ভারত ৬ – পাকিস্তান ১

আইসিসির বৈশ্বিক আসরে পাকিস্তানের কাছে ভারত বরাবরই এক ধাঁধার নাম। ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই বিশ্বকাপ জিতলেও পাকিস্তান বারবার আটকে গেছে ভারতের কাছে। অবশেষে আরব আমিরাতে গত আসরে সে গেঁড়ো কাটালেও বছর ঘুরতেই সেই পুরনো দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি।

আইসিসির বৈশ্বিক আসরে পাকিস্তানের কাছে ভারত বরাবরই এক ধাঁধার নাম। ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই বিশ্বকাপ জিতলেও পাকিস্তান বারবার আটকে গেছে ভারতের কাছে। অবশেষে আরব আমিরাতে গত আসরে সে গেঁড়ো কাটালেও বছর ঘুরতেই সেই পুরনো দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি।

টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে ব্রিসবেনে আরো একবার জয়ের দ্বারপ্রান্তে থেকেও ম্যাচ হেরে যেন নিজেদের আনপ্রেডিক্টেবল নামের স্বার্থকতা প্রমাণ করেছেন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। অন্যদিকে পাকিস্তানকে হারিয়ে যেন গত আসরের মধুর প্রতিশোধ নিলেন কোহলি-রোহিতরা। এ নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সাত ম্যাচে মাঠে নেমে ছয়টিতেই হারলো পাকিস্তান। 

ক্রিকেট মাঠে অপ্রত্যাশিত সব মুহুর্তের জন্ম দিতে ওস্তাদ পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। কখনো জেতা ম্যাচ হেরে বসেছেন, আবার কখনো হারা ম্যাচকে এনে দিয়েছেন প্রাণ। পাকিস্তানকে তাই বলা হয় আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান।

আরও একবার যেন জেতা ম্যাচটা ছেড়ে আসলেন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা, বলা চলে তাঁদের ম্যাচ হারতে বাধ্য করলেন বিরাট কোহলি। পাকিস্তানি বোলারদের সামনে বাকি ব্যাটসম্যানরা যেখানে দাঁড়াতেই পারেননি, সেখান ৮৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন তিনি। মহাগুরুত্বপূর্ণ শেষ ওভার করতে এসে নো বল করেছেন মোহাম্মদ নওয়াজ, কার্যত সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে পাকিস্তান। অথচ স্পিনারদের সাধারণত নো বল করতে দেখা যায় না, অপ্রত্যাশিত সেই ঘটনার জন্ম দিয়েই হারলো পাকিস্তান। 

ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামলেই যেন কোনো এক অজানা চাপ ভর করে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের উপর। নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা তাঁরা খেলতে পারেন না কখনোই। ২০০৭ বিশ্বকাপের কথাই ধরুন না, ভারতের তিন অনিয়মিত বোলারই যেখানে বল স্ট্যাম্পে লাগাতে পেরেছিলেন, সেখানে পাকিস্তানের মূল তিন বোলারের একজনও বল রাখতে পারেননি তিন কাঠিতে। ফাইনালে মিসবাহ জন্ম দিলেন আরো এক বিস্ময়ের, নিশ্চিত হারা ম্যাচটা জিতিয়ে যখনই নায়ক হবার দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন, ঠিক তখনি পাগলাটে এক স্কুপ খেলে সবকিছু ভণ্ডুল করে দিয়েছেন। বনে গেছেন খলনায়ক, দীর্ঘায়িত হয়েছে পাকিস্তানের প্রতীক্ষা। 

এরপরের বিশ্বকাপগুলোতেও একই দৃশ্য, চিরপ্রতিদ্বন্দীদের বিপক্ষে মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে প্রতিবার। কখনো নিজেদের ব্যর্থতা আবার কখনো অতিমানবীয় হয়ে উঠেছেন কোহলি-বুমরাহরা। অবশেষে সেই দৃশ্য বদলেছে গত বিশ্বকাপে এসে, টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের কাছে টানা পাঁচ হারের পর প্রথম জয় পেয়েছিল পাকিস্তান।

প্রথমে বল হাতে শাহীন আফ্রিদির ঝলক, পরে রান তাড়া করতে নেমে ব্যাট হাতে ছড়ি ঘুরিয়েছিলেন বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান। তাঁদের দশ উইকেটের বিশাল জয়ের পর সবাই ভেবেছিল এবার বোধহয় বদলাতে যাচ্ছে দৃশ্য। তরুণদের হাত ধরেই সুদিন ফেরাবে পাকিস্তান, কমে যাবে ভারতের বিপক্ষে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই পুর্বসূরীদের পথেই হাঁটলেন বাবর-শাহীনরা।

এদিন শুরুতেই বাবর-রিজওয়ান আউট হলেও দলকে ভালো সংগ্রহের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিলেন ইফতেখার আহমেদ এবং শান মাসুদ। কিন্তু ইফতেখারের আউটের পরই ভাঙ্গন শুরু হয় পাকিস্তানের মিডল অর্ডারে, নায়ক হবার নেশায় বড় শট খেলতে গিয়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন হায়দার আলি, শাদাব খানরা। তবে একপ্রান্ত আগলে খেলা শান মাসুদের ফিফটিতে ভর করে ১৬০ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁড়ে দিতে পারে পাকিস্তান।

বল হাতে শুরুতেই ভারতের টপ অর্ডারকে ফেরালেও একপ্রান্ত আগলে রাখেন বিরাট কোহলি। শেষ পর্যন্ত দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন বিশ্বসেরা এই ব্যাটার। অথচ একপর্যায়ে ১৮ বলে ৪৮ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের, অন্য যেকোনো দলের বিপক্ষে এই পরিস্থিতিতে ম্যাচ বের করে নিতে পারতেন পাক বোলাররা। কিন্তু এদিন পারলেন না, কারণ প্রতিপক্ষের নামটা যে ভারত। এই দলের বিপক্ষে খেলতে নামলেই সবকিছু উল্টেপাল্টে যায় পাকিস্তানের। এদিনও হলো তাই, বোলাররা খুঁজে পেলেন না সঠিক লাইন লেংথ, অন্যদিকে বিরাটও ছিলেন অতিমানবীয় ফর্মে। সবমিলিয়ে আরো একবার হারই সঙ্গী হলো পাকিস্তানের।

তবে এই হারের প্রতিশোধ এবারের বিশ্বকাপেই নেবার সুযোগ আছে পাকিস্তানের। যদিও পথটা বেশ কঠিনই, কারণ ফাইনালের আগে এই দুই দলের দেখা হবার সম্ভাবনা নেই আর। তবে দলটা পাকিস্তান বলেই হয়তো প্রথম ম্যাচ হারার পরেও ফাইনালের ভরসা রাখা যায়, এমনিতেই তো ক্রিকেটপ্রেমীরা ডাকেন না আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...