দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সাকিব আল হাসান যখন ক্রিজে এসে তামিম ইকবালের সাথে ছোট করে মুষ্টিবদ্ধ হাত মেলালেন, তখন যেন গোটা স্টেডিয়াম প্রাণ ফিরে পেল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দল বিপদে থাকলেও সাকিব – তামিম জুটির প্রতি দর্শকদের আগ্রহের কোনো কমতি ছিল না।
এই নিয়ে ৭২ বারের মত একত্রে ব্যাট করেছেন দু’জনে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে বিস্ফোরক সেই মন্তব্য করার পর এবারের প্রথম একত্রে জুটি গড়েছেন এই তাঁরা।
সেই কারণেই কিনা দ্বিতীয় ওয়ানডে শুরুর আগে সবার নজর ছিল এই দুজনের উপর। ফিল্ডিং কিংবা বোলিংয়ের সময় যখনই দুজনে কাছাকাছি এসে কথা বলেছেন, স্টেডিয়াম তখন ফিরে পেয়েছেন প্রাণ। কিছু কিছু মুহূর্ত নিয়ে তো ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা হাস্যরসাত্নক মন্তব্য করছেন সমর্থকরা।
গত সপ্তাহেই বিসিবি সভাপতি সাকিব এবং তামিমের সম্পর্ক নিয়ে রীতিমত বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। দাবি করেন বছরের পর বছর একই দলে খেললেও এই দুজনের মাঝে কথা বলা বন্ধ। তিনি জানান বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ মোটেও ভালো অবস্থায় নেই।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের তথ্যগুলো সাধারণত ড্রেসিংরুমের বাইরে আসে না। তবে এতদিন যাবত এই ঘটনা ছিল সবার লোকচক্ষুর আড়ালে। কেউ কেউ দাবি করেন সাকিব এবং তামিম কখনোই ভালো বন্ধু ছিলেন না, সবই সংবাদমাধ্যমের কাটতি বাড়ানোর কৌশল। তবে তাঁরা একত্রে খুব বেশি সময় কাটালেও একটা সময় ছিল যখন তাঁরা একে অন্যের ভালো বন্ধু ছিলেন। ২০১০ থেকে ২০১২, এই সময়টাতে সাকিবের লেখা কলামেই তাঁর প্রমাণ মেলে।
তামিম অবশ্য তাঁর সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা বিরত থাকেন। এরপরই নাজমুল হাসান পাপনের কথার স্বরেও পরিবর্তন আসে, তিনি দাবি করেন কেবলমাত্র মিডিয়া থেকেই তিনি এ ব্যাপারে শুনেছেন। অথচ এই ঘটনা সামনে আনার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে কোনো আলোচনা ছিল না।
তিনি বলেন, ‘আমি তিন বছর আগেও জাতীয় দলে এত সমস্যা দেখিনি। আগে আমি জাতীয় দলের সঙ্গেই থাকতাম। আমি দলের বাইরে থাকলেও ড্রেসিংরুমের পরিবেশের বাজে অবস্থার ব্যাপারে জানতে পেরেছি। এর বেশিরভাগ জেনেছি মিডিয়ার লোকজনের কাছে থেকে। গত অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের সময়েও সব ঠিকঠাক ছিল। এমন কি তামিমও আমাকে জানিয়েছে মাঠের খেলাতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। আমিও আমার সাক্ষাৎকারে সেটাই বলেছি।’
তাঁর মতে, দলের মাঝের এই সমস্যা মেটাতেই তিনি ঘটনাটা সবার সামনে এনেছেন। তিনি এই ঝামেলা মিটিয়ে সবার মনোযোগ ক্রিকেটে ফিরিয়ে আনতে চান। তিনি বলেন, ‘মিডিয়ার সবাই এই ব্যাপারে জানে। অনেকেই আমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছে। আমি চাইনি এই ধরনের কথাবার্তা বাইরে চলুক। এটা সবাইকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে, এমন কি ক্রিকেটারদেরও।’
তিনি আরো জানান, আমি জানতে পেরেছিলাম ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ভালো নেই। আমি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়ও কোনো সমস্যা পাইনি। তবে কিছু একটা অবশ্যই ঘটেছে। তাঁদের মধ্যে কিছু একটা ঘটেছে যার ফলে কিনা ড্রেসিংরুমে সবাই অস্বস্তিবোধ করে। দলের বাকি ক্রিকেটাররা নিজেদের মাঝে কথা বলতে সংকোচবোধ করে। অনেকেই মনে করে যদি আমি সাকিব ভাইয়ের সাথে কথা বলি, তাহলে বাকিরা ভেবে নিবে আমি তাঁর দলে। একই কথা খাটে তামিমের বেলাতেও।’
তবে সবচেয়ে জরুরি হল সাকিব এবং তামিম দুজনেই নিশ্চিত করেছেন তাঁদের এই সম্পর্কের প্রভাব মাঠের খেলাতে কখনোই পড়বে না। এমনকি বিসিবি সভাপতিও বলেন, ‘আমি জানি না তাঁদের সমস্যাটা কোথায়। আমি কখনোই তাঁদের জিজ্ঞেস করিনি। তাঁরা আমাকে জানিয়েছে মাঠের খেলাতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। তাঁরা একসাথে অনেকদিন যাবত খেলছে। তামিম ভারতের বিপক্ষে সিরিজ মিস করেছে, টি-টোয়েন্টি দলে নেই। আমার মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে। তাঁরা দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক এবং পেশাদার। তাঁরা দলের ক্ষতি করবে না।’
জানা যায় প্রথম এবং ওয়ানডের মাঝে কেবলমাত্র সাকিবের অনুরোধে দলের সাথে দেখা করতে টিম হোটেলে যান বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমি একটা কারণেই এখানে এসেছি। আমি প্রথমবার আসার সময় সাকিবের সাথে দেখা করতে পারিনি। তাই আজকে সাকিবের অনুরোধে আবার এসেছি। সবাইকে দেখতে এবং সাহস জোগাতে এসেছি। সাকিবের সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে। আমি আসব শুনে সে আমাকে ফোন করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘সে আমাকে বলেছিল রাত নয়টার পরে আসলে সুবিধা হয়। কিন্তু আমি তাঁকে বলি আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই, আমি কেবল তোমাদের সাহস জোগাতেই আসব। পরে দরকার হলে তোমার সাথে রাতে ফোনে কথা বলবো।’
সাকিব এবং তামিম অবশ্য দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে বাঁচাতে পারেননি। তাঁরা দুজনে চতুর্থ উইকেটে ৭৯ রান যোগ করলেও ৩২৭ রান তাড়া করতে হলে তাঁদেরকে আরো বেশি সময় ক্রিজে থাকতে হতো। কিন্তু তাঁরা সেটা পারেননি, অসহায় আত্নসমর্পনে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। গত সাত বছরে ঘরের মাঠে এটাই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ হার।