ক্রিকেটে ভারতের ইতিহাসটা বেশ পুরনো। ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জিতে কপিল দেব, সুনীল গাভাস্কাররা বদলে দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের গতিপথ। ক্রমেই এগিয়ে যাওয়া ভারত এরপর আর পেছনে ফিরে তাকায়নি। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপাও জিতেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। বিসিসিআই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং ক্ষমতাধর ক্রিকেট বোর্ড।
ব্যাটিংটা ভারতের বরাবরই বিশ্বসেরা। সত্তর-আশির দশকে ক্যারিবিয়ান পেসারদের স্বর্ণালি দিনেও উইলো হাতে শাসন করেছেন সুনীল গাভাস্কার। এরপর শচীন টেন্ডুলকার তো নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন ঈশ্বরের আসনে, সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করেছেন এই ব্যাটার। তাঁর পথ ধরেই উঠে এসেছেন আজকের বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা। ওডিয়াইতে তিন ডাবল সেঞ্চুরি করা রোহিত গত দশকের সেরা ওপেনার। অন্যদিকে, কোহলিকে ভাবা হয় শচীনের যোগ্য উত্তরসূরি, এক সময় তো মনে হতো শচীনের একশো সেঞ্চুরির রেকর্ডও টিকবে না কোহলির সামনে। কে সেরা এত বিতর্কে আজো দুভাগ হয়ে যায় গোটা ক্রিকেট বিশ্ব।
১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় অলরাউন্ডার কপিল দেবকেও করা হয়েছিল একই প্রশ্নটা। খেলোয়াড়ি জীবনের ন্যায় আলাপচারিতার এই ইয়র্কারকেও সুনিপুণ দক্ষতায় সামলেছেন কপিল। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল শচীন এবং কোহলির মাঝে যেকোনো একজনকে বেছে নিতে বললে কাকে নেবেন তিনি।
কপিল বলেন, ‘এমন সামর্থ্যের ব্যাটারদের মাঝে আপনি একজন কিংবা দুজনকে আলাদা করতে পারবেন না। ক্রিকেট এগারো জনের খেলা। আমার নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু প্রতি প্রজন্মই ক্রমশই আগের চাইতে নিজেদের উন্নতি করছে। আমাদের সময়ে সুনীল গাভাস্কার ছিলেন। এরপরের প্রজন্ম রাহুল দ্রাবিড়, শচীন টেন্ডুলকার, বীরেন্দর শেবাগরা তো দীর্ঘদিন খেলে গেছে। বর্তমান প্রজন্মে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা আরো উন্নত হয়েছে। ভবিষ্যতে যত সময় গড়াবে, ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স তত উন্নত হবে।’
কপিলের মতে, প্রতি প্রজন্মের একজন করে মহাতারকা থাকবে। সুনীল, শচীন, কোহলির পর হয়তো অন্য কেউ এসে ভবিষ্যতের হাল ধরবে। সময়ের এই খেলায় কেউ হারিয়ে যাবে, আবার কেউ ক্ষুদ্র থেকেই ধীরে ধীরে মহীরুহ হয়ে উঠবে।
কোহলির ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই শচীন বনাম কোহলি এই তুলনা বিতর্কের খোরাক জুগিয়েছে বিশ্বজুড়ে থাকা ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে। এক সময়ে তো সবাই ধরেই নিয়েছিল শচীনের সব রেকর্ড নিজের করে নেবেন কোহলি। কিন্তু ২০১৯ থেকে ২০২২ এই তিন বছর খানিকটা অফ ফর্মে ছিলেন কোহলি। ফলে স্তিমিত হয়ে পড়েছিল তাঁদের মধ্যকার এই তুলনা।
কিন্তু ২০২৩ শুরু হতেই যেন পুরনো রূপে কোহলি। ওডিয়াইতে নিজের সর্বশেষ ছয় ইনিংসেই পেয়েছেন তিন সেঞ্চুরির দেখা। ফলে এই ফরম্যাটে ৪৬ সেঞ্চুরি নিয়ে শচীনের চাইতে মোটে তিন সেঞ্চুরি পেছনে আছেন তিনি। এছাড়া ১২,৭৭৩ রান নিয়ে ঢুকে পড়েছেন ওডিয়াইতে রান সংগ্রহকারীদের তালিকার সেরা পাঁচে। তবে বাকিদের চাইতে অনন্য কোহলি, তাঁর চাইতে বেশি গড় আর স্ট্রাইকরেটে রান তুলতে পারেননি বাকিদের কেউই।
গেল নভেম্বরেই জীবনের ৩৪ বসন্তে পা দেয়া কোহলি বড় ইনজুরিতে না পড়লে খেলবেন আরো বছর তিনেক। ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে সাদা বলের ক্রিকেটে কে সেরা এই বিতর্ক বাড়বে বৈকি কমবে না।