশেই সুযোগ পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন।

কেবলমাত্র অলরাউন্ডারের জায়গাটাতেই তাদের সর্বকালের সেরা তো দূরে থাক, সময়ের সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়টিও ছিলেন না। শেন লি, ইয়ান হার্ভি, ব্র্যান্ডন জুলিয়ান – এরকম আরো অসংখ্য খেলোয়াড়কে দিয়ে চেষ্টা করা হলেও কেউ আসলে মানের দিক থেকে সেই সময়ের ক্রিস কেয়ার্নস কিংবা জ্যাক ক্যালিস টাইপের ছিলেন না। সেই অভাবেরই কিছুটা পূরণ করেছিলেন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস।

১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তার অভিষেকও হয়। ২০০৩ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ৫৪ ম্যাচে মাত্র ২৩.৮১ গড়ে তাঁর রান ছিল মাত্র ৭৬২। এই সময়ে অবশ্য বল হাতে ৪৪টি উইকেট তিনি দখল করতে পেরেছিলেন।

এই সাধারণ ক্যারিয়ার নিয়েও অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে তিনি সুযোগ পান মূলত অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসনের ইনজুরির কারণে। কিন্তু প্রাপ্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার সাইমন্ডস দারুণভাবে করে ফেলবেন, সেটা হয়তো তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি।

সেই বিশ্বকাপের পর থেকে দলে নিজের জায়গা নিয়ে আর ভাবতে হয়নি সাইমন্ডসকে। ২০০৫ সালে ভিবি সিরিজের প্রথম ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯১ রানের ইনিংস, কিংবা ২০০৬ সালের ভিবি সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ১০ রানেই ৩ উইকেট পড়ার পর ১৫১ রানের ইনিংসগুলো প্রমাণ দেয়, সাইমন্ডস আসলে বড় আসরের খেলোয়াড়ই ছিলেন।

এছাড়া ফিল্ডার হিসেবেও খুব দক্ষ ছিলেন, ওয়ানডেতে ৮২টি ক্যাচ নেবার কৃতিত্বও রয়েছে তার। সময়ের সেরা ফিল্ডারদের একজন তাঁকে দিব্যিই বলা যায়।

অল্প কিছুদিন টেস্টও খেলেছেন। টেস্টে ২টি সেঞ্চুরিসহ ৪০.৬১ গড় খুব ভালো না হলেও লোয়ার-মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের জন্য খুব বাজে রেকর্ডও নয়। তবে এরপরও টেস্ট দলে জায়গা হারান অস্ট্রেলিয়ার স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান দিয়ে টেস্ট দল গড়ার নীতির কারণে।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পাঁচ হাজারের ওপর রান আর ১৩৩টি উইকেট তাকে কার্যকরী একজন অলরাউন্ডারের মর্যাদা দিলেও ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এক সিরিজে ২৫০ রান, ১০ উইকেট আর ১০ ক্যাচ নেবার কীর্তিই তাকে অমর করে রেখেছে।

আমরা যারা তাকে সেই সময় দেখেছি, আমরা জানি কতটা বর্ণময় চরিত্রের ছিলেন সেটা বাইশগজে হোক কিংবা বাইশগজের বাইরে। ঠোঁটে জিঙ্ক অক্সাইড, এমন চুলের বাহার, খুনে মানসিকতা, মাঠে নামলেই আমরা তখন ভয় করতাম যে বোলারদের গিলে ফেলবেন, করতেনও।  যাই হোক আজ তিনি আমাদের মধ্যে আর নেই, কিন্তু তিনি আমাদের মননে থেকে যাবেন। সকালে খবরটা শুনে বিশ্বাস করতে পারিনি, কিন্তু বাস্তব বড়ো কঠিন।। বর্নময় থেকে সাদাকালোয় অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে দেখা খুবই কষ্টদায়ক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...